|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা |
যান-যন্ত্রণা |
দুর্গম সংস্কৃতি
কাজল গুপ্ত |
সংস্কৃতিচর্চাকে নন্দন-অ্যাকাডেমি চত্বরের বাইরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বহু দিন আগে। সে অনুযায়ী বিভিন্ন পুর এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছিল বিভিন্ন ছোট-বড় প্রেক্ষাগৃহ। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে পরিকাঠামোর অভাবে। মূলত দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যই সল্টলেকের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ টিমটিম করে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে নানা মহলে।
শুরুর দিকে সল্টলেকে একটি প্রেক্ষাগৃহই ছিল। পরে বাসিন্দা থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির দাবি মেনে একাধিক সরকারি প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু যানবাহনের সমস্যায় এখন সল্টলেকের বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফাঁকাই থাকে বলে অভিযোগ। পরিবহণের সমস্যা সল্টলেকের জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছে। |
|
গত এক দশকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং পাঁচ নম্বর সেক্টরের দৌলতে বর্তমানে রোজ লক্ষাধিক মানুষ বাইরে থেকে সল্টলেকে যাতায়াত করেন। বাসের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু অফিসের সময়টুকু পার হলে অবস্থা সেই তিমিরে চলে যায়। ফলে সমস্যায় পড়েন বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে আসে দর্শক-শ্রোতারা। কারণ, স্বাভাবিক ভাবেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি অফিসটাইমের পরেই শুরু হয়।
যত রাত বাড়ে বাসের সংখ্যা তত কমে বলেই পথচারী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। উপরন্তু সল্টলেক থেকে রিকশা, অটো ও ট্যাক্সিচালকেরাও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন বলে অভিযোগ। বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহের দর্শক-শ্রোতাদের প্রায়শ এই সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ।
যেমন, রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন। সিটি সেন্টারের কাছে এই প্রেক্ষাগৃহ। বাস বলতে হাতে গোনা কয়েকটি রুট। তাও রাতের বেলায় দেখা মেলা ভার। যানবাহন বলতে নিজস্ব গাড়ি কিংবা অটো। |
রবীন্দ্র নিকেতন |
লবণ হ্রদ মঞ্চ |
|
সল্টলেকের সবচেয়ে পুরনো প্রেক্ষাগৃহ লবণ হ্রদ মঞ্চ (বিডি মঞ্চ)। এই প্রেক্ষাগৃহ এখন শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। বিডি স্টপ থেকে বেলেঘাটা, ফুলবাগান দূর অস্ত্, সল্টলেকেরই তিন নম্বর সেক্টরে যেতে গেলে অটো, বাস বদল করতে হয়। সল্টলেকের আইবি ব্লকে রয়েছে ভারত সরকারের পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র (ইজেডসিসি)। পাশেই শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, রেস্তোরাঁ ছাড়াও দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। বাসিন্দাদের আশা ছিল, নন্দন কমপ্লেক্সের ধাঁচে ইজেডসিসি-ও সল্টলেকের সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠবে। অথচ এখানে নানা অনুষ্ঠান, মেলার আয়োজন হয়। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ছবিও দেখানো হয়।
এ ছাড়াও সল্টলেকে আরও কয়েকটি ছোটবড় সরকারি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। সেখানেও সমস্যা এক। বাংলা আকাদেমির প্রশাসনিক অধিকর্তা শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনের চাহিদা বেড়েছে। যদিও অভিযোগ, সল্টলেকের বাসিন্দারা প্রেক্ষাগৃহে গেলেও বঞ্চিত হচ্ছেন পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার মানুষ। |
রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন |
ইজেডসিসি |
|
দর্শকরা জানান, পরিবহণের সমস্যার জন্য অনুষ্ঠানের মাঝেই বেরিয়ে পড়তে হয়। বাসিন্দাদের একটি সংগঠন সল্টলেক (বিধাননগর) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘এটি অনেক দিনের সমস্যা। আজও সমাধান হল না। নিজের গাড়ি না থাকলে স্থানীয় বাসিন্দারাই সমস্যায় পড়েন। আশা করি প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’’
যদিও বাস মালিকদের একাংশের দাবি, সল্টলেকে অনেক রাত পর্যন্ত বাস চলে। নতুন বাস চালু করলেও তা লাভজনক হবে না। সমস্যার কথা স্বীকার করে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ অশেষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন রুট হলেও বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। এ বিষয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’’
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘শুধু প্রেক্ষাগৃহের জন্য নয়, সামগ্রিক ভাবে সল্টলেকে বাস পরিষেবা নিয়ে চাহিদা বাড়ছে। তুলনায় যোগান কম। আগের থেকে অনেক রুট হলেও সল্টলেকের সর্বত্র তা ছুঁয়ে যাচ্ছে না। পুরপ্রশাসনও প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনা করব।” |
ছবি: শৌভিক দে |
|
|
|
|
|