স্পেন বনাম ব্রাজিলের রবিবাসরীয় মহাযুদ্ধ নিয়ে আগাম একটু পড়াশোনা করতে গিয়ে অদ্ভুত একটা ব্যাপার চোখে পড়ল। দেখলাম, নেইমার খেলতে নামছে এমন একটা দেশের বিরুদ্ধে যার ন-ন’জন কিনা ওর ক্লাব সতীর্থ! পিকে, আলবা, জাভি, ইনিয়েস্তা কে নেই! ওরা সবাই বার্সেলোনার। হয়তো পরের সপ্তাহেই যে জার্সি পরে কিনা নেইমারও ক্লাব প্র্যাক্টিসে নেমে পড়বে!
অনেকেই নিশ্চয়ই ধরে রেখেছেন, কনফেড ফাইনালে স্কিলের যুদ্ধ জমবে ভাল। এক দিকে নেইমার-অস্কার। অন্য দিকে, তোরেস-ভিয়া। ইন্টারনেট থেকে শুরু করে পাড়ার চায়ের দোকান— সব আলোচনায় দেখছি ব্রাজিল বনাম স্পেনকে ‘দ্য ম্যাচ’ ধরা হচ্ছে। এ সবের মাঝে যদি স্বয়ং নেইমারকে নিয়েই এমন একটা কিম্ভুতকিমাকার তথ্য আবিষ্কার হয়, মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ছেলেটা নিজের খেলাটা খেলতে পারবে তো? নতুন ক্লাবের সতীর্থদের দেখে গুটিয়ে যাবে না তো?
নিশ্চিন্ত থাকুন, স্কিলের যুদ্ধ যেমন জমার কথা, তেমনই জমবে। শুধু তাই নয়। যতটুকু ফুটবল বুঝি তাতে মনে হচ্ছে, টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচটা রবিবারই হয়তো খেলবে নেইমার!
কেন, কী ভাবে, যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে ফুটবলারদের মনঃস্তত্বটা একটু বোঝা দরকার। ওকে এত টাকা নিয়ে বার্সেলোনা নিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তো নেইমার চাইবে, আমি স্পেনের বিরুদ্ধেই দেখাব আমাকে ওদের দেশের সেরা ক্লাবের নেওয়াটা মোটেও ভুল হয়নি। ফুটবলবিশ্বে হালফিলে নেইমার ছাড়া আলোচনার কোনও বস্তু দেখছি না। প্রশ্নটা খুব সহজ— নেইমার বার্সেলোনাতে মানিয়ে নিতে পারবে কি না? আমি নিশ্চিত, ও রবিবারই বুঝিয়ে দিতে চাইবে বার্সায় মানিয়ে নেওয়া শুধু নয়, মেসি-র পাশে সমানে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতাও ওর আছে। নেইমারের জায়গায় আমি থাকলেও এ রকমই ভাবতাম। আর নেইমার তো চ্যাম্পিয়ন ফুটবলার। ‘চোক’ করবে বলে তাই মনে হয় না। |
ব্রাজিলে চেনা পৃথিবীতে। ছবি: রয়টার্স |
আরও একটা ব্যাপার আছে। আমরা রোনাল্ডো বা মেসি-কে নিয়ে এত কথা বলি। কিন্তু আজও কি ওরা দেশের জার্সিতে ও রকমই ভয়ঙ্কর, ও রকমই বন্দিত, যতটা ওরা ক্লাব জার্সিতে? সে দিক থেকে কিন্তু নেইমার কনফেড কাপে বুঝিয়ে দিয়েছে, বার্সেলোনায় কী হবে সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু দেশের জার্সিতে ওকে আটকানো যাবে না। আমার মনে হয়, ও বার্সেলোনায় যাওয়ার আগে লোককে বলতে দেবে না দেখো, ছেলেটা স্পেনের ক্লাবে চলে যাচ্ছে বলে স্পেনের বিরুদ্ধে সেরাটা বার করল না। টেকনিক্যালি স্পেন ডিফেন্সের সঙ্গে মহড়ায় নেইমারের না জেতার কারণ নেই। শরীরী যুদ্ধে ও এখনও সড়গড় নয়। কিন্তু স্কিলে, শু্যটিংয়ে অপ্রতিরোধ্য। ইতালির কাতানেচিও ডিফেন্সই পারেনি। স্পেনের রক্ষণ তুলনায় সহজ পরীক্ষা।
তাই মন বলছে, রবিবার অন্য নেইমারকে দেখব। দেখব আরও ভয়ঙ্কর, দ্বিগুণ তেতে থাকা এক ফুটবলারকে। মন আরও একটা কথা বলছে। রবিবার অন্য স্পেনকেও দেখব। সর্বকালের সেরা হওয়ার দৌড়ে থাকা ক্ষুধার্ত একটা টিমকে!
সর্বোচ্চ পর্যায়ের দেশজ ফুটবলের যা যা ট্রফি হয়, সবই তুলে নিয়ে গিয়েছে স্পেন। বিশ্বকাপ। পরপর দু’বার ইউরো। শুধু কনফেডারেশনস্ কাপটা ছাড়া। কোনও সন্দেহ নেই, রবিবার স্পেন যদি ওই ট্রফিটাও জিতে যায়, ভিনসেন্ত দেল বস্কির দলকেই সর্বকালের সেরা টিম বলতে হবে নিঃসন্দেহে। খিদেটা কত মরিয়া হবে, দেল বস্কির স্ট্র্যাটেজি কতটা নির্মম হবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন?
দেল বস্কির প্লাস পয়েন্ট হল, উনি পরিস্থিতি অনুযায়ী যে ভাবে স্ট্র্যাটেজি পাল্টাতে থাকেন, সেটা স্কোলারির মতো অভিজ্ঞ কোচও পারেন না। তা ছাড়া দেল বস্কির স্পেনে স্কিলের ফুটবল থেকে শুরু করে পাসিং ফুটবল সবই আছে। ভাবতে পারেন, গত ইউরো কাপ ভদ্রলোক টিমে একজনও নিয়মিত স্ট্রাইকার ছাড়া জিতে বেরিয়ে গেলেন! এ বার সেখানে খাঁটি স্ট্রাইকার তোরেস আছে। আরও একটা জিনিস দেল বস্কির টিমকে নিশ্চয়ই তাতাবে। উনি সব ট্রফি জিতেছেন। কিন্তু কোথাও ব্রাজিলকে খেলতে হয়নি। অর্থাৎ, চিরশ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা এখনও বাকি। আর ১৯৩৪ বিশ্বকাপের পর ৭৯ বছরে ব্রাজিলকে হারাতেও পারেনি স্পেন! যদি শুধু ‘হেড টু হেড’ জিজ্ঞেস করেন, বলব ফাইনালে ব্রাজিল এগিয়ে। কিন্তু যদি স্ট্র্যাটেজি, টিমের গুণগত মান সব কিছু নিয়ে বিচারে আসেন, বলব স্পেন। যা-ই হোক, আমার কাছে একটু হলেও স্পেন এগিয়ে। ৫৫-৪৫।
যদি না নেইমার বা মারাকানা কিছু ঘটিয়ে বসে! অবাক হবেন না। নেইমারের স্কিলের মতো মারাকানার চিৎকারও কিছু কম নয়! |