|
|
|
|
রক্ষীর নজর এড়িয়ে জেলে মাদক পাচার
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ওয়াচ টাওয়ারে নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা। তা রয়েওছে। কিন্তু, সেই রক্ষীর নজর এড়িয়েই জেলের মধ্যে ঢুকছে মাদকদ্রব্য। শুক্রবার দুপুরে যা হাতেনাতে ধরা পড়ল। জেল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ। জেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে একটি মোটর বাইকের নম্বর দিয়েছে। যে বাইকে করে এসে সীমানা প্রাচীরের সামনে থেকে জেলের মধ্যে মাদকদ্রব্যের প্যাকেট ছোঁড়া হয়েছে। বাইকটি কার, আগে তাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
জেল সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুর ২টো ৫০ নাগাদ ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন সৌমিত্র মণ্ডল নামে এক ওয়ার্ডার। তিনি ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের অদূরেই রয়েছে ট্রেনিং সেন্টার। মাঝে পিচ রাস্তা। বাড়ি ফেরার পথে সৌমিত্রবাবু দেখেন, জেলের সীমানা প্রাচীরের পাশে তিন জন যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছেন। পাশে একটি মোটর বাইক। যুবকদেরই একজন জেলের মধ্যে দু’টি প্যাকেট ছুঁড়ছেন। ওই যুবকেরা ওয়ার্ডারকে দেখামাত্র দ্রুত বাইক নিয়ে এলাকা ছাড়েন। এরপর বাড়ি না-গিয়ে জেলে আসেন সৌমিত্রবাবু। আধিকারিকদের বিষয়টি জানান। সব শুনে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের চিফ ডিসিপ্লিন অফিসার অসীম আচার্য, চিফ হেড ওয়ার্ডার কেদারনাথ সিংহ, হেড ওয়ার্ডার অশ্বিনী মাহাতো জেল চত্বরে তল্লাশি চালান। সীমানা প্রাচীরের কিছু দূর থেকে একটি প্যাকেট উদ্ধার হয়। যেখানে ৬টি নেশার ওষুধ এবং ১০০ গ্রাম গাঁজা রয়েছে বলে জেল সূত্রে খবর। আরেকটি প্যাকেটের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। অনুমান, ওই প্যাকেটটি কোনও বন্দিই নিয়ে গিয়েছেন।
জেলের চারপাশে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। যেখানে সব সময়ই রক্ষী থাকে। শুক্রবার যেখানে এই ঘটনাটি ঘটে, তার অদূরে ২ নম্বর ওয়াচ টাওয়ার। জেলেরই এক সূত্রে খবর, ওই টাওয়ারে তখন ছিলেন আনসারি রহমান নামে পুলিশের এক কনস্টেবল। তবে তিনি টাওয়ারের মধ্যে খালি গায়ে ঘুমোচ্ছিলেন। ফলে, তাঁর পক্ষে বিষয়টি নজর করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় ওই রক্ষী কী করছিলেন, তা দেখা হচ্ছে। কর্তব্যে গাফিলতির প্রমাণ মিললে ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।
অবশ্য আগেও জেলের মধ্যে মাদক পাওয়া গিয়েছে। কখনও বন্দির সঙ্গে দেখা করতে আসা আত্মীয়ের কাছ থেকে মাদক মিলেছে। কখনও আদালত ফেরত বন্দির কাছ থেকে মাদক দ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। কখনও বা তল্লাশির সময় জেলের মধ্যে থেকেই মাদক মিলেছে। গত মার্চে জেলের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে ৫ প্যাকেট মাদক দ্রব্য উদ্ধার হয়। এক বন্দিকে মাদক পাচারের সময় হাতেনাতে তাঁর এক পরিচিতকেও ধরা হয়। ওই ব্যক্তি বন্দির সঙ্গে দেখা করতে জেলে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিস্কুট প্যাকেট ছিল। সেই প্যাকেটের মধ্যে ৪১ প্যাকেট মাদক দ্রব্য ছিল।
এপ্রিলে আবার জেল ফেরত এক বন্দির কাছ ১৮ প্যাকেট মাদক উদ্ধার হয়। যহাজিরার দিনে ওই বন্দিকে মেদিনীপুর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আরও বেশ কয়েকজন বন্দির সঙ্গে প্রিজন ভ্যানে করে তাঁকে মেদিনীপুর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে আদালত থেকে জেলে ফেরার সময় যখন তল্লাশি চলে। সেই সময়ই তাঁর কাছ থেকে মাদক দ্রব্য উদ্ধার হয়। বিড়ির প্যাকেটে ওই মাদক দ্রব্য রাখা ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, জেলের মধ্যে মাদক পাচারের ক্ষেত্রে কিছু দুষ্টচক্র জড়িত। ওই তিন জন যুবকও কোনও একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তদন্তে নেমে তাদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|