|
|
|
|
প্রচার দূর অস্ত |
লালদুর্গেও গোপন কর্মিসভা সিপিএমের
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
গ্রাম ঘুরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার দূর অস্ত্। একদা ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশে দলের কর্মীদের নিয়ে সভাই করতে হচ্ছে গোপনে। এক এলাকার সভা অন্য এলাকায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে জেলায় এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন-তিনটি সভা করেছেন তিনি। সিপিএমের অবশ্য এমন কোনও সভা করার পরিকল্পনা নেই। বরং বাড়ি-বাড়ি প্রচারের উপরই জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলের অন্দরে। দলীয় প্রার্থীদের এলাকায় ‘মাটি কামড়ে’ পড়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, সেখানেও বিপত্তি। দলেরই এক সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরের অন্তত ৪৫ জন দলীয় প্রার্থী ঘরছাড়া। তাঁরা এলাকায় ফিরতে পারছেন না। অন্য দিকে, অন্তত ১২০ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। অর্থাৎ, এলাকায় থাকলেও প্রচারে বেরোনোর সুযোগ নেই। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে দলীয় প্রার্থীদের।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের জবাব, “সর্বত্র কী চলছে, তা সকলেই দেখছেন। আমাদের বহু কর্মী-সমর্থককে মনোনয়ন দাখিল করতে দেওয়া হয়নি। যাঁরা দাখিল করেছিলেন, তাঁদের একাংশকেও জোর করে প্রত্যাহার করানো হয়েছে। যাবতীয় প্রতিকূলতার মধ্যেও ধীরে ধীরে আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। এই সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষেরও মোহভঙ্গ হচ্ছে।” তাহলে দলের কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনের সভাও গোপনে কেন? দীপকবাবুর মন্তব্য, “দলের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলব না।” সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্যের কথায়, “এটা দলের একটা কৌশল। কর্মীদের কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত। এলাকায় সভা হলেও হামলা হতে পারে। গোপনে সভা হলে তেমন আশঙ্কা নেই।” তাঁর বক্তব্য, “সময় যত গড়াচ্ছে, পরিস্থিতি তত বদলাচ্ছে। তবে প্রতিকূলতা একেবারে কাটেনি। আরও সময় লাগবে। বড় সভা হলে সেখানে কয়েক হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থক আসবেন। আর পরে তাঁদের বাড়িতে হামলা হবে। তাই বাড়ি বাড়ি প্রচারের উপরই জোর দেওয়া হয়েছে।”
সিপিএমের অভিযোগ অবশ্য মানছে না তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতির মন্তব্য, “সেই কুৎসা? মানুষ ওদের থেকে দূরে সরে গিয়েছে। তাই বেশ কিছু এলাকায় ওরা মিছিল করার লোক খুঁজে পাচ্ছে না। মিথ্যে অভিযোগ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। মানুষ কী এত সহজে সেই সব অত্যাচারের দিন ভুলে যাবে?” কী ভাবে গোপনে সভা করছে সিপিএম? দলীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্লকে এমন সভা হয়েছে। যেমন, গত সোমবার ডেবরা এলাকায় একটি সভা হয়। যেখানে পিংলা এলাকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপকবাবুও। বুধবার চন্দ্রকোনা রোডে (গড়বেতা-৩) একটি সভা হয়। যেখানে গড়বেতা (গড়বেতা-১) এলাকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সূত্র জানাচ্ছে, চন্দ্রকোনা ২-এর জেলা পরিষদ প্রার্থী নির্মল মুখোপাধ্যায় ঘরছাড়া। এলাকায় ফিরতে পারছেন না। এই এলাকার জেলা পরিষদের ১ জন প্রার্থী,পঞ্চায়েত সমিতির ২ জন প্রার্থী এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। অর্থাৎ, এলাকায় থাকলেও প্রচার করতে পারছেন না। মেদিনীপুর সদরে জেলা পরিষদের ১ জন প্রার্থী, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ জন প্রার্থী, গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। ঘাটালে পঞ্চায়েত সমিতির ১০ জন প্রার্থী এবংগ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। এঁদের মধ্যে রয়েছেন টুম্পা সাঁতরা, শেখ জালালউদ্দিন। টুম্পা সুলতানপুর থেকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছেন। জালালউদ্দিন অজবনগর-১ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী হয়েছেন। কেশপুর এবং গড়বেতার প্রার্থীরাও ঘরছাড়া। কেউ এলাকায় নেই। শালবনিতে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ জন প্রার্থী ঘরছাড়া। ৭ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। দাসপুর-১ এ পঞ্চায়েতের ত্রিস্তর মিলিয়ে ৬ জন প্রার্থী ঘরছাড়া। ২২ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। মোহনপুরে ১ জন ঘরছাড়া। ২৯ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। পিংলায় জেলা পরিষদের ১ জন, পঞ্চায়েত সমিতির ৪ জন এবং জেলা পরিষদের ২৮ জন প্রার্থী ‘ঘরবন্দি’। পশ্চিম মেদিনীপুরে ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েতে সবমিলিয়ে ৪ হাজার ৭১১টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী দিতে পেরেছে ২ হাজার ৪৯৩টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির ৬০২টি আসনে। শুধুই তৃণমূলের ভয় না সাংগঠনিক দুর্বলতা? জেলা সিপিএমের এক নেতা মানছেন, “বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনে ধস নেমেছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা সে ভাবে আর সক্রিয় নেই।” তাঁর কথায়, “পেরিয়ে আসা সময়ের বেশির ভাগটাই নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। সাংগঠনিক কাজকর্মের ধারবাহিকতাও বারে বারে ব্যাহত হয়েছে।” তাই বড় সভা ছেড়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার। দলীয় প্রার্থীদের এলাকায় ‘মাটি কামড়ে’ পড়ে থাকার নির্দেশ। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, দল ‘ঘুরে দাঁড়াচ্ছে’। একদা ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরে পরিবর্তনের দু’বছর পর সিপিএম কতটা ঘুরে দাঁড়াল? প্রশ্নের উত্তর মিলবে আর কিছু দিনেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে। |
|
|
|
|
|