পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ এখনও কাটেনি। কিন্তু তা বলে প্রার্থীরা তো আর প্রচারে পিছিয়ে থাকতে পারেন না। তাই বিভিন্ন এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় জমে উঠেছে ভোট-প্রচারের লড়াই। পাঁচলার গঙ্গাধরপুর পঞ্চায়েত সরগরম কাকা-ভাইপোর লড়াই নিয়ে।
কাকা প্রশান্ত পাত্র এ বার ওই পঞ্চায়েতের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী। তাঁর ভাইপো সুশান্ত পাত্র তৃণমূল প্রার্থী। দু’জনে পরস্পরের প্রতিপক্ষ। লড়ছেনও একই আসনে। গোন্দলপাড়ায় একই বাড়িতে বাস। তবে, ভোটের ময়দানে দু’জনে মুখোমুখি হলেও তার প্রভাব যাতে পারিবারিক সম্পর্কে না পড়ে তার জন্য দু’জনেই যথেষ্ট সতর্ক।
প্রশান্ত বয়স ত্রিশের কোঠায়। সুশান্ত সবে ২৬। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দু’জনেই গ্রামবাসীদের দোরে-দোরে ভোট প্রচারে ব্যস্ত। দু’জনেরই দেওয়াল-লিখনের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু প্রচারে কেউই ব্যক্তিগত ভাবে পরস্পরকে আক্রমণ করছেন না। সমালোচনা চলছে শুধু দল নিয়ে। কিন্তু তাঁদের পরিবারের লোকজন পড়েছেন ভারী মুশকিলে। কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে তাঁরা দ্বিধাবিভক্ত। |
গত বার (২০০৮ সাল) গঙ্গাধরপুর পঞ্চায়েত ছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দখলে। এ বার দু’দলের জোট হয়নি। তৃণমূল বা ফরওয়ার্ড ব্লক ছাড়াও ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে কংগ্রেস এবং বিজেপিও। কিন্তু প্রচার-পর্বে গোন্দলপাড়ায় কাকা-ভাইপোকে ঘিরেই মানুষের উৎসাহ বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রশান্তবাবু বা তাঁর ভাইপো এ বার যে আসনে লড়ছেন, গত বার সেই আসনেই কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল দীপ্তি পাত্রকে। ৮২ ভোটে তিনি হারিয়ে দেন ফরওয়ার্ড ব্লকের শম্পা পাত্রকে।
এ বার অবশ্য সেই হিসেব মাথায় রাখছেন না প্রশান্তবাবু। চাষাবাদ এবং জরির ব্যবসা করে তাঁর সংসার চলে। প্রশান্তবাবু বলেন, “ভাইপো রাজনীতিতে নতুন। ওরা ব্যাঙ্কের লোন পাইয়ে দেওয়া-সহ নানা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে গ্রামবাসীদের। আমি যা সম্ভব, তাই বলি মানুষকে। তাই আমার বিশ্বাস, লোকে আমাকেই ভোট দেবেন।” জেতা নিয়ে একই রকম আত্মবিশ্বাসী বিমা সংস্থার এজেন্ট সুশান্তও। তিনি বলেন, “কাকা খুব একটা জনপ্রিয় নন। আমি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলি। আমাকেই বেশি মানুষ চেনেন। আমিই জিতব।” |
দু’জনের মধ্যে কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে পরিবারের লোকজন কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। যেমন, তাঁদের এক আত্মীয় শেখর পাত্র বলেন, “দু’জনেই আমার কাছের লোক। আমি যে পরিবর্তনের কথা ভেবেছিলাম তা হয়নি। তাই কাকাকেই সমর্থন করব।” আর এক আত্মীয় কালীপদ বাঁক বলেন, “কাকা-ভাইপো ভোটের ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও পরিবারিক ব্যাপারে দ্বন্দ্ব নেই। তবে, আমি সমর্থন করব সুশান্তকেই।”
গ্রামবাসীরা কিন্তু দ্বিধায় রয়েছেন। দু’জনেই যে তাঁদের প্রিয়।
|