|
|
|
|
বরাকে আশঙ্কা |
বাঙালিদের দলে চায় মাওবাদীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর |
বরাক উপত্যকায় ঘাঁটি তৈরি করেছে মাওবাদীরা-এমনই আশঙ্কা করছে পুলিশ। ওই জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষনেতা এখনও সেখানে লুকিয়ে রয়েছে বলেও প্রশাসনিক মহলের সন্দেহ। পুলিশের দাবি, শুধু চা-বাগানের শ্রমিকরাই নন, বরাকের বাংলাভাষীদের মধ্যেও মাও-চিন্তাধারা ছড়ানোর ছক কষেছে জঙ্গিরা।
এ নিয়ে রাজ্য পুলিশের আইজি সত্যেন্দ্রনারায়ণ সিংহের বক্তব্য, মে মাসের প্রথম দিকে শিলচর থেকে মাওবাদীদের অন্যতম নেতা অনুকূলচন্দ্র নস্কর ওরফে পরেশদাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছিল, চা-বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে সংগঠন বিস্তারেই নস্কর বরাকে এসেছিলেন। আইজি-র দাবি, আসলে সেখানকার বাঙালিরাই ছিলেন ওই মাওনেতার মূল ‘টাগের্ট’।
পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, নকশাল আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল বাঙালিদের। বরাক উপত্যকা বাঙালিপ্রধান। তা-ই এখানকার প্রধান জনগোষ্ঠীর মানুষের সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মাওবাদীরা। পুলিশকর্তা সত্যেন্দ্রর কথায়, “মাওবাদীরাই এখন রাজ্য পুলিশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের রুখতে নজরদারি বাড়িয়েছি আমরাও।”
পুলিশকর্তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন ‘বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন’-এর সভাপতি নীতীশ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “বরাকে বাঙালিদের মধ্যে মাও তত্পরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ দাবির কোনও যৌক্তিকতা নেই। কেউ ব্যক্তিবিশেষে মাওবাদী হলে গোটা বাঙালি সমাজের দিকে আঙুল তোলাটাও অনুচিত।” তাঁর কথায়, “৬০-এর দশকে নকশালবাড়ি আন্দোলনের সঙ্গে এখনকার মাওবাদী কাজকর্মের ফারাক রয়েছে। নকশালবাড়ি আন্দোলনের সময়ও বরাকে কোনও সশস্ত্র বিপ্লব হয়নি।”
একই সুরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ‘আমরা বাঙালি’-র রাজ্য সচিব সাধন পুরকায়স্থও। তিনি বলেন, “এটি আইজি-র মনগড়া মন্তব্য। এ ধরনের কোনও পদক্ষেপ কোনও বাঙালি সংগঠনই করেনি। চারু মজুমদার, কানু সান্যালরা নকশাল ছিলেন বটে-কিন্তু তা ছিল একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তাঁরা বাঙালি সমাজের সমর্থন পেয়েছিলেন, এ কথা বলা যায় না।”
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ রাজ্যের ন’টি জেলাকে মাওবাদী উপদ্রুত হিসাবে ঘোষণার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে কাছাড় এবং করিমগঞ্জ জেলাও।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই পদক্ষেপে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বরাকেও। আশঙ্কায় রয়েছেন চা বাগানের মালিকরা। ‘টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’ (টাই)-র বরাক ভ্যালি শাখার সচিব কল্যাণ মিত্র বলেন, “মাওবাদীরা এখানে জঙ্গি-আন্দোলন শুরু করলে সমস্যায় পড়বে চা শিল্প। থমকে যাবে বরাকের যাবতীয় উন্নয়নও।”
বাগান শ্রমিকরা শোষিত হচ্ছে বলেই মাওবাদীরা তাদের টার্গেট করেছে-এ কথা মানতে চাননি টাই-এর সহকারী সচিব শরদিন্দু ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “বাগানে ৫৪ পয়সা দরে চাল-আটা, শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা রয়েছে। ছাতা-কম্বল-মশারি তাঁদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সঙ্গে রয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটির সুবিধা। মজুরি ঠিক করা হয় সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই।” |
|
|
|
|
|