|
|
|
|
জঙ্গিকর বন্ধে রিও সরকারকে নির্দেশ
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
জঙ্গিদের কাছে আর মাথা নুইয়ে থাকা নয়, অবিলম্বে নাগাল্যান্ড থেকে এনএসসিএন (আইএম)-এর বেআইনি কর আদায় কড়া হাতে বন্ধ করার জন্য নেফিয়ু রিও সরকারকে নির্দেশ দিল কেন্দ্র।
পুলিশের হিসেবে নাগাল্যান্ডে বর্তমানে এনএসসিএন-এর তিনটি গোষ্ঠী-সহ মোট সাতটি জঙ্গি গোষ্ঠী ‘কর’ নাম দিয়ে তোলা আদায় করে। এর মধ্যে এনএসসিএন (আইএম) কেবল সবচেয়ে বেশি কর আদায়ই করে না, যেহেতু তারাই একমাত্র কেন্দ্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাচ্ছে, তাই নিজেদের কর আদায়ের ন্যায্য দাবিদার বলেও ঘোষণা করেছে থুইংলেং মুইভা ও ইসাক চিসি সু-র দল। করের হার কেমন? নিজের বাড়ি হলে, বাড়ি প্রতি বছরে ১০০ টাকা। ব্যবসায়ী, গাড়ি মালিক, সরকারী কর্মী হলে আয় বুঝে করের মাত্রা ২০-৩৫ শতাংশ। ভাড়া গাড়ি চালালে বছর দিতে হয় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে টোল কর, প্রবেশ কর, ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতি প্রকল্প পিছু মুনাফার ভাগ। গ্রামোন্নয়ন বোর্ড ও গ্রাম পরিষদের টাকার একটি ভাগও জঙ্গিদের পকেটে যায়। এমন কী গির্জাকেও ছাড় দেয় না জঙ্গিরা। রাজ্যের বিনিয়োগ প্রকল্পগুলিতেও এর বড় প্রভাব পড়ছে। বেতনের ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ জঙ্গিকর দিতে খরচ হলে বিমা, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে যেমন টাকা রাখা সম্ভব হয় না, তেমনই ঋণ নিয়ে ইএমআই দেওয়াও সম্ভব নয়। ভিনরাজ্যের বহু ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী গত পাঁচ বছরে নাগাল্যান্ড ছেড়েছেন।
১৯৯৭ সালে এনএসসিএন (আইএম) এর সঙ্গে ও পরে খাপলাংদের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার। আগে জঙ্গিদের যে টাকা আদায় তোলাবাজি ছিল, সংঘর্ষবিরতি চুক্তির পরে সেটাই ‘কর’-এর তকমা পায়। এমন কী গত বছর বিধানসভার অধিবেশনেই সরকার ও বিরোধীরা একত্রে নাগাল্যান্ডে জঙ্গি দলগুলির অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রস্তাব পাশ করে। কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি অনুযায়ী জঙ্গিদের তোলাবাজি নিষিদ্ধ। কিন্তু সরকারি কর্মীদের বেতনের অংশ আদায় বা ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা আদায়ের ঘটনাকে ‘তোলা’ নয়, ‘নাগাভূমির জন্য স্বেচ্ছা দান’ হিসেবে দেখানো হয়। রাজ্যসরকারের কাছে জঙ্গিকর বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু নাগাল্যান্ড সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ইমকং ইমচেন সাফ জানান তা করতে সরকার অপারগ।
কেন্দ্র কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আর চুপ করে বসে থাকতে চাইছে না। নাগাড়ে জঙ্গি তোলাবাজির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অভিযোগ আসছে। গত কালই নাগাল্যান্ডের মুখ্যসচিব আলেম টেমসি জামিরকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, জঙ্গিদের বেআইনি কর আদায়ের ফলে রাজ্যে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। জনগণের পরিস্থিতি শোচনীয়।
মন্ত্রকের প্রশ্ন: আইএম ঘোষণা করেছে: প্রত্যেক নাগা ও নাগাল্যান্ডে থাকা মানুষ তাদের কর দিতে বাধ্য- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রশ্ন কী ভাবে তারা এই ঘোষণা করে? কেন রাজ্য সরকার এর জবাবি ব্যবস্থা নিচ্ছে না? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধিকর্তা (উত্তর-পূর্ব) জেপিএন সিংহ বলেন, “রাজনৈতিক সমাধানের রাস্তায় হাঁটা কোনও সংগঠন কী ভাবে সংঘর্ষবিরতি ও শান্তি চুক্তির নিয়ম ভেঙে করের নামে তোলাবাজি চালায়? চূড়ান্ত সময় এসেছে, যখন রাজ্যকে মানুষের স্বার্থ দেখতে হবে। জঙ্গিদের করের চাপ থেকে তাঁদের বাঁচাতে হবে।” পাশাপাশি, জঙ্গিকরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সংগঠন ‘আকাউট’-এর সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৭ থেকে সংঘর্ষবিরতিতে থাকা আইএম গোষ্ঠীর সঙ্গে এ পর্যন্ত কেন্দ্রের প্রায় ষাট দফা শান্তি আলোচনা হয়েছে। |
|
|
|
|
|