রাত প্রায় দশটা। বাসন্তী হাইওয়ের ধারে অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন এক মহিলা। স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দার পাশাপাশি তিলজলা থানার টহলদার পুলিশের একটি দল তাঁকে দেখতে পেয়ে খবর দেয় প্রগতি ময়দান থানায়। পুলিশ গিয়ে গুরুতর জখম ওই মহিলাকে তুলে এনে ভর্তি করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই জ্ঞান ফেরে প্রায় ন’ঘণ্টা পরে। পুলিশকে ওই মহিলা জানান, অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থায় তাঁকে অপহরণ করে, বেধড়ক মারধরের পরে রাস্তার ধারে ফেলে গিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মারের চোটে মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার গর্ভস্থ সন্তানের। তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পলাতক।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে আড়িপোতা এলাকা থেকে বাসন্তী মাইতি (৩২) নামে ওই মহিলাকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালের শয্যায় শুয়েই শুক্রবার তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ওই গৃহবধূর জবানবন্দির ভিত্তিতে তাঁর শাশুড়ি, দেওর, খুড়শ্বশুর-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে অপহরণ, খুনের চেষ্টা, নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
বাসন্তী পুলিশকে জানান, শ্বশুরবাড়ির অমতেই তিনি মাস ছ’য়েক আগে সঞ্জয় মাইতি নামে এক যুবককে রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন। তাঁর বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায়। সঞ্জয় কলকাতার কাছে একটি বেকারিতে কাজ করেন। কড়েয়া থানা এলাকায় বালু হাক্কর লেনের একটি বাড়িতে আয়ার কাজ করেন বাসন্তী। সোনারপুরে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা। বাসন্তীর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই সঞ্জয়ের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর উপর চাপ দিচ্ছিলেন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে এবং মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি কড়েয়া থেকে কাজ সেরে বেরিয়েছিলেন। ওই সময়ে তাঁর শাশুড়ি তাঁকে ফোন করে সায়েন্স সিটির কাছে যেতে বলেন। বাসন্তীর দাবি, তিনি যে সায়েন্স সিটিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, তা তিনি স্বামীকে জানাননি। সায়েন্স সিটি পৌঁছে তিনি দেখেন, তাঁর শাশুড়ি, দেওর, খুড়শ্বশুর এবং দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি একটি টাটা সুমো গাড়ি নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। বাসন্তীর অভিযোগ, তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাসন্তী হাইওয়ের ধারে আড়িপোতায়। সঞ্জয়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। মহিলার দাবি, তিনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা এবং অসুস্থ। তাই এ ব্যাপারে তিনি আপাতত কোনও কথা বলতে চান না। অভিযোগ, এর পরেই রাস্তায় ফেলে তাঁকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাঁর গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে পেঁচিয়ে মারার চেষ্টা হয়। পেটে লাথিও মারা হয়। মারধরের জেরে ওই মহিলার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং গর্ভস্থ শিশুটি মারা যায় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বাসন্তীর ব্যাগ থেকে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গিয়েছিল। সেখান থেকে তাঁর ভাই রঞ্জিত পায়রা-র নম্বর মেলে। খবর পেয়ে শুক্রবার গোসাবা থেকে হাসপাতালে আসেন রঞ্জিত। তাঁকে নিয়ে অভিযুক্তদের খোঁজে এ দিন দুপুরে গোসাবা রওনা হয় পুলিশ।
তবে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে ওই মহিলার স্বামীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকী, শুক্রবার রাত পর্যন্ত সঞ্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে পুলিশের দাবি। বাসন্তী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জানাননি। কিন্তু ওই যুবক কেন স্ত্রীর কোনও খোঁজ নিচ্ছেন না, তা জানতে সঞ্জয়কেও খুঁজছে পুলিশ। |