সুপ্রিম কোর্ট-নির্ধারিত পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট সংশয় তৈরি করে দিল তৃণমূলের ২১ জুলাই পালনে।
চিরাচরিত ভাবে তৃণমূল যে দিনটি ‘শহিদ দিবস’ হিসাবে পালন করে, এ বার সেই ২১ জুলাই পড়ছে ভোট-পর্বের মধ্যে। ‘শহিদ দিবসে’র পরের দিন চতুর্থ দফার ভোট, তার পরেও থাকছে পঞ্চম দফা। এই অবস্থায় আদৌ কলকাতায় ‘শহিদ সমাবেশ’ করা সম্ভব কি না, করলেও ভোট ছেড়ে সেখানে জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকেরা আসবেন কী ভাবে, সংশয় তৈরি হয়েছে এ সব প্রশ্নকে ঘিরেই।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য স্পষ্ট জানাচ্ছেন, যথাযোগ্য মর্যাদাতেই তাঁরা ২১শে-র ‘শহিদ দিবস’ পালন করবেন। কিন্তু প্রতি বারের মতো এ বারও ধর্মতলায় সমাবেশ হবে কি না, তা নিয়ে তাঁরা শুক্রবার নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। সমস্যা সামলে কী ভাবে দিনটি উদযাপন করা যায়, তা নিয়ে এ দিন থেকেই কথাবার্তা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন যুব কংগ্রেসের ‘মহাকরণ অভিযান’ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলি চালনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। পরবর্তী সময়ে মমতা-অনুগামীরা ২১ জুলাই ‘শহিদ দিবস’ পালন করে আসছেন ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। দল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সালেই একমাত্র শহিদ সমাবেশ ব্রিগেডে নিয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। বস্তুত, সে বার ওই দিনটি ‘শহিদদের উৎসর্গ’ করে তৃণমূল বিজয় সমাবেশ করেছিল। এ বারও মমতা ঘোষণা করেছিলেন, হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জয় এবং পঞ্চায়েতের বিজয় সমাবেশ ২১শে-ই পালিত হবে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ বদলে যাওয়ায় সে দিনের কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেন, “শহিদ দিবস পালিত হবেই। তবে প্রতি বার যেমন কলকাতায় সমাবেশ হবে, না ব্লকে ব্লকে দিনটি পালিত হবে, তা এখনও স্থির হয়নি। আমরা দলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।” পঞ্চায়েত ভোট হবে জেলায় জেলায়। ফলে, কলকাতায় সমাবেশ করায় কোনও বিধিনিষেধ আছে কি?
রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায়ের বক্তব্য, “নিয়ম হচ্ছে: যে জেলায় ভোট হচ্ছে, সেখানে যে কোনও সভা করতে অনুমতি লাগে না।’’ কলকাতায় তৃণমূল সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওঁরা (তৃণমূল নেতৃত্ব) যদি অনুমতি চান, আমরা স্বাগত জানাব।” কিন্তু মুকুলবাবুর উদ্বেগ, “ভোট চললে জেলা থেকে মানুষ কলকাতায় আসবেন কী করে?”
দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এমন পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন! দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে এ দিন প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন পার্থবাবু। সেখান থেকেই তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি যেমন ভাষা দিবস পালিত হয়, আমাদের এখানে ২১ জুলাই তেমনই শহিদ স্মৃতি তর্পণের দিন। কোন জাতীয়তাবাদী দল এ দিনটি ভুলতে পারে? ভাবতে কষ্ট লাগে কংগ্রেস চক্রান্ত করে শহিদ তর্পণের দিনটা ভুলে গেল! আমরা কিন্তু যথাযোগ্য মর্যাদায় ২১ জুলাই পালন করব।”
পার্থবাবুর অভিযোগ, কংগ্রেসে চক্রান্তে সামিল হওয়ার ফলেই পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে এমন সময় হচ্ছে, যখন ২১ জুলাই পালন নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে।
কংগ্রেস অবশ্য ২১শে-ই কলকাতায় সমাবেশের পরিকল্পনা করছে। প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি সৌমিক হোসেনের কথায়, “কলকাতায় তো ভোট হচ্ছে না। আমরা ২১ জুলাই কলকাতায় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছি। দিল্লির নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছি।” তবে যে সব জেলায় ভোট বাকি থাকবে, সেখান থেকে লোকজন সে দিন কলকাতায় আসতে পারবে না বলে ধরে রাখছেন সৌমিকেরাও।
|