গ্রামে বুথ নেই। তাই নিজস্ব গ্রাম সংসদ নেই। গ্রামের দাবি-দাওয়াও কেউ শোনে না।
এ বার তাই নিজস্ব বুথের দাবিতে পথে নেমেছেন রায়নার নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের জামুই গ্রামের বাসিন্দারা। ভোট দোরগোড়ায় এসে গেলেও কোনও রাজনৈতিক দলই ওই গ্রামে প্রচার চালাচ্ছে না। বরং দলমত নির্বিশেষে প্রায় প্রতি দিনই আলাদা বুথের দাবিতে গ্রামে মিছিল হচ্ছে।
রায়না-১ ব্লকের ওই গ্রামে ভোটারের সংখ্যা প্রায় সাতশো। গ্রামের উত্তর অংশের মানুষকে নাড়ুগ্রামের কাছে কুকুড়ার ১৩ নম্বর বুথ ও দক্ষিণ অংশের মানুষকে সেহারাবাজারের কাছে ফকিরপুরের ২ নম্বর বুথে ভোট দিতে যেতে হয়। দু’টি বুথই বেশ দূরে। এ বার পঞ্চায়েতের ভোটের মুখে ওই গ্রামে আলাদা বুথ করার দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, আলাদা বুথ নেই বলে তাঁদের নির্দিষ্ট বা একক কোনও গ্রাম সংসদ নেই। আর গ্রাম সংসদ না থাকায় তাঁদের উন্নয়নের দাবি হালে পানি পাচ্ছে না। |
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিপদতারণ ঘোষের কথায়, “জামুই গ্রামে পাঁচ শতাধিক পরিবার রয়েছে। কিন্তু তবুও গ্রামের জন্য সজলধারা প্রকল্পে কোনও নলকূপ তৈরি হয়নি। তাই পানীয় জলের সমস্যা মেটেনি। গ্রামের বুকে যে সব স্বল্প গভীরতার নলকূপ রয়েছে, সেগুলি তিন মাস জল দেয় না। অন্য সময়ে দূষিত ও পোকায় ভরা জল ওঠে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “গ্রামের বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে। এই পুকুরগুলির সংস্কার হয়নি। পুকুরের পাশে থাকা গ্রামের রাস্তা গিলছে পুকুর। কিন্তু তা প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থা নেই।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতা রঞ্জিত ঘোষ বলেন, “গ্রামের জন্য আলাদা বুথ বা গ্রাম সংসদ না থাকার কারণে আমরা উন্নয়নের অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। পাশের কুকুড়া ও ফকিরপুরে দু’টি আলাদা সংসদ থাকায় অনেক উন্নয়ন আদায় করে নিতে পেরেছেন সেখানকার মানুষ।” গ্রামবাসীর দাবি, এই দু’টি গ্রামে তৈরি হয়েছে পাকা রাস্তা, কালভার্ট, খেলার মাঠ, শ্মশান। বাঁধানো হয়েছে কয়েকটি পুকুর। কিন্তু জামুই গ্রামে সে সব কিছুই হয়নি।
গ্রামের প্রবীণ সিপিএম নেতা গোপালচন্দ্র ঘোষের অনুযোগ, “উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মানুষের বিশেষত মহিলাদের পক্ষে দু’কিলোমিটার দূরের বুথে ভোট দিতে যেতে খুবই সমস্যা হয়। আমাদের গ্রামে পাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেখানে অনায়াসে নতুন বুথ খোলা যেতে পারে। কিন্তু এই দাবি প্রশাসনের কাছে সে ভাবে পাত্তা পায়নি।” চাষের সঙ্কটের কথা তুলে তাঁর আক্ষেপ, “বোরো চাষের সেচের জন্য ২০-২২ বছর আগেও রাধাবাজারে অবস্থিত ডিভিসি-র মূল খাল থেকে মাঠ নালা দিয়ে জল আসত। সংস্কারের অভাবে নালাগুলি বুজে গিয়েছে। তাই বোরো চাষে সেচের জল থেকে এই গ্রাম বঞ্চিত। বারবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেও নালাগুলির সংস্কার করানো সম্ভব হয়নি।”
এখন গ্রামের মানুষ প্রতি দিনই আলাদা বুথ বা পৃথক গ্রাম সংসদের দাবিতে মিছিল করছেন। গ্রামবাসী পলাশ ঘোষ বলেন, “আগে এক সময়ে গ্রামের মানুষ পাশের দু’টি গ্রামে গিয়ে উন্নয়নের দাবি জানাতেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হত না। ওই দু’টি গ্রামের মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ওদের উন্নয়নের প্রস্তাবই পাশ হত গ্রাম সংসদের বৈঠকে। এখন তো গ্রাম সংসদের বৈঠক কবে তা জানিয়ে আমাদের চিঠিও দেওয়া হয় না, এতটাই দুয়োরানি আমরা!”
রায়না-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিডিও তপন হালদারের বক্তব্য, “সমস্যাটা অন্তত পনেরো বছরের পুরনো বলে শুনেছি। আমি এক বছর হল এখানে এসেছি। এর মধ্যে আলাদা বুথ চেয়ে ওই গ্রামের মানুষজন আমার কাছে আসেননি।” বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “ওই গ্রামের বাসিন্দারা যদি নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরুতেই আমাদের কাছে ওঁদের সমস্যার কথা জানাতেন, তা হলে আমরা অস্থায়ী বুথ করে ওঁদের ভোট নিতাম। কিন্তু কোথায় কোথায় বুথ হবে, তা তো ইতিমধ্যে চূড়ান্ত ভাবে স্থির হয়ে গিয়েছে।” বিডিও বলেন, “ওঁরা গণদরখাস্ত করলে পরের নির্বাচনে যাতে আলাদা বুথ পান, তার চেষ্টা করব।” |