তামলা বুজিয়ে প্রোমোটারি, নালিশ |
শহরের প্রধান নিকাশি নালা, তামলার কিছু অংশ ভরাট করে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এমনিতেই বৃষ্টিতে নালাটির দু’পাড় উপচে পড়ে। এর উপর গত কয়েক দিন ধরে কাদারোড-আমরাই রোডে তামলা নালার খাত ভরাট করে জমি দখল করে ঘরবাড়ি বানানো চলছে বলে জানান তাঁরা। এ নিয়ে মেয়র, মহকুমাশাসক, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি আইনে কোনও প্রাকৃতিক খাত ভরাট বেআইনি। আপাতত ওই এলাকায় যে কোনও রকম মাটি ভরাটের কাজ বন্ধ রাখার নিদের্শ দিয়েছি। খবর নিচ্ছি।”
শহরের কাদা রোড-আমরাই রোড, মেনগেট এবং আরও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে আমরাই রোডের তামলা ব্রিজ এলাকায় তামলা নালার খাত ভরাট করে সরকারি জমি জবরদখল করা চলছে। অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে জমি ভরাটের কাজ বন্ধ করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় গোপালপদ সিংহ, অমিতকুমার যাদবরা বলেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কাজে তামলা নালার খাত দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। প্রায় প্রতি বর্ষাতেই দু’কূল প্লাবিত হয়ে যায়। এখনই সচেতন না হলে বিপদ আরও বাড়বে।” রাজেশ রায়, সুরেশ মাহাতোদের দাবি, “কিছু প্রোমোটার এই কাজে জড়িত। তাদের না আটকানো গেলে আগামি বর্ষায় ফের বন্যার কবলে পড়তে হবে।” |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের আরতি গ্রাম লাগোয়া এলাকা থেকে তামলা নালাটি বেরিয়ে দুর্গাপুর শহরের মাঝ দিয়ে বেশ কয়েক কিমি গিয়ে পড়েছে দামোদর নদে। শহরের বর্জ্য জল এই নালা গিয়ে বয়ে যায়। প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগে নালাটি আরও চওড়া ও গভীর ছিল। কিন্তু নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে নালার দু’পাশে বসতি, খাটাল, দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ফলে বুজে গিয়েছে নালার দু’পাড়। এছাড়া নালার মাঝেও পলি জমেছে। নাগরিক সচেতনতার অভাবেও অনেকেই বর্জ্য ফেলেন নালায়। স্থানীয় কয়েকটি ছোট কারখানার বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ রয়েছে। ফলে নালার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যহত হয়। বেশি বৃষ্টি হলে নালার জল ছাপিয়ে দু’পাড় ভাসিয়ে দেয়। বন্যায় ভেসে গিয়ে এলাকার অনেকের মৃত্যুও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের ৫ জুলাই তামলা নালার স্রোতে ভেসে যান তিন জন। প্রবল বৃষ্টিতে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা সংলগ্ন তামলা নালার জল উপচে পাড় লাগোয়া দুমকা কলোনি প্লাবিত হয়। তখন কলোনির ঝুপড়ি ঘরে নাতি অজয় ডোমকে (১৮) নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন ঠাকুমা পতিয়াদেবী (৭০)। স্রোতে ভেসে যান দু’জনেই। একদিন পরে অজয়ের এবং দু’দিন পরে উদ্ধার হয় পতিয়াদেবীর দেহ। সেই রাতেই কাদা রোড রিভারসাইড এলাকায় তামলা নালার জলের তোড়ে ভেসে যায় সুনীতাকুমারী দাস (১৩) নামে এক কিশোরী ও তার দিদি মঞ্জু। পরের দিন ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিমি দূরে তার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মঞ্জুদেবীর দেহ একটি ঝোপে আটকে যায়। ভেসে যায় সুনীতা। ফের যাতে এমন দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য তামলা নালার পাশে যে কোনও রকম মাটি ভরাটের চেষ্টা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর জানিয়েছে, এ বিষয়ে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হবে। |