বর্ষায় বেহাল মহকুমার রাস্তা, ক্ষুব্ধ বাসচালকেরা |
বর্ষায় বেহাল দশা আসানসোল মহকুমার বেশিরভাগ রুটই। মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে খানাখন্দে ভরা রাস্তায়। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোটের পরেও রাস্তা ঠিক না হলে থেকে বিভিন্ন রুটে বাস বন্ধ করে লাগাতার বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি নেবেন তাঁরা।
রানিগঞ্জ থেকে বরাকর, জামুড়িয়া থেকে রানিগঞ্জ, আসানসোল থেকে দোমহানি-সহ প্রায় সব রুটেই রাস্তার বেহাল অবস্থা। আসানসোল-বরাকর রুটের আসানসোল থেকে নিয়ামতপুর পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত রাস্তা খানাখন্দে ভর্তি। একই অবস্থা কুলটির কলেজ মোড় থেকে বরাকর এলসি মোড় পর্যন্ত। এই রুটের মিনিবাস মালিক চরণজিৎ সিংহের ক্ষোভ, এখনও পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার হল না। অথচ সাতাশা থেকে ফতেপুর বা কুলটি কলেজ মোড় থেকে নিয়ামতপুর মোড় পর্যন্ত তুলনামূলক ভাল রাস্তার সংস্কার করা হল। ওই রুটের আর এক বাস মালিক তারকনাথ সাহার আবার অভিযোগ, যে অংশটুকু সংস্কার করা হয়েছে, তার দু’পাশের বেশ কিছুটা অংশ উঁচু হয়ে রয়েছে। দু’পাশে মাটি ফেলে তা সমান করা হয়েছে। বোল্ডার ও মোরাম দিয়ে ওই রাস্তায় কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। মাটি দিয়ে ওই রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। ফলে বর্ষায় কাদা হয়ে যাচ্ছে ওই রাস্তায়। তাঁর দাবি, মাস খানেক আগে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁর বাস ওই কারণেই উল্টে গিয়েছিল। |
একই হাল আসানসোল থেকে দোমহানি যাওয়ার রাস্তাতেও। খানাখন্দে ভরা গিরমিট মোড়, ভানোড়া মোড়, ভসকাজুড়ি, খাসকুঠি, কাল্লা হাসপাতালের সামনে এবং আসানসোল পুরনো রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় গর্ত তৈরি হয়েছে। আসানসোল বাইপাস থেকে সেনর্যালে হয়ে পাঁচগাছিয়া যাওয়ার রাস্তাতেও অজস্র গর্ত। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা কন্যাপুর ফাঁড়ি থেকে পাঁচগাছিয়া পর্যন্ত রাস্তায়। বেশিরভাগ জায়গাতেই রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে মোরাম, বোল্ডার বেরিয়ে পড়েছে।
রানিগঞ্জ থেকে জামুড়িয়া যাওয়ার রাস্তায় মারাফাঁড়ি, বীজপুর ও আকলপুর বাসস্টপেজ এলাকাতেও তেমনই দশা। রানিগঞ্জের জেকে নগর মোড় থেকে নিমচা যাওয়ার রাস্তার প্রায় অর্ধেকই বেহাল। দু’নম্বর জাতীয় সড়কের চাঁদামোড় থেকে কোয়ারডিহি পর্যন্ত পিচ রাস্তার বেশ কয়েকটি জায়গায় বোল্ডার বেরিয়ে পড়েছে। আসানসোল থেকে বার্নপুর যাওয়ার রাস্তার বার্নপুর মোড় থেকে স্কপগেট পর্যন্ত কোন কোনও অংশে গর্ত তৈরি হয়েছে। চিত্রামোড় এলাকায় আবার রাস্তা কেটে জল প্রকল্পের পাইপলাইন বসানো হয়েছে। তারপর রাস্তা সংস্কার না করায় বৃষ্টি হলেই ওই এলাকায় কাদা হয়ে যাচ্ছে। পিচ ঢেকে যাচ্ছে। |
বার্নপুরের রাঙাপাড়া থেকে সূর্যনগর যাওয়ার পথে দুই কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তার বেহাল দশা। ওই রাস্তার হারামডিহি থেকে দামোদর রেলস্টেশন পর্যন্ত পিচ না মোরামের রাস্তা, তাই বোঝা দায়। চিত্তরঞ্জন থেকে সামডি হয়ে লালগঞ্জ আসার রাস্তায় পাহাড়পুর, রাঙা এবং সামডি এলাকার বহু রাস্তাতেই বড় বড় গর্ত। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে পাঁচগাছিয়া হয়ে গৌরান্ডি যাওয়ার রাস্তাও বেহাল। সবথেকে খারাপ দশা জাতীয় সড়ক থেকে পাঁচগাছিয়া, বেলিয়াপুর থেকে আমডিহা এলাকার। অজস্র ছোটবড় গর্ত বর্ষার জলে ভর্তি হয়ে যাওয়ায় দেখা যা না। কিন্তু তার জেরে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। হরিপুর থেকে উখড়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তায় বনবহাল, এরিয়া অফিস, ডায়মন্ড মোড়ে গাড়ি চালানো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ডায়মন্ড মোড়ের কাছে দু’চাকা এবং চার চাকা গাড়ি মূল রাস্তা দিয়ে যেতে পারছে না। রাস্তার পাশ দিয়ে ওই অংশটুকু যেতে হচ্ছে। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। টায়ার ফেটে যাচ্ছে। দ্বিগুণ জ্বালানি লাগছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা রীতিমতো ব্যহত। ছোটাখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। তার জেরে জনরোষের আশঙ্কায় বেশিরভাগ মিনিবাস চালকই বাস চালাতে চাইছেন না। সুদীপবাবু বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বারবার চিঠি দিয়ে প্রতিকারের দাবি জানিয়েছি। কোনও ফল মেলেনি। পঞ্চায়েত ভোটের পর ১ অগস্ট থেকে লাগাতার পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রুটে বাস চালানো বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাব।” মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “বেশিরভাগ রাস্তাই পূর্ত দফতরের। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছে।” |