রীতা টোটোর পর দ্বিতীয় মহিলা স্নাতক হলেন সঞ্চিতা টোটো। ইংরেজি অনার্সে ৪৭ শতাংশ পেয়ে সঞ্চিতা পাশ করায় খুশি টোটোপাড়া। ভাষাগত সমস্যা ছিলই, পাশাপাশি জলপাইগুড়ি শহরে প্রসন্নদেব মহিলা কলেজে পড়ার সময় পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে তাকে সমস্যা হলেও, সমস্যাগুলিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে ধরে নিয়ে পাল্লা দিয়ে তাঁকে লক্ষ পূরণ করতে হয়েছে বলে সঞ্চিতা জানিয়েছেন।
|
সঞ্চিতা টোটো।
—ফাইল চিত্র |
২০১০ সালে একই কলেজে পড়ে রীতা টোটো মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্নাতক হন। মাস দুয়েক আগে রাজ্য সরকার তাকে অনগ্রসর কল্যাণ দফতরে সমাজসেবিকার পদে নিযুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছে। সঞ্চিতা সরকারি চাকরির আশায় কলকাতায় চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার প্রশিক্ষণ নেবেন বলে জানান। সঞ্চিতার সাফল্যে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র। তিনি বলেন, “সঞ্চিতা কোনও সাহায্য চাইলে প্রশাসনের তরফে তা পূরণ করার চেষ্টা করব। টোটোদের মধ্যে যারা মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পড়াশোনা চালানোর জন্য সহায়তা করা হয়েছে।” যদিও আর্থিক অনটনের জন্য টোটোপাড়ার বহু মেয়ে মাধ্যমিক গণ্ডি পেরিয়েও বাইরে স্কুলে বা কলেজে পড়াশোনা করতে পারছে না বলে সঞ্চিতার অভিযোগ। সঞ্চিতার কথায়, “আমাদের সম্প্রদায়ের মেয়েরা পড়তে চায়। গ্রামের স্কুলে মাধ্যমিক পড়ার পরে পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য আর পড়া হয় না।” তবুও প্রতিকূলতার মধ্যে টোটোপাড়ার দুই মেয়ে শোভা ও শান্তি টোটো পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। টোটোদের মধ্যে এ নিয়ে ৭ জন স্নাতক হয়েছেন।
মাদারিহাট থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ভুটান পাহাড়ের নীচে ভারতের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতি গোষ্ঠী টোটোর বাস। তিনটি পাহাড়ি ঝোরা পেরিয়ে টোটোপাড়া থেকে ব্লক বা শহরে যাতায়াত করতে হয়। কোনও নদীতেই সেতু নেই। বর্ষাকালে নদীগুলিতে জল ফুলে ফেঁপে উঠলে টোটোপাড়া কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। টোটোদের এখন জনসংখ্যা ১৪০২। জমিতে যৎসামান্য মারুয়া বা ভুট্টা ফলিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে টোটোপাড়ার বেশিরভাগ পরিবার অভাব অনটনের মধ্যে কাটায়। ১৯৭৯ সালে প্রয়াত চিত্তরঞ্জন টোটো প্রথম মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০০৩ সালে সূচনা টোটো মেয়েদের মধ্যে প্রথম মাধ্যমিক পাশ করেন। ছেলেদের সঙ্গে টোটোপাড়ার মেয়েরা সমানতালে পড়ায় এগিয়ে চলেছে। সঞ্চিতার বাবা ভক্ত টোটো ১৯৮১ সালে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তিনি বর্তমানে গ্রামের একটি ব্যাঙ্কের শাখার টাকরি করেন। সঞ্চিতারা ৪ ভাই বোন। তাদের মধ্যে দু-জন মাধ্যমিক পাশ। ভাই অভিষেক টোটো এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ভক্তবাবুর কথায়, “বাবা প্রয়াত ডিরপা টোটো নাম সই করতে পারতেন। তিনি অনগ্রসর কল্যাণ দফতরে চৌকিদারের কাজ করে খুব কষ্টে থেকে আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। অনেক মানুষই আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না।” |