কথা ছিল, দেখা হবে। কিন্তু বিরোধীদের হাতে ‘ধরা’ দিলেন না পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
কথা ছিল, বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টায় পঞ্চায়েতমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর নব মহাকরণের অফিসে দেখা করতে যাবেন সিপিএমের এক প্রতিনিধিদল। সাক্ষাতের সময় আগেই ঠিক ছিল। কিন্তু তার আধ ঘণ্টা আগে চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে যান মন্ত্রী। বলে যান, “চার তলাতেই একটা মিটিং আছে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফিরব।”
সুব্রতবাবু বেরিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরে তাঁর অফিসের কর্মীরাও ব্যাগপত্তর গুছিয়ে রওনা দেন বাড়ির পথে। তাঁদের কাছেও জানতে চাওয়া হয়, মন্ত্রী ফিরে আসবেন বলেছেন। তা হলে আপনারা বেরিয়ে যাচ্ছেন? কিন্তু কোনও উত্তর না দিয়ে তাঁরা চলে যান। অফিস ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ওই ভবনের কেয়ারটেকার সুব্রতবাবুর অফিসঘরের আলো-পাখা নিভিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সেখানকার কর্তব্যরত পুলিশরা জানান, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ মন্ত্রী গাড়ি নিয়ে নব মহাকরণ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন।
সন্ধে ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ সুব্রতবাবুর অফিসের সামনে পৌঁছন সিপিএমের চার নেতা সুজন চক্রবর্তী, অমিতাভ নন্দী, মানস মুখোপাধ্যায় ও রতন বাগচি। কিন্তু দরজায় তালা ঝুলতে দেখে সুজনবাবু বলেন, “রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা যেখানে পৌঁছেছে, তা নিয়ে কথা বলতেই তাঁর কাছে সময় চেয়েছিলাম। উনি সময়ও দিয়েছিলেন। এ দিন সকালেও তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু এসে তো দেখি তিনি নেই।” সুজনবাবুর বক্তব্য, “সুব্রতবাবু রাজ্যের এক জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। হঠাৎ কাজ পড়তেই পারে। তাঁকে যেতেও হতে পারে। কিন্তু যাওয়ার আগে সে কথা আমাদের বলতেই পারতেন।”
রাজনীতিতে সৌজন্য-অসৌজন্য নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। এ দিনের ঘটনা সেই বিতর্ককেই কি উস্কে দিল? সুজনবাবু বলেন, “সাক্ষাতের সময় ঠিক করে মন্ত্রীর কাছে আসা সৌজন্য বলেই জানি। কিন্তু সুব্রতবাবু যা করলেন, তা সৌজন্য না অসৌজন্য রাজ্যের মানুষ বলবেন।” তাঁর আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত চালানোর ভার বিডিওদের দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থায় দিনের পর দিন কী ভাবে মানুষ দূর দূরান্ত থেকে ব্লক অফিসে এসে শংসাপত্র জোগাড় করবেন, কী ভাবেই বা ভাতা নেবেন, সে সব নিয়ে আলোচনা করতেই মন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর কাছে কোটি কোটি লোকের অসুবিধার যে কোনও মূল্য নেই, তা বোঝা গেল।”
রাজনীতির কারবারিদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সচেতন ভাবেই সিপিএম নেতাদের এড়িয়ে গিয়েছেন। কেন? তাঁদের বক্তব্য, বারুইপুরে এক তৃণমূল নেতার খুনের ঘটনায় এফআইআর-এ নাম আছে সুজনবাবুর। এই পরিস্থিতিতে সেই তৃণমূল সরকারেরই কোনও মন্ত্রীর অফিসে বসে অভিযুক্ত ব্যক্তি কথা বলছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চাননি। তাই ‘কথা’ দিয়েও শেষ মুহূর্তে মত বদল করেন সুব্রতবাবুকে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, “জরুরি কাজ ছিল। তাই বেরিয়ে গিয়েছি।”
রাজ্যের প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা গৌতম দেবের অবশ্য সন্দেহ, সুব্রতবাবুর ‘জরুরি কাজে’র পিছনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা আছে। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে গৌতমবাবু বলেন, “আমি পরে জেনে নেব সুব্রতবাবুর কী অসুবিধা হল, মুখ্যমন্ত্রীর ফোনটা সুব্রতবাবুর ঘরে ক’টার সময়ে গেল? ৫টা ২০ না ২৫, তার আগে উনি সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত ছিলেন কি না?” কারণ ব্যাখ্যা করে গৌতমবাবু জানান, পঞ্চায়েতমন্ত্রীর সঙ্গে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারেই সুজনবাবুরা গিয়েছিলেন। এমনকী, সুজনবাবুরা সন্ধ্যা ৬টায় আসছেন কিনা জেনে নিতে বিকেল চারটে নাগাদ পঞ্চায়েতমন্ত্রীর দফতর থেকে গৌতমবাবুর কাছে ফোনও এসেছিল। তিনি বলেন, “সুজনরা ওখানে গিয়ে মন্ত্রীকে পায়নি শুনলাম। যা সচারচর হয় না। আমি ২০ বছর ওই ঘরে বসে থাকা লোক, জানি মন্ত্রী বেরিয়ে গেলেও, ওইসময়ে অফিস খোলা থাকে। আজ তালা পড়ে গিয়েছিল।”
এ দিনই অবশ্য বামফ্রন্টের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে গিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোট করার দাবি জানান। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় থেকে এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের সন্ত্রাস অব্যাহত। এর আগেও ওই দুই জেলার বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ১০টি ব্লকের নাম করে কমিশনকে সন্ত্রাসের অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বহু বাম প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। যাঁরা ভয় উপেক্ষা করে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, পরে তাঁদেরও হুমকি দিয়ে প্রার্থিপদ তুলে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ভাঙড়-১ এবং ২, বারুইপুর, কুলতলি, গোসাবা, মথুরাপুর-১, ক্যানিং-১ এবং ২, বাসন্তী, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, ডায়মন্ড হারবার-১, মগরাহাট-১ এবং ফলতায় সন্ত্রাস সবচেয়ে বেশি। কমিশন জানায়, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। |