মানে না কমিশন
ধান কিনতে বাধা ভোটের বিজ্ঞপ্তি, তোপ খাদ্যমন্ত্রীর
ঞ্চায়েত নির্বাচন কবে হবে, এখনও নিশ্চিত নয়। অথচ ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাওয়ায় চাষিদের থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান কেনার কাজ থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলল রাজ্য সরকার! তাদের দাবি, এই অচলাবস্থার দরুণ পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দু’লক্ষ ধানচাষি তাঁদের ফলন ঠিকঠাক দামে বিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে রাজ্য নির্বাচনের কমিশনের সঙ্গে বার বার বিতর্কে জড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিরোধের চলতি পর্বে কমিশনের বিরুদ্ধে এটাই আপাতত তাদের সাম্প্রতিকতম নালিশ। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের তোলা অভিযোগটি কমিশন অবশ্য অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য: সরকারের চালু কাজকর্ম বন্ধ রাখার কোনও নির্দেশ কমিশন জারি করেনি। চাল কেনা আগে থেকেই চলছিল, সরকার চাইলে এখনও তা চালু রাখতে পারত। “চাষি চাল বেচবেন। কিনবে সরকার, কোনও রাজনৈতিক দল তো নয়! এতে অসুবিধে কোথায়?” বলেন কমিশনের এক কর্তা।
অর্থাৎ, ধান কেনা বন্ধ থাকার সঙ্গে ভোট-বিজ্ঞপ্তি জারির সম্পর্ক নেই বলে কমিশন-সূত্রের দাবি। বস্তুত খাদ্য দফতরের একাংশও বলছে, বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাওয়াটা কোনও সমস্যা নয়, আসলে টাকার অভাবেই বেশ ক’মাস যাবৎ চাষির থেকে ধান কেনা যাচ্ছে না। এবং এই মহলের মতে, পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে বুঝেই দিন কয়েক আগে চালকল পরিদর্শনে বিশেষ দল পাঠিয়েছিল খাদ্য দফতর। চালকলগুলো কত ধান কিনেছে, কত চাল দফতরকে দিয়েছে এ সব দেখার পাশাপাশি সমস্যা মোকাবিলার উপায় খোঁজা ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এক খাদ্য-কর্তার কথায়, “চাষিদের থেকে নিজেরা চাল কিনতে না-পারায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তাগিদে চালকল-মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টির একটা চেষ্টা হয়েছিল। তাতেও সুরাহা হয়নি।’’
এবং সরকারের নিজের অক্ষমতা ঢাকতেই এখন নির্বাচনী বিধি-বিজ্ঞপ্তির দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে বলে মনে করছে খাদ্য দফতরের এই অংশ। যদিও খাদ্যমন্ত্রী বলছেন, “এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও বিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দল। কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বিধি লাগু হওয়ার আগে ধান কেনার প্রচারে বাধা দিয়েছে। বর্ধমানের গলসি-সহ বেশ কিছু জায়গায় খাদ্য-কর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছে।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুর যুক্তি: রাজনৈতিক বাধা পেয়ে এবং নির্বাচনের সময়ে এ নিয়ে গন্ডগোল এড়াতেই ধান কেনা বন্ধ রাখতে হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, সাধারণত জেলায় জেলায় একাধিক শিবির করে চাষিদের থেকে নগদে ধান কেনার ব্যবস্থা হয়। ব্লক ও মহকুমাস্তরে কোথায় কত দিন ধরে শিবির হবে, কোন সময়ে শিবির খোলা থাকবে চাষিদের কাছে তার নির্ঘণ্ট পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসনের তরফে মাইকে প্রচার চলে, বিলি হয় হ্যান্ডবিল। “কিন্তু নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হবে বলে ওই প্রচারটাই এ বার চালানো যায়নি।” আক্ষেপ জ্যোতিপ্রিয়বাবুর। তাঁর সংযোজন, “ধান কেনার শিবির সাধারণত খোলা হয় বিডিও বা এসডিও অফিসের কাছে। অথচ ভোটের কারণে বিডিও-এসডিওরা জায়গা দিতে রাজি হননি। বিভিন্ন জেলায় পুলিশও মাইকে প্রচারের অনুমতি দেয়নি।” মন্ত্রীর দাবি: কিছু থানা তাঁদের মৌখিক ভাবে জানিয়েছে যে, মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের, নির্বাচনী প্রচারের খাতিরে।
অগত্যা প্রচার করতে না-পেরে খাদ্য দফতর ধান কেনাই বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “খাদ্য দফতর গত দু’মাসে প্রায় দু’লক্ষ মেট্রিক টন ধান কিনতে পারেনি। ফলে ধান সংগ্রহ পিছিয়ে পড়েছে। কাজটা করা গেলে রাজ্যের ধানচাষিরা সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা হাতে পেতেন।”
কমিশন অবশ্য দায় মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য: ধান কেনার প্রক্রিয়া চালু রাখায় কোনও সমস্যা বা সংশয় থাকলে সরকার কমিশনকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে পারত! “তাতে তো কোনও বাধা ছিল না!” মন্তব্য এক কমিশন-কর্তার। কিন্তু এ জাতীয় কোনও চিঠি খাদ্য দফতর কমিশনকে দেয়নি। খাদ্যমন্ত্রীও নিজেও তা স্বীকার করেছেন।
কাজেই বিজ্ঞপ্তি জারির জেরে ধান কেনা বন্ধের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেই মনে করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.