বৌদির অভিজ্ঞতা রয়েছে। ননদ একেবারেই আনকোড়া। দু’জনেই এ বার সম্মুখ সমরে। তবে বাড়িতে নয়, ভোটের আঙিনায়। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতার মধ্যেও বরাবাজার মজেছে ননদ-বৌদির নির্বাচনী লড়াইয়ে। বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির ২ নম্বর আসনে বৌদি কংগ্রেস প্রার্থী দিপালী মাহাতো। ওই আসনেই তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন দিপালীর ননদ রেণুকা মাহাতো। দিপালী ২০০৮ সালেও পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে নেমেছিলেন। অল্প কিছু ভোটে তিনি সিপিএমের প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এ বার তাঁর স্বামী ভগীরথ মাহাতো দলের ব্লক সভাপতি পদে রয়েছেন। এলাকাতেও কংগ্রেসের সমর্থন রয়েছে। তাই দাবি করছেন, তিনিই এগিয়ে। দাবির লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই তৃণমূল-সমর্থক পরিবারের বউ রেণুকা। স্বামী বিকাশ মাহাতো (ডেকোরেটর ব্যবসায়ী) তৃণমূলের কোনও পদে না থাকলেও রেণুকার ভরসা খোদ মুখ্যমন্ত্রী। ওই নামের জোরেই তিনি ডিঙি নৌকায় ভোট-সমুদ্রে নেমে পড়েছেন।
বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির ২ নম্বর আসনে ৬টি সংসদ রয়েছে: শচানডি, দুবরাজপুর, আদাবনা, তালটাড়, বামু ও রাউতড়া। ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েতের বামু গ্রামে দিপালীর শ্বশুর বাড়ি। তাঁর স্বামী ভগীরথবাবু জানান, ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের সংগঠন বেশ মজবুত। পঞ্চায়েতে সিপিএমের ৮ জন ও কংগ্রেসের ৭ জন সদস্য রয়েছেন। এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসনের মধ্যে দু’টিতে গত বার কংগ্রেস ও একটি জিতেছিল সিপিএম। পরে কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তরুণ মাহাতো তৃণমূলে যোগ দেন। এরপরেই ভগীরথবাবুর দাবি, “তবুও এলাকায় তৃণমূলের তুলনায় আমাদের সমর্থনই বেশি। কাজেই অন্যেরা সাফ হয়ে যাবে।” |
স্বামীর সুরেই বছর ত্রিশের দিপালীও বলেন, “গত বার তো মোটে ১৩ ভোটে হেরে গিয়েছিলাম। এ বার আমার হারার কোনও কারণই নেই।”
মানতে নারাজ ননদ রেণুকা। দাবি করেন, “রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল। দিদি রাজ্যের জন্য যা উন্নতি করছেন, বরাবাজারেও তার ধারা বজায় রাখতে মানুষ আমাকেই ভোটে জেতাবেন।” তাঁর স্বামী বিকাশ মাহাতো হয়তো রাজনৈতিক ভাবে কেউকেটা নন। কিন্তু দল সব সময় রেণুকার পাশে রয়েছে। তৃণমূলের ভাগাবাঁধ অঞ্চল সভাপতি সুশীল মাহাতো বলছেন, “এলাকার মানুষ জানেন আগে যাঁরা কংগ্রেস ও সিপিএম থেকে জিতেছেন, তাঁরা এলাকার কোনও কাজই করেননি। তাই এ বার তাঁরা আমাদেরই সমর্থন করবেন।” ওই আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম-ও। দলের ভাগাবাঁধ লোকাল কমিটির সম্পাদক ভোলানাথ মাহাতো বলছেন, “আমাদের সংগঠনিক শক্তি তো রয়েইছে। তার উপরে বৌদি-ননদের ভোট কাটাকাটিতে আমাদের প্রার্থী অপ্সরা মাহাতোর পাল্লাই ভারি দেখছি।”
তবে রাজনৈতিক তরজার বাইরে বৌদি ও ননদের ভোট প্রচার নিয়েই বাসিন্দাদের আগ্রহ বেশি। দুই প্রার্থীই জানিয়েছেন, পরস্পরের বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন না। দলের কর্মীদেরও এ ব্যাপারে তাঁরা সতর্ক করে দিয়েছেন। রেণুকার শ্বশুরবাড়ি বামুর পাশের শচানডি গ্রামে। পড়শিরা জানিয়েছেন, পাশেই বাপের বাড়ি থাকলেও সেখানে রেণুকাকে ইদানিং দেখা যায়নি। বৌদির বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াতেই কি দুই বাড়ির সম্পর্কে অবনতি? রেণুকার সটান জবাব, “তা হবে কেন? ভোটের প্রচারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাপের বাড়ি যেতে পারিনি। নির্বাচনের আগে বাবার কাছে ভোট চাইতে যাব বইকি।” তাঁর বাবা (দিপালীর শ্বশুর) হেরম্ব মাহাতো বলেন, “আমি পুরনো দিনের কংগ্রেস কর্মী। একবার ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও হয়েছিলাম। মেয়ে আদরের হলেও ভোটটা আমার দলের প্রার্থী বৌমাকেই দেব বলে ঠিক করেছি।” উত্তরটা বোধহয় মেয়ের কাছেও প্রত্যাশিত ছিল। তিনি জানিয়েছেন, “ভোটটা না পাই, বাবার আশীর্বাদ নিতেই তাঁর কাছে যাব।” আর রেণুকার প্রতিদ্বন্দ্বী দিপালী বলছেন, “আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই ভাল রয়েছে। প্রচারে অবশ্যই ননদের শ্বশুরবাড়িতে যাব। কে জানে, ননদাই হয়তো শেষ মুর্হুতে আমাকেই তাঁর ভোটটা দিয়ে দিতে পারেন।” |