জন ম্যাকেনরো বলছেন, প্লেয়ার আর তার পরে ভাষ্যকার হিসেবে ছত্রিশ বছর উইম্বলডনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। এই বুধবারের মতো পাগলাটে দিন কখনও দেখেননি! তিন বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন যে চ্যানেলে কমেন্ট্রি করছেন সেই বিবিসি টিভি শিরোনাম দিয়েছে ‘ওয়াকওভার ওয়েডনেসডে’! যে একটা দিনেই দুপুর একটা থেকে রাত আটটা— মাত্র সাত ঘণ্টায় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদামণ্ডিত গ্র্যান্ড স্ল্যাম থেকে সাত-সাতজন বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর ছিটকে পড়েন। চারজন তারকা চোটের জন্য কোর্টে নামতেই পারেননি। তিনজন ম্যাচের মাঝপথে অবসর নিতে বাধ্য হন!
অভুতপূর্ব যে ঘটনার পিছনে প্রধান খলনায়ক হয়ে উঠে আসছে যে চরিত্রটি তার নাম অল ইংল্যান্ড ক্লাবের ঘাসের কোর্ট। শারপোভা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর দাবি তুলে দিয়েছেন যে, সারা বছর হার্ড, ক্লে আর সিন্থেটিক কোর্টে খেলতে অভ্যস্ত প্লেয়ারদের দুম করে গ্রাস কোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলতে নামার আগে উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ যেন পরের বার থেকে প্রধান কোর্টগুলোতে প্র্যাক্টিসের সুযোগ দেন টেনিস তারকাদের।
উইম্বলডনের প্র্যাক্টিস এরিনা বলতে আওরাঙ্গি পার্ক বোঝায়। যেটা অল ইংল্যান্ড ক্লাবের লাগোয়া। যেখানে উইম্বলডনের আগের সপ্তাহ থেকেই অনুশীলনে ব্যস্ত দেখতে পাওয়া যাবে জকোভিচ থেকে সেরেনা। ফেডেরার থেকে শারাপোভা। এমনকী সানিয়া, লিয়েন্ডার, মহেশদেরও। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে কমপক্ষে তিন বার কোর্ট নম্বর দুই-এ আছাড় খেয়ে উইম্বলডন থেকে বিদায় নেওয়া শারাপোভা এমনকী এ-ও দাবি তুলেছেন, উইম্বলডনে ‘শো কোর্ট’ যেগুলোকে বলা হয় সেই সেন্টার কোর্ট, এক-দুই ও তিন নম্বর কোর্টেও যেন পরের বছর থেকে প্লেয়ারদের প্র্যাক্টিসের সুযোগ দেওয়া হয়। যাতে তারা অনভ্যস্ত ঘাসের কোর্টের গতি, বাউন্স এবং পিচ্ছিল ভাব সম্পর্কে আগাম ধারণা অর্জন করতে পারে। |
প্রেমিক দিমিত্রভের ম্যাচে দর্শক শারাপোভা। ছবি: রয়টার্স |
যে দাবি প্রকারান্তরে উড়িয়ে দিচ্ছেন অল ইংল্যান্ড ক্লাবের চিফ এক্সিকিউটিভ রিচার্ড লুইস। খুব সাবধানী এক বিবৃতিতে তিনি কালো বুধবারের চব্বিশ ঘণ্টা পর এ দিন মন্তব্য করেছেন, “গত কয়েক বছর যে ভাবে উইম্বলডনের জন্য অল ইংল্যান্ড ক্লাবের বাইশটা ঘাসের কোর্ট তৈরি করা হয়েছিল, এ বারও ঠিক সে ভাবেই হয়েছে। আর এটা সবার জানা যে, ঘাসের কোর্ট শুরুর দিকে চকচকে থাকে। একই সঙ্গে এটাও প্রামাণ্য তথ্য যে, কোর্টগুলো শুকনো এবং জমাট যেমন প্রতি বছর থাকে এ বারও ঠিক তেমনই রয়েছে।” প্রচণ্ড চাপে থাকা উদ্যোক্তারা আবার অভাবিত ভাবে পাশে পেয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন টেনিস তারকাকে! প্রাক্তন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন প্যাট ক্যাশ বিলেতের চ্যানেলে বলেছেন, “আমি মনে করি না কোর্টে কোনও সমস্যা আছে। যার জন্য এক দিনেই এতগুলো বড় অঘটন ঘটেছে। এ সব ছেঁদো অজুহাত। পনেরো বছর আগেও প্লেয়াররা উইম্বলডনে সর্বত্র আছাড় খেত।”
তাও যেন টেনিস মহলের কিছু ব্যাপার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও গলঃধরণ হচ্ছে না। যেমন, পুরুষ সিঙ্গলসের যে নীচের অর্ধের ‘ড্র’ নিয়ে এত সমালোচনা হচ্ছিল, উইম্বলডন মাত্র তিন দিন গড়াতেই সেখানে অ্যান্ডি মারের ফাইনালে ওঠার ময়দান সাফ! নাদালের পরে ফেডেরার আর সঙ্গারও বিদায়ের ফলে ব্রিটেনের নয়নের মণি মারেকে এখন ৭ জুলাইয়ের ফাইনাল খেলার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা টপকাতে হবে ১৫ নম্বর বাছাই নিকোলাস আলমাগ্রো-র। যে ফরাসি জীবনে উইম্বলডনে তৃতীয় রাউন্ডের বেশি টপকাতে পারেননি এবং মূলত ক্লে কোর্ট বিশেষজ্ঞ।
আবার যেমন ফেডেরারকে যতই ম্যাচের ঠিক আগে টুর্নামেন্ট কমিটির নির্দেশে তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যের জুতো পাল্টে নতুন টেনিস শু পরে খেলতে বাধ্য করা হোক, সে জন্য সাত বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নের দীর্ঘ আট বছর পর র্যাঙ্কিংয়ে একশোর বাইরে থাকা প্লেয়ারের হাতে পরাজয়ও কেমন যেন অত্যাশ্চর্য! স্টাকোভস্কি এটিপি ট্যুরের দ্বিতীয় ডিভিশন চ্যালেঞ্জার সার্কিট মূলত খেলে বেড়ান। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশের মধ্যে থাকা প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে ১৯ বার মুখোমুখি হয়ে কখনও একটি সেটও জেতেননি। সেই লোক ফেডেরারকে ৪৯ গ্র্যান্ড স্ল্যামে প্রথম বার দ্বিতীয় রাউন্ডে হারার তেঁতো বড়ি গিলতে বাধ্য করেছেন। তবু ভাঙলেও না মচকানো ফেডেরার বলছেন, “আমার আরও অনেক বছর খেলার প্ল্যান আছে। এটা একটা দুর্ঘটনা। আমার যেমন একত্রিশ বছর বয়স হয়েছে, তেমনই আমি এ বার উইম্বলডনে আসার আগে টানা ৩৬টা গ্র্যান্ড স্ল্যামে কোয়ার্টার ফাইনালও খেলেছি! সুতরাং এখন আমি স্রেফ প্র্যাক্টিস কোর্টে ফিরে যাব, প্রচুর খাটব। যাতে আরও শক্তিশালী হয়ে পরের গ্র্যান্ড স্ল্যামে ফিরতে পারি।”
|
রাতারাতি অখ্যাত বিখ্যাত |
সের্জেই স্টাকোভস্কি
দেশ ইউক্রেন • বসবাস কিয়েভ
বয়স ২৭ • বিশ্ব র্যাঙ্কিং ১১৬
• পুরো নাম সের্জেই স্টাকোভস্কি।
• ফেডেরারকে উইম্বলডন থেকে ছিটকে দেওয়ার আগে পর্যন্ত টেনিস সার্কিটে সবচেয়ে পরিচিত ছিলেন আইফোনে লাইন কল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার জন্য! এ বছর ফরাসি ওপেনে গাস্কে ম্যাচে আইফোনে ছবি তুলে সের্জেই চেয়ার আম্পায়ারকে দেখান। চ্যালেঞ্জ গ্রাহ্য হয়ে পয়েন্ট পেলেও তাঁর দু’হাজার ডলার জরিমানাও হয়।
• জীবনে গ্র্যান্ড স্ল্যামে তৃতীয় রাউন্ডের বেশি উঠতে না পারলেও এটিপি প্লেয়ার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তাঁর এ বার উইম্বলডনে প্রথম রাউন্ডে পরাজিতদের প্রাইজমানি ৯ হাজার পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ২৩ হাজার করার পিছনে বিশেষ ভূমিকা।
• প্লেয়ার কাউন্সিলে অবশ্য গ্র্যান্ড স্ল্যামে ছেলে-মেয়ের সমান চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার অর্থ চালুর বিরোধী ছিলেন। সংস্থার প্রেসিডেন্ট ফেডেরারকে ‘বড্ড বেশি নিরপেক্ষ’ বলে কটাক্ষ করেন। যাঁকে উইম্বলডনে হারিয়েই সের্জেইয়ের মহাঅঘটন।
• বাবা কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। মা অর্থনীতির প্রফেসর। ইউক্রেনিয়ান ছাড়াও সের্জেই আরও চার ভাষায় (ইংরেজি, রাশিয়ান, স্লোভাক ও চেক) অনর্গল কথা বলতে পারেন। স্ত্রী অ্যানফিসা বুলগাকোভা রুশ মডেল। |
|
মিশেল ক্যারোলিন
দেশ পর্তুগাল • বসবাস লিসবন
বয়স ২০ • বিশ্ব র্যাঙ্কিং ১৩১
• পুরো নাম মিশেল ক্যারোলিন লার্চার ডি ব্রিটো।
• শারাপোভার সঙ্গে মিল দু’জনই দশ বছর বয়সের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। দু’জনেরই টেনিস-পাঠ ফ্লোরিডায় নিক বলতিয়েরির কাছে।
• বলতিয়েরির ‘ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রথম দশের মধ্যে থাকা প্রতিভা’ ২০০৯ জুনিয়র ফরাসি ওপেন রানার্স হওয়ার পর র্যাঙ্কিংয়ে ক্রমাগত নেমেছেন।
খেলার সময় কোর্টে প্রচণ্ড ঘোঁতঘোতানির জন্য শারাপোভা, আজারেঙ্কাদের সমান পরিচিত। ব্রিটোর ব্যাখ্যা, এটা বন্ধ করলে তাঁর খেলাটাও স্বাভাবিকতা হারাবে। |
|
|