মার্কশিটে ভুল, হাতছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সুযোগ
চ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটটা হাতে পেয়ে চমকে উঠেছিল দীপায়ন রুদ্র। মনে হয়েছিল, ‘ভুল দেখছি না তো’। খড়্গপুরের এই ছাত্রের কথায়, “কেমিস্ট্রি পরীক্ষা দিয়েছি। অথচ, মার্কশিট বলছে, ওই পরীক্ষায় আমি অনুপস্থিত ছিলাম! এমনটা হতে পারে বলে কখনও ভাবিনি।” মার্কশিটের ভুল সংশোধনের আবেদন জানিয়ে সংসদ অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে দীপায়ন। তবে, এখনও সংশোধিত মার্কশিট হাতে পায়নি। ফলে, জয়েন্টে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ‘র্যাঙ্ক’ করেও কাউন্সেলিংয়ে যোগ দিতে পারেনি। কলেজেও ভর্তি হতে পারছে না। সব মিলিয়ে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে ওই ছাত্র।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মেদিনীপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের অধিকর্তা সৌভিক ঘোড়ইয়ের বক্তব্য, “মেদিনীপুর কেন্দ্রে আবেদনপত্র জমা পড়লে তা কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক কী হয়েছে, দেখছি।” দীপায়নের বাড়ি খড়্গপুরের কৌশল্যায়। সে ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের ছাত্র। বাবা অনিলচন্দ্র রুদ্রের ব্যবসা রয়েছে। দোকানে ওষুধপত্র সরবরাহ করেন। মা তপসীদেবী গৃহবধূ। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান দীপায়ন। সমস্যা অজানা নয় স্কুল কর্তৃপক্ষের। তবে, তাঁরাও নিরুপায়। কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষের বক্তব্য, “দীপায়ন সব পরীক্ষাই দিয়েছে। তারপরও এমন মার্কশিট এসেছে। আমাদের করণীয় কিছু নেই। আশা করি, সংসদ দ্রুত পদক্ষেপ করবে।” স্কুলের এক শিক্ষকের মন্তব্য, “এরপর আর সংশোধিত মার্কশিট হাতে পেয়ে লাভ কী? তখন তো কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে! ফলে, আরও একটা বছর নষ্ট হবে।”

সঙ্কটে দীপায়ন রুদ্র। —নিজস্ব চিত্র।
জয়েন্টে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৮,৫০২ র‌্যাঙ্ক করেছে দীপায়ন। তার বক্তব্য, “ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। কিন্তু, তা হবে বলে তো মনে হয় না! এই অবস্থায় কাউন্সেলিংয়ে যাব কী করে?” দীপায়ন ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। তবে, ওই বছর কেমিস্ট্রিতে পাশ করতে পারেনি। এ বার ফের সব পরীক্ষা দেয় সে। স্কুল সূত্রে খবর, এ বার সব ক’টি বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যথাসময়ে ফর্ম জমা দিয়েছিল দীপায়ন। ফলে, সাধারণ (সিসি) পরীক্ষার্থী হিসেবেই তার পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। তবে সিসি’র বদলে তার নামে বিশেষ পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট আসে। কোনও বিষয়ে অনুত্তীর্ণ যে সব পড়ুয়া পরের বছর শুধুমাত্র সেই বিষয়ের পরীক্ষা দেয়, তারাই বিশেষ (স্পেশ্যাল) পরীক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়। দীপায়ন সব বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েছে। সেই মতো ফর্মও পূরণ করে। তার পরেও সে বিশেষ পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট পায়। অর্থাৎ, ভুল শুরু হয় গোড়াতেই। জানা গিয়েছে, এই অ্যাডমিট সংশোধনের জন্যও সংসদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। একবার নয়, তিন-তিনবার। তবে, এখনও সংশোধিত অ্যাডমিট সে হাতে পায়নি। শেষমেশ, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেখিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দেওয়ার অনুমতি মেলে।
ফল বেরোনোর পর ফের বিপত্তি। দেখা যায়, মার্কশিটে রয়েছে, কেমিস্ট্রি পরীক্ষায় সে অনুপস্থিত ছিল। অথচ, দীপায়নের পরীক্ষাকেন্দ্র খড়্গপুর রেলওয়ে হাইস্কুলের (বালক) কাগজপত্রও বলছে, সব পরীক্ষাই দিয়েছে দীপায়ন। মার্কশিট দ্রুত সংশোধনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মেদিনীপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রে দরবার করেছে দীপায়নের পরিবার। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থবাবুও নিজে সংসদে গিয়ে এ নিয়ে দরবার করেছেন। তবে, এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ কিছু হয়নি। দীপায়নের স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, “শুরু থেকে দুই কেন্দ্রের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে, যা করার কলকাতা করবে। কলকাতায় মূল কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আবার ফোনে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে, যা করার মেদিনীপুর কেন্দ্রই করবে!”
মঙ্গলবার ছিল রিভিউয়ের শেষ দিন। এরপর সংশোধিত মার্কশিট এলেও আর রিভিউয়ের সুযোগ নেই। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মেদিনীপুর আঞ্চলিক কেন্দ্র সূত্রে খবর, শুধু দীপায়ন নয়, আরও কয়েকজন ছাত্রছাত্রী একই সমস্যায় পড়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.