|
|
|
|
কোন্দল ঠেকাতে কড়া মমতা, মঞ্চেই ধমক দিলেন নেতাদের |
বরুণ দে • খাকুড়দা (নারায়ণগড়) |
বিধানসভা ভোটের পর দু’বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই যে নারায়ণগড়ে সিপিএম জিতে গিয়েছিল, সে কথা এখনও বিশ্বাস করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে এসে সভামঞ্চ থেকে দলের নেতাদের রীতিমতো ধমকে সে কথাই বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
মমতার দু’দিনব্যাপী পশ্চিম মেদিনীপুর সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সভা ছিল নারায়ণগড়ের খাকুড়দায়। দুপুর দু’টো নাগাদ মঞ্চে উঠেই সেই প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা। বিধানসভা ভোটে এই আসনে জিতেছিলেন বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র। তবে সূর্যবাবুর নাম করেননি মমতা। তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সূর্য অট্ট ও দলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা কৌসর আলির উদ্দেশে মমতা বলেন, “সূর্য-কৌসর নিজেদের মধ্যে যদি ঠিক মতো চলত, তাহলে এখান থেকে ওই ভদ্রলোক জিততে পারতেন না। আমি সব জানি। এ সব আর দেখতে চাই না। আমি এটা ‘টলারেট’ করব না। ভবিষ্যতে এমন হলে হয় আমি থাকব, না হয় ওরা থাকবে।”
সূর্য অট্ট বরাবর নারায়ণগড়ের প্রভাবশালী নেতা। দীর্ঘদিন ব্লক সভাপতি ছিলেন। এখানে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেন তিনি। উল্টো দিকে কখনও কৌসর আলি, তো কখনও ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় সূর্য-কৌসর দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। প্রথমে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে কৌসর আলির নাম ঘোষণা হয়। তাঁর নামে দেওয়াল লিখনও শুরু হয়ে যায়। পরে প্রার্থী হিসেবে সূর্য অট্টের নাম ঘোষণা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনিই দলের প্রতীক পান। তবে রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের ঝড়ের মধ্যেও নারায়ণগড় থেকে জিততে পারেননি সূর্য অট্ট। |
 |
নারায়ণগড়ের জনসভায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল |
শুধু সূর্য-কৌসর নন, কেশিয়াড়িতে বিবদমান দুই তৃণমূল নেতা ব্লক সভাপতি জগদীশ দাস এবং জেলা নেতা বিষ্ণুপদ দে-কেও সতর্ক করেন মমতা। তৃণমূল নেত্রী বলেন, “দু’জনকেই মিলেমিশে কাজ করতে হবে। মানুষের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি জগদীশ-বিষ্ণুবাবু, সবাইকে এ কথা বলছি।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষেরা কার্যত বিড়ম্বনায় পড়ে যান। মুখ চাওয়াচায়ি করতে থাকেন সূর্য অট্ট, কৌসর আলিরা। দলের বৈঠকে দিদিকে এমন ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হতে দেখেছেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু প্রকাশ্য সভায় শেষ কবে এমন কড়া বার্তা মমতা দিয়েছেন, মনে করতে পারছেন না তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গীরাও। ‘দিদির ধমক’ খেয়ে সূর্য ও কৌসরও মিলেমিশে কাজ করার কথা বলছেন। নারায়ণগড় থেকে এ বার জেলা পরিষদের প্রার্থী সূর্য বলেন, “এখন আমরা মিলেমিশে কাজ করছি। কোনও সমস্যা নেই।” আর কৌসরের বক্তব্য, “দিদির কথা মতো আমরা কাজ করছি। সব ঠিকঠাকই আছে।”
দলীয় দ্বন্দ্বের জেরেই এই হার বলে তৃণমূলের অন্দরে তখন আলোচনা হয়েছিল। তারপর সব থিতিয়ে যায়। দু’বছর পরে স্বয়ং মমতা প্রকাশ্য সভায় বিষয়টি তোলায় ফের চর্চা শুরু হয়েছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বেশ কিছু আসনে যেখানে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে, দলের অনেক নেতা-কর্মীই প্রতীক না পেয়ে নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, সেখানে মমতার এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। মিহিরবাবু বলেন, “নেত্রী প্রকাশ্য সভায় এই বার্তা দেওয়ায় নিচুতলার কর্মীদের কাছেও তা পৌঁছবে। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দল আরও ঐক্যবদ্ধ হবে।” জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়, “আমরা অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছি। সকলে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।” |
|
|
 |
|
|