কেদারের বিগ্রহ উখীমঠে |
উদ্ধার শেষের পথে, এখনও নিখোঁজ ৩ হাজার
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আশপাশ খাঁ খাঁ করছে। প্রকৃতির রোষে শ্রীহীন কেদারনাথ মন্দিরের চত্বর থেকে সব মৃতদেহ সরিয়ে নেওয়া হলেও বাতাসে ভাসছে পচাগলা শবের গন্ধ। তার মধ্যেই মন্দির শুদ্ধকরণের পালা। কেদারনাথের মন্দির কর্তৃপক্ষ এখন হাত দিতে চান সেই কাজে।
সাধারণ পুণ্যার্থীদের জন্য মন্দিরের দরজা না খুললেও আশা করা হচ্ছে, দু’সপ্তাহ পরে অন্তত আনুষ্ঠানিক পুজো শুরু করা যাবে। দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া স্থানীয় কিছু লোকই এখন মন্দিরে ধূপ-ধুনো দিচ্ছেন। পুরোহিতের তত্ত্বাবধানে পুজো শুরু হতে লেগে যাবে দিন পনেরো। মন্দির কমিটির দশ সদস্যের একটি দল কাল কেদারনাথ গিয়ে মন্দির চত্বর সাফসুতরো করবে। তার পরে হবে শুদ্ধকরণ। শ্রীনগরের বিধায়ক এবং বদ্রীনাথ-কেদারনাথ মন্দিরের সভাপতি গণেশ গোড়িয়াল এ কথা জানিয়ে বলেন, “শিবলিঙ্গ অন্তত দেড় ফুট বসে গিয়েছে। মন্দিরের কর্মী এবং এনডিআরএফ কেদারনাথের আশপাশের আবর্জনা সরালেও এখনও বহু কাজ বাকি।” তা ছাড়া মন্দিরের বহু কর্মী জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন। তাই নতুন লোক নিয়োগ করতে হবে বলে জানান গোড়িয়াল।
|
চলছে উদ্ধার কাজ। পিণ্ডারিতে। |
নদী পেরোতে সেনার সাহায্য। |
|
কেদারনাথের প্রধান পুরোহিত বাগেশ লিঙ্গ বলছেন, “মন্দিরের চত্বরে দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। তাই শুদ্ধকরণের আগে পুজো হবে না। বিগ্রহটি হেলিকপ্টারে আমরা উখীমঠে নিয়ে এসেছি। সেখানেই সে’টি থাকবে। শুদ্ধির পরে মন্দিরে শিবলিঙ্গের পুজো হবে।”
সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা, আইটিবিপি এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) মিলিত ভাবে উদ্ধার কাজ অনেকটাই গুটিয়ে আনতে পেরেছে বলে দাবি করেছেন জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল চৈত। ‘অপারেশন সূর্য হোপ’ নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই শেষ হবে বলে মনে করছেন তিনি। এনডিএমএ-র ভাইস চেয়ারম্যান এম শশীধর বলেন, উদ্ধার কাজ শুক্রবারই শেষ হবে। অথচ দেহরাদূনে রাজ্যের মুখ্যসচিব সুভাষ কুমার জানিয়েছেন, তিন হাজার পুণ্যার্থী এখনও নিখোঁজ।
উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে আসছে শুনে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। স্বজনহারা মানুষ জানেন না, কী ভাবে কোথা থেকে খুঁজে পাওয়া যাবে প্রিয়জনদের। রাজস্থান থেকে আসা এক পর্যটক স্বজন হারানোর দুঃখে হৃষীকেশে সরকারি ত্রাণ শিবিরে ঢুকে ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দেন। সংবাদমাধ্যমের লোকজনের সঙ্গেও হাতাহাতি হয় তাঁর। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘নিখোঁজদের ব্যাপারে তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এত লোক নিখোঁজ, তা-ও উদ্ধার কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
|
আহতকে সাহায্য সেনার। |
উদ্ধারকাজ আর গণ-শেষকৃত্যের মধ্যেই উত্তরাখণ্ডের বাতাসে মড়কের গুঞ্জন। বানভাসি এলাকা থেকে এখনও কোনও জলবাহিত রোগ ছড়ায়নি
বলে সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও মড়ক নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। কেদারনাথে গণ-দাহের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। তবে আবহাওয়ার অবনতি হওয়ায় বদ্রীনাথে পর্যটকদের আকাশ পথে উদ্ধারের কাজ ব্যাহত হয়েছে। মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে। বদ্রীনাথের ত্রাণশিবির থেকে জোশীমঠে নিয়ে আসা হচ্ছে লোকজনকে। ৪৩ কিলোমিটারের
এই দূরত্বের ১৩ কিলোমিটার পাঁচশো পর্যটককে সেনারা হাঁটাপথে
নিয়ে আসে। বাকি পথ গাড়িতে। হাঁটাপথে মানুষকে ভরসা জোগাতে সামিল হন লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল চৈতও।কেদারনাথে যাঁর তত্ত্বাবধানে গণ-দাহের কাজ চলছে সেই ডিআইজি সঞ্জয় গুঞ্জাল বলেছেন, “এখনও পর্যন্ত ১৮টি দেহ দাহ করা হয়েছে। এর পরের ধাপে মৃতদেহ শনাক্তকরণ, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, এবং ময়নাতদন্তের পরে আবার গণচিতা তৈরি হবে।” তার জন্য চিকিৎসক, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশের দ্বিতীয় একটি দল আবার কেদারনাথে রওনা দিয়েছে। হরশিল এলাকা
থেকে ৫১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের নিরগঞ্জ গ্রামের কাছে গঙ্গায় ভেসে এসেছে আরও দু’টি দেহ। |
জলের তলায় বিষ্ণুপ্রয়াগের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। |
কিন্তু হরশিল এবং বদ্রীনাথ মিলিয়ে এখনও আটকে রয়েছেন অন্তত আড়াই হাজার মানুষ। ৪০টি চপারে পৌঁছনো হয়েছে ত্রাণসামগ্রী। তবুও খাবার না পাওয়ার অভিযোগ আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। বানভাসি গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ ও জল নেই। দেহরাদূনে সহস্ত্রধারা হেলিপ্যাডে
আজ শুরুতে বৃষ্টির জন্য উদ্ধার
কাজ ব্যাহত হলেও পরে তিনটি চপার রওনা দেয় দুর্গত এলাকায়। সরকারের এখন মূল চিন্তা ত্রাণ পৌঁছনো
এবং পুনর্বাসন নিয়ে। উত্তরকাশী, চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ এবং গঢ়বালে অন্তত ১৬ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত। দেহরাদূনে ফাটা-র দু’কিলোমিটার আগে খাট গ্রামে মানুষ বেশ কয়েক দিন ধরে খাবার পাচ্ছেন না। এই গ্রামমুখী সব ক’টি রাস্তা হয় বন্ধ,
নয় বিচ্ছিন্ন।
জগন্নাথ সিংহ নামে এক গ্রামবাসী বলেছেন, “ঘরে থাকা আটা দিয়ে এত দিন চলছিল। এ বার চাপাটিও হবে না।” |
হেলিকপ্টারের প্রতীক্ষায়। বৃহস্পতিবার গোচরে। |
ছবি: পিটিআই, এপি |
পুরনো খবর: গ্রাম ভেসেছে পানিগোলায়, গরুর ছাউনিই ভরসা |
|