|
|
|
|
খুনের পিছনে কি ত্রিকোণ প্রেম, তদন্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বৌবাজারের যুবক মনোজেশ পাসোয়ান খুনের ঘটনায় ত্রিকোণ প্রেমের দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার খুনের মূল অভিযুক্ত ভূপিন্দর যাদবকে গ্রেফতার করার পরে এমনই দাবি তদন্তকারীদের। তবে মনোজেশ খুনের নৃশসংতাই চমকে দিয়েছে পুলিশকে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ছাতাওয়ালা গলির বাসিন্দা এক কিশোরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল মনোজেশের। নিজের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ওই কিশোরীর উপরে নজর ছিল ভূপিন্দরেরও। এক পুলিশকর্তা জানান, মনোজেশ, ভূপিন্দর এবং ওই কিশোরীর ত্রিকোণ প্রেমের দ্বন্দ্বেই এই নৃশংস খুনের ঘটনা।
পুলিশ জানায়, ১৫ জুন বৌবাজার থানার ছাতাওয়ালা গলির বাসিন্দা উদেশ পাসোয়ান তাঁর ভাই মনোজেশের নিখোঁজ ডায়েরি করান। চার দিন ধরে ভাইয়ের খোঁজ না মেলায় ১৯ তারিখ অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন উদেশ। তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর ভাই পোলক স্ট্রিটের বাসিন্দা ভূপিন্দরের সঙ্গে বেরিয়েছিল। ভূপিন্দরও ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। এর পরেই বৌবাজার থানার পুলিশ তদন্তে নামে। ট্রাফিক বিভাগে খোঁজ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ১৬ জুন ধাপা-দুর্গাপুর রোডে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। প্রগতি ময়দান থানা সেটিকে পথ দুর্ঘটনা বলে চিহ্নিত করে দেহটি মর্গে পাঠিয়েছে। এর পরে গত মঙ্গলবার বৌবাজার থানার পুলিশ মনোজেশের পরিবারকে মর্গে নিয়ে দেহ শনাক্ত করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মনোজেশের সারা দেহ কাদা মাখা ছিল। গায়ের চামড়া উঠে গিয়েছিল। তাতেই সন্দেহ হয় বৌবাজার থানার অফিসারদের। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “পথ দুর্ঘটনায় সাধারণত হাড়গোড় ভাঙা থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা ছিল না। বরং ঘাড় ভাঙা ছিল। গলাতেও আঘাত ছিল।” এর পরেই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ফের পরীক্ষা করানো হয় এবং তাতেই জানা যায়, খুন করা হয়েছে ওই যুবককে। তদন্তকারীরা জানান, মনোজেশকে খুন করে পথ দুর্ঘটনার চেহারা দিতে চেয়েছিল দুষ্কৃতীরা। কী ভাবে?
ভূপিন্দরকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, বৌবাজার থেকে একটি ছোট ম্যাটাডরে চাপিয়ে মনোজেশকে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মারধর করে তাঁর গলায় স্ক্রু-ড্রাইভার ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পথ দুর্ঘটনার মোড়ক দিতে গাড়ির পিছনে মনোজেশকে বেঁধে কয়েক কিলোমিটার হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। এই সময়ে মৃত্যু হয় মনোজেশের। পরে তাঁর দেহটি ধাপা-দুর্গাপুর রোডের ধারে ফেলে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
লালবাজার সূত্রের খবর, প্রগতি ময়দান পথ দুর্ঘটনার মামলা দায়ের করলেও ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বৌবাজার থানাকে খুনের মামলা রুজু করতে নির্দেশ দেন। বৌবাজার থানার ওসি মনোজ দাস এবং দুই সাব-ইনস্পেক্টর দেবাশিস দত্ত ও সুদীপ্ত ঘোষের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল তৈরি হয়। তদন্তে নেমে জানা যায়, ১৫ তারিখ রাতেই পেশায় গাড়িচালক ভূপিন্দর কলকাতা ছেড়ে চম্পট দেয়। এর পরেই ফোনের টাওয়ারের অবস্থান ও সোর্স মারফত খবর নিতে থাকে পুলিশ। এক পুলিশকর্তা জানান, পকেটে চাপ পড়তেই বুধবার বিকেলে শহরে আসে ভূপিন্দর। ফের পালানোর সময়ে ফেয়ারলি প্লেসের কাছ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত গাড়ি ও অস্ত্রও। বৃহস্পতিবার ধৃতকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত দেন। ভূপিন্দরের সহযোগীদের খুঁজছে পুলিশ।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, গোটা ঘটনায় পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়েও। পুলিশের একাংশ বলছে, একটি দেহ উদ্ধারের পরে প্রগতি ময়দান থানা যে ভাবে পথ দুর্ঘটনা বলে ঘটনাটিকে চিহ্নিত করেছিল, তাতে খুনের ঘটনাটি চাপা পড়ে যাচ্ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, অনেক সময়েই দেহ উদ্ধারের সপ্তাহ খানেক পরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটলে, এমন নৃশংস খুনের ঘটনা সামনেই আসত না।
|
পুরনো খবর: নিখোঁজের মৃত্যু, প্রশ্ন পুলিশের সমন্বয় নিয়ে |
|
|
|
|
|