লেনদেন ঘাটতি কমলেও কাটেনি দুশ্চিন্তা
কিছুটা ঘুরে দাঁড়াল টাকা, শেয়ার বাজার
সাময়িক স্বস্তি! না কি আরও খারাপ পরিস্থিতি! টাকা ও শেয়ার বাজার বৃহস্পতিবার কিছুটা চাঙ্গা হওয়া সত্ত্বেও এই মুহূর্তে এটাই দুশ্চিন্তা বিশেষজ্ঞদের।
এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জানানো তথ্য অনুসারে কমেছে চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি। তার জেরেই অর্থনীতির হাল ফেরার আশায় বৃহস্পতিবার ঘুরে দাঁড়াল টাকা। একই কারণে লগ্নির খরা কিছুটা কাটল শেয়ার বাজারেও। ডলারে টাকা বাড়ল ৫৩ পয়সা। গত ১৫ দিনে টাকা এত বেশি বাড়েনি। সেনসেক্সও এক ধাক্কায় বেড়েছে ৩২৪ পয়েন্ট। লগ্নিকারীদের সম্পদ একদিনেই বাড়ল ১ লক্ষ কোটি টাকা। গত কাল টাকার দাম ষাটেরও বাঁধ ভেঙে নীচে নেমে গিয়েছিল। প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছিল ৬০.৭২ টাকা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ইতিবাচক তথ্য আসার পরেই আজ ডলারে টাকার দাম ৬০.১৯-এ পৌঁছেছে।
অথচ, শেয়ার বাজার বা টাকার দাম আর কত পড়বে? মুম্বইয়ের দালাল স্ট্রিট কিংবা দিল্লির নর্থ ব্লকের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই প্রশ্ন এখন হেঁসেলের আলোচনাতেও ঢুকে পড়েছে। কিন্তু অর্থনীতির নীতি নির্ধারকরাই এখনও এর উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি (বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের ফারাক) ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) ৩.৬ শতাংশে নেমে এসছে। যা এ দিন আশার আলো দেখিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ও শেয়ার বাজারকে। অক্টোবর-ডিসেম্বরে তা নজির গড়ে ছুঁয়েছিল জাতীয় আয়ের ৬.৭%। গোটা অর্থবর্ষের জন্য ওই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪.৮%। সেটাও আশঙ্কার তুলনায় কম বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তেল ও সোনা ছাড়া অন্যান্য পণ্য আমদানি কমার প্রভাবেই ওই ঘাটতিতে রাশ টানা সম্ভব হয়েছে। টাকার পতন রোখার যুদ্ধে নামা সরকারকে এই তথ্য সাময়িক স্বস্তি দিলেও প্রশ্ন হল, এখানেই কি থেমে থাকবে টাকা? না কি আরও অতলে ঝাঁপ দেবে? অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশই কিন্তু পরের ভয়টাই পাচ্ছেন। কারণ, ডলারে টাকা এখনও ৬০-এর নীচে। অনেকেরই মত, আগামী ৭ দিনে টাকা আরও নামতে নামতে ৬২-৬৩-তে গিয়েও পৌঁছতে পারে। টাকা পড়লে যাদের সবথেকে লাভবান হওয়ার কথা, সেই রফতানিকারীদের মুখেও হাসি নেই। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্টস অর্গানাইজেশন (ফিও)-এর সভাপতি রফিক আহমেদের আশঙ্কা, টাকা আরও পড়বে। তাঁর যুক্তি, “টাকা স্থিতিশীল হওয়া প্রয়োজন। না-হলে আন্তর্জাতিক বাজারে কেউই ব্যবসায়িক লেনদেন চূড়ান্ত করতে চাইছে না।”
আমজনতার মনে কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের মতো এত বড় দেশের অর্থনীতি কেন এই ভাবে আমেরিকার উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকবে? বিজেপির প্রশ্ন, মনমোহন-চিদম্বরম-অহলুওয়ালিয়ারা করছেনটা কী? নরেন্দ্র মোদী কটাক্ষ করছেন, “ইউপিএ-র সঙ্গে টাকার যেন ইজ্জতের লড়াই চলছে, কার কত দ্রুত পতন হয়!” অন্য বিরোধীদের অভিযোগ, এ হল সরকারের নীতিপঙ্গুত্বের ফল।
ব্যাঙ্ক তথা শিল্প মহলও মনে করছে, টাকার পতনের পিছনে কারণ বাইরের হলেও সমাধান লুকোনো রয়েছে ঘরেই। টাকাকে শক্তিশালী করার একমাত্র উপায়, যে-সব প্রকল্প আটকে রয়েছে, সেগুলিকে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া এবং কাজ শেষ করা। তা হলেই শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের মনে আস্থা ফিরবে। বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিও ভারতের বাজারে ফিরবে। কারণ টাকার পতনের অন্যতম কারণ, বিদেশিদের ভারতীয় শেয়ার বাজার থেকে লগ্নি তুলে নেওয়া। যাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে মার্কিন অর্থনীতির হাল ফেরার আশায় বিশ্ব বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির হাত ধরে চাঙ্গা হয়ে ওঠা ডলারও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি ঋণের উপর এ দেশের নির্ভরশীলতাও অন্যতম চিন্তার কারণ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে এই ঋণ ১২.৯% বেড়ে ৩৯ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। স্বল্পমেয়াদি ঋণও বেড়েছে। ২০০৮-এর বিশ্ব মন্দার সময় থেকেই এই ঋণ ঊর্ধ্বমুখী। যা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় অর্থনীতিবিদরা। অর্থ মন্ত্রক অবশ্য বোঝানোর চেষ্টা করছে, লেনদেন ঘাটতি যতটা খারাপ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। ৫ শতাংশের নীচেই রয়েছে। গত কাল টাকার পতনের সময়ে ডলার বিক্রি করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। আজ অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অন্য কৌশল নেয়। রীতি অনুযায়ী, জুন মাসের শেষ কাজের দিনে বিকেল ৫টায় লেনদেন ঘাটতি সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, যখন বাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। সেই অনুযায়ী শুক্রবার এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আজই তথ্য প্রকাশ করে দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর সেই তথ্যে ভর করেই সামান্য উন্নতি হয় টাকার দামে।
অর্থনীতিবিদরা অবশ্য মনে করছেন, সরকার যা-ই বোঝানোর চেষ্টা করুক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-কৌশলই নিক, ডলারের চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকাটাই টাকার দামের মূল নির্ধারক শক্তি হয়ে উঠবে। আর ডলারের চাহিদা যেহেতু বাড়ছে, তাই এর ধাক্কায় টাকার দাম আরও পড়তে বাধ্য।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.