অবস্থার উন্নতি ম্যান্ডেলার
পর্যটক আর সাংবাদিকের ভিড়ে মুনাফা লুটছে প্রিটোরিয়া
নিঃশব্দ প্রার্থনা আর হাজার ফ্ল্যাশ বাল্বের ঝলকানি। প্রিটোরিয়ার রাস্তায় এখন এই দু’য়ের সহাবস্থান।
মেডিক্লিনিক হার্ট হসপিটালের সামনে বাড়ছে হিতৈষীদের জটলা। আবার খবর সংগ্রহের তাগিদে ভিড় জমিয়েছেন দেশ বিদেশের অগুনতি সাংবাদিক-চিত্রগ্রাহকও। প্রত্যেকেরই এক প্রশ্ন, বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী মানুষটা এ বারের মতো যুদ্ধটা জিতে যাবেন তো?
লড়াইটা অবশ্য এক দিনের নয়। ডিসেম্বর থেকে একাধিক বার ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। গত ৮ জুনও একই সমস্যার জেরে ফের হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তার পর কেটে গিয়েছে বেশ ক’টা দিন। কখনও খবর এসেছে, অবস্থা আশঙ্কাজনক। কখনও খবর এসেছে তিনি আশঙ্কাজনক হলেও স্থিতিশীল। সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, আগের থেকে অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে ৯৪ বছর বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের।
এই উনিশ দিনে প্রিটোরিয়ার রাস্তায় ভিড় কমেনি একটুও। যা উস্কে দিতে পারে ১৯৯৭-এর কলকাতার স্মৃতি। ৫ সেপ্টেম্বর মারা গিয়েছিলেন মাদার টেরিজা। আর সারা পৃথিবীর মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন মহানগরীতে।
মেডিক্লিনিক হার্ট হসপিটালের সামনের চত্বরের দখল নিয়েছে স্যাটেলাইট ডিশ, ওবি ভ্যান, ক্যামেরা। সাংবাদিক-চিত্রগ্রাহকরা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে। নিরাপত্তা রক্ষীদের নজর এড়িয়ে যদি বা হাসপাতালে ঢোকা সম্ভব হয়, এই সব সাংবাদিকের চোখ এড়ানো অসম্ভব।
হাসপাতালের সামনে ম্যান্ডেলার আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা। ছবি: রয়টার্স।
বিদেশি সংবাদমাধ্যমের এ হেন আগমণে খুশি প্রিটোরিয়ার সাধারণ মানুষ। হাসপাতালের কাছেই অনেকগুলো ছোট ছোট আবাসনের সারি। সেই সব আবাসনের বাসিন্দারা চড়া দামে ভাড়া দিচ্ছেন তাঁদের বাড়ির বারান্দা। যেখানে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের মূল ফটকের উপর দিব্যি নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা। কেউ কেউ বাড়ির বাথরুমও ভাড়া দিচ্ছেন। ফুটপাথের ধারে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে খাবারের স্টল। বছর তিরিশের জেন মারুটেল রাস্তার ধারে খাবার বিক্রি করে এই ক’দিনে বেশ মোটা লাভ করে ফেলেছেন।
বিদেশি রিপোর্টারের দিকে ধেয়ে এসেছে বাইক-আরোহীর প্রশ্ন, “আপনারা এখানে কেন? তিনি তো এখনও জীবিত।” ১০ জুন ম্যান্ডেলার প্রাক্তন স্ত্রী উইনির ছবি তোলার জন্য এক চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরা ভেঙে দেন হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও বিদেশি সংবাদমাধ্যমের এই বাড়াবাড়ির সমালোচনা করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বহু মানুষ। ‘শকুনের’ তকমাও দেওয়া হয়েছে এই সব সাংবাদিককে।
ভিড় জমেছে ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের ছোট্ট গ্রাম ‘কুনু’তেও। এখানেই শৈশব কেটেছে ম্যান্ডেলার। গ্রামে অগুনতি পর্যটক। ম্যান্ডেলার বাড়ি দেখতে এসেছেন তাঁরা। ‘গাইড’ বলতে গ্রামেরই এক দল খুদে। ম্যান্ডেলার প্রতিবেশীরা অবশ্য ধরেই নিয়েছেন, আর বোধহয় দেখা হবে না মাদিবার (ম্যান্ডেলার গোষ্ঠীনাম) সঙ্গে। তাই ঘরে ঘরে জ্বলছে মোমবাতি, শোনা যাচ্ছে প্রার্থনার সুর। এমনকী মাটি খুঁড়তেও শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের ধারণা, এখানেই সমাহিত হবেন ম্যান্ডেলা।
বুধবার রাতে প্রাক্তনকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। তার পরই বৃহস্পতিবার মোজাম্বিক যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে ডেকে পাঠানো হয় ম্যান্ডেলার পরিবারকেও। তবে বৃহস্পতিবার জুমা জানিয়েছেন, আগের থেকে ভাল আছেন ম্যান্ডেলা। ম্যান্ডেলার বড় মেয়ে মাকাজিউইও বলেন, ডাকলে সাড়া দিচ্ছেন আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। চোখ খোলার চেষ্টাও নাকি করছেন।
তবু আশঙ্কার মেঘ কাটছে না।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.