অ্যাকাউন্টের টাকা তোলা হয়েছে এটিএমের মাধ্যমে। অথচ গ্রাহক তা জানেন না। এরকম ঘটনা ঘটছে কুলটির চিনাকুড়ি ও রাধানগর এলাকার চার জন গ্রাহকের সঙ্গে। তাঁরা প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চিনাকুড়ি ও রাধানগর শাখার গ্রাহক। এই ঘটনায় ওই শাখার অন্যান্য গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এই নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে সেখান থেকে পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ নিয়ে তা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে তদন্তের আবেদন করলেই পুলিশ তা নিয়ে তদন্ত করতে পারে। দু’পক্ষের টানাপোড়েনে কার্যত কোথায় অভিযোগ করবেন, তা নিয়ে ধন্দে গ্রাহকেরা। দিন কয়েক আগে ব্যাঙ্কটির চিনাকুড়ি শাখায় বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। এই অবস্থায় আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতরে গ্রাহকদের অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
সম্প্রতি চিনাকুড়ি ও রাধানগর এলাকায় চার জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে এই ভাবে টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। চিনাকুড়ির বাসিন্দা ইসিএল কর্মী বালিরাম পাসোয়ান জানান, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চিনাকুড়ি শাখায় তাঁর একটি স্যালারি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। মাস খানেক আগে মেয়ের চিকিত্সার জন্য টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন, অ্যাকাউন্টে মাত্র ৯২৭ টাকা পড়ে রয়েছে। তাঁর দাবি, অ্যাকাউন্টে প্রায় এক লক্ষ টাকা ছিল। ওই ব্যাঙ্কেরই গ্রাহক চিনাকুড়ির অপর এক বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী সোমনাথ দত্তর অভিযোগ, তাঁর অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ছিল। তিনিও মাস খানেক আগে টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন, অ্যাকাউন্টে মাত্র ৪ টাকা ৭৫ পয়সা পড়ে আছে। অপর এক গ্রাহক মাধবী মাহাতোরও অভিযোগ, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকেও কয়েকশো টাকা তোলা হয়েছে। দিন পাঁচেক আগে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রাধানগর শাখার গ্রাহক, স্থানীয় পরিবহণ ব্যবসায়ী পঙ্কজ সিংহও অভিযোগ করেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রায় দেড় লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। সব ক্ষেত্রেই গ্রাহকেরা সংশ্লিষ্ট শাখার আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জমা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জমা না নিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বালিরামবাবু, সোমনাথবাবুদের দাবি, “শাখার আধিকারিকের কাছে মৌখিক অভিযোগ জানানোর পর তিনি বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য দিন কয়েক সময় চান। আমরা দিন সাতেক পরে ফের তাঁর কাছে গেলে তিনি জানিয়ে দেন, এই টাকাগুলি এটিএম থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের কিছু করার নেই।” রাধানগর শাখার গ্রাহক পরিবহণ ব্যবসায়ী পঙ্কজ সিংহ বলেন, “আমাকেও অভিযোগ না নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।”
ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চিনাকুড়ি শাখার আধিকারিক অসিত কুমার রায় বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে ব্যাঙ্কের কোনও রকম সম্পর্ক নেই। এটা এক ধরনের সাইবার ক্রাইম। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে। তাঁরাই এই ঘটনার তদন্ত করবে। আমাদের কিছু করার নেই।” অন্য দিকে, পুলিশের বক্তব্য, প্রথমে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ নেওয়ার কথা। তারপর সেই অভিযোগ পুলিশের কাছে পাঠিয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তদন্তের অনুরোধ করলে তদন্তে নামবে তারা। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের বক্তব্য, এটা নিছক কেপমারির ঘটনা নয়। ব্যাঙ্কের অনলাইন জালিয়াতির জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দায় অস্বীকার করতে পারে না।
ব্যাঙ্ক ও পুলিশের এই টানাপোড়েনে সমস্যায় পড়ছেন গ্রাহকেরা। কী করনীয়, তা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। তবে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বিস্তারিত খোঁজখবর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। |