তারা বাজি |
ওঁরা বৃষ্টিতে ভিজেছিল |
কেউ পাড়ি দেন প্রেমিকার সঙ্গে লম্বা পথ। কেউ বা শোনেন কবীর সুমনের গান তাঁর সামনে বসে।
একটানা
বৃষ্টি মানেই একটা অন্য রকম মাদকতা।
সেলিব্রিটিদের
বর্ষাযাপনের গল্প শুনলেন
সংযুক্তা বসু |
হাঁটুজল রাস্তায় উদ্দাম নাচ |
আমার বৃষ্টি: আমার কাছে সব চেয়ে মিস্টিক ঋ
তু বর্ষা। অন্য ঋ
তুগুলো কখন আসে যায় বোঝা যায় না। বর্ষাটা বেশ বোঝা যায়। আমাদের গোখেল কলেজের সামনে বৃষ্টি
|
কোয়েল মল্লিক |
হলে প্রচুর জল জমত। তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। বৃষ্টির দিনে কলেজে যাওয়ার সময় কোনও মতে গা বাঁচিয়ে ক্লাসে ঢুকে যেতাম। কিন্তু বেরোবার সময় হইহই কাণ্ড। রাস্তায় হাঁটু জল, হয়তো ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। আমরা বন্ধুরা মিলে ভিজতে ভিজতে উদ্দাম নাচ শুরু করতাম। রাস্তার লোকে হাঁ করে আমাদের কাণ্ডকারখানা দেখত। অনেক সময় জলে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দিতাম। বৃষ্টি আমার অভিনীত ছবি ‘প্রেমের কাহিনি’তে অসাধারণ রূপ পেয়েছিল। গানও খুব হিট করেছিল। ‘রিমঝিম এ ধারাতে/ চায় মন হারাতে...’ বর্ষার সঙ্গে আমার স্বামী নিসপালের একটা ওতোপ্রত সম্পর্ক আছে। যখনই ওর প্রোডাকশনের শ্যুটিং থাকে কোনও না কোনও দিন বৃষ্টি হবেই। এ বার ব্যাংককে শ্যুটিং করতে গিয়েও একই দশা। ঝাঁ চকচকে আকাশ। রোদ উঠেছে ঝলমলে। কিন্তু শ্যুটিং শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টি নামল। তখন একটা স্টান্ট সিন শু্যট করার কথা। বৃষ্টির মধ্যে ওই রকম ঝুঁকির দৃশ্যের শ্যুটিং হওয়া অসম্ভব। বৃষ্টি হওয়া মানে একটা দিন নষ্ট। প্রচুর অর্থ খরচ। কিন্তু রানে দেখি নিশ্চিন্ত মনে বসে আছে। জিজ্ঞেস করাতে বলল, “সব কিছু তার মানে ঠিকঠাক ভাবেই চলছে। বৃষ্টি হচ্ছে তো।” রানে শ্যুটিংয়ের সময় বৃষ্টি হওয়াটাকেই পয়া আর স্বাভাবিক ভাবে যে।
আমার প্রিয় গান: শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা নিশীথ যামিনী রে/
কুঞ্জ পথে সখি ক্যায়সে যাওব অবলা কামিনী রে... |
‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে বর্ষামেদুর মুহূর্ত |
মেরিন ড্রাইভে বৃষ্টিতে |
|
শুভশ্রী |
আমার বৃষ্টি: হিন্দি ছবিতে মুম্বইয়ের বৃষ্টি অনেকবার দেখেছি। বিখ্যাত বৃষ্টি। ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’, ‘তাল’, ‘১৯৪২- এ লভ স্টোরি’ দেখি শুধু বৃষ্টি দেখব বলে। কোনও
দিন ভাবিনি মুম্বইয়ের সেই বিখ্যাত বৃষ্টির সান্নিধ্য আমিও পাব। ‘বস’ ছবির কাজে মুম্বইতে যেতে হয়েছিল এ বার। শুরু হল প্রচণ্ড বৃষ্টি। আমি মেরিন ড্রাইভে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিজেছি। সমুদ্রের ধারে বৃষ্টিতে ভেজার মজাই আলাদা।
আমার প্রিয় গান: রিম ঝিম রিম ঝিম/
রুম ঝুম রুম ঝুম
ভিগি ভিগি রুত মে/তুম হম হম তুম...
|
বর্ষার সঙ্গে মিশে গেল আদিম অনুভূতি |
আমার বৃষ্টি: আমার বয়স তখন উনিশ। প্রেমিকা আঠোরো। মেঘলা দিন। বৃষ্টি নামব নামব, কিন্তু তখনও নামেনি। পুরনো বাড়ির ভেতরে আমরা বসে। বেশ আবেশ ভরা
|
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় |
একটা বুক দুরুদুরু মুহূর্ত। ঘরে একটা পুরনো ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল। দু’জনেই ভাবলাম মেঘমল্লার শুনব। আর তখনই ছাদের ফাটল দিয়ে টুপটাপ জলের ধারা নামল। আমরা গান পাল্টে দিলাম। শুনলাম কবীর সুমনের একটা গান “সেই জলেতে বেদম ভিজে একটা লোক/ মেঘদূতের নাম রেখেছে আহাম্মক’’
আর এক দিনের কথা। সেই প্রেমিকার নাম রেশমী। তার সঙ্গেই আমার বিয়ে হল। বিয়ের পরপর আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম গরুমারা জঙ্গলে। মূর্তি নদীর পার ধরে পায়ে পায়ে হেঁটে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। মূর্তির পারের বাংলোতেই আমাদের থাকার কথা। আমার তখন ছবি তোলার খুব শখ। একের পর এক ছবি তুলছি। এমন সময় বৃষ্টি এল ঝমঝমিয়ে। সেই উথালপাথাল বৃষ্টির মধ্যে দেখলাম মূর্তি নদীর পারে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটা পুরুষ হাতি। আর তাদেরই অদূরে দাঁড়িয়ে একটি মাদী হাতি। বুঝতে পারছিলাম অমন বৃষ্টিতে ওদের নীরব ভাষা বিনিময়। সেদিনটাও খুব রোমান্টিক মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল পৃথিবীর সব প্রাণীরই আদিম অনুভূতির ভাষা এক।
আমার প্রিয় গান: আজি বরিষণ মুখরিত শ্রাবণ রাতি... |
জানালার কাচে বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে |
আমার বৃষ্টি: বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আকাশ কালো করা মেঘলা দিন। কেন জানি না বেশ মন খারাপ। কী করব বুঝতে পারছি না। মনে হল কবীর সুমনের কথা।
|
শ্রীজাত |
ওঁকে ফোন করে বললাম, আপনার বাড়িতে একটু যেতে পারি? খানিকক্ষণ আপনার কাছে বসব। উনি বললেন, “চলে এসো।” দুপুর বেলায় সুমনদার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। উনি কফি বানিয়ে নিয়ে এলেন দু’ কাপ। আমি কফি খাচ্ছি। উনিও চুমুক দিচ্ছেন। কারও মুখে তেমন কথা নেই। মনে হচ্ছিল এই মেঘলা দিনে উনি যদি একটু গান শোনান তো বেশ হয়। কিন্তু সে কথা বলার তো আমার সাহস নেই। হঠাৎই উনি বললেন, “একটু গান গাওয়া যাক।’’ গিটার নিয়ে গাইতে আরম্ভ করলেন আমার একটা প্রিয় গান। ‘জানলার কাচে বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে।’ আর তক্ষুনি চারদিক ঝাপসা হয়ে বৃষ্টি নামল। মনে হল সুমনদার গানেই যেন বৃষ্টি এল। সুমনদা একের পর এক গান গেয়ে চললেন। আর মুষলধারে বৃষ্টি হতে লাগল। চলল বিকেল পর্যন্ত। কবীর সুমন আরও অনেকের মতোই আমার কাছেও স্বপ্নের মানুষ। তাঁর কাছে সারা দুপুর অমন মেঘলা দিনে গান শোনার সুযোগ পাব সত্যি বলছি স্বপ্নেও ভাবিনি।
আমার প্রিয় গান: আমি বৃষ্টি দেখেছি/ বৃষ্টির ছবি এঁকেছি/ আমি রোদে পুড়ে ঘুরে ঘুরে/ অনেক কেঁদেছি... |
মেঘমল্লারে
নামল বৃষ্টি |
আমার বৃষ্টি: তখন এগারো ক্লাসে পড়ি। স্কুলের ভূগোল টিচারকে আমার খুব পছন্দ ছিল। তিনি বেশ সুন্দরী। তাঁকে দেখলে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যেত। সেটা যে কেমন
|
পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায় |
সম্পর্ক, কেমন অনুভূতি ঠিক বলে বোঝাতে পারব না। ভাল লাগা, মুগ্ধতা মিলিয়ে অন্য একটা কিছু যার কোনও সংজ্ঞা নেই।
হয়তো বয়ঃসন্ধির মোহই বলা যায়। ঘটনাটা ঘটল একটা বৃষ্টির দিনেই। প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের ক্যালকাটা বয়েজের বাইরে জলে থইথই। দুপুরে স্কুল ছুটি হওয়ার পর আমরা সবাই আটকে গেলাম স্কুলেই। সেই ম্যাডাম আমাদের বললেন, “তোমরা আমার বাড়ি চলো। বৃষ্টি থামার পর বাড়ি যেয়ো।” আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে গেলাম ওঁর বাড়ি। সারা দুপুর ম্যাডামের বাড়িতে...কী যে একটা অনুভূতি। ম্যাডাম আসছেন, যাচ্ছেন। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে দিচ্ছেন, মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে টুকটাক গল্প করছেন, আর বাইরে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। বিকেলে বৃষ্টি থামার পর মা-বাবারা আমাদের নিতে এলেন। ছোটবেলার বৃষ্টির দিনের কথা ভাবলে এই দিনটা আমার দারুণ মনে পড়ে। আর এক বার ভোপালে গিয়েছিলাম অনুষ্ঠান করতে। খাঁ খাঁ রোদ। সবাই বলছে বৃষ্টি হলে ভাল হয়। অনুষ্ঠান শুরু হল। সেতারে তুললাম মেঘমল্লারের ঝঙ্কার।
কী কাণ্ড! আমার হাতে মেঘমল্লারের সেই মূর্ছনাই কি বৃষ্টি নামিয়ে আনল? উত্তর খুঁজিনি। শুধু বাজিয়ে চলে ছিলাম। আর অডিটোরিয়ামে বসেও শুনতে পাচ্ছিলাম বাইরে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ।
আমার প্রিয় গান: রিমঝিম গিরে শাওন/ উলঝ উলঝ যায়ে মন... |
মুষলধারে বৃষ্টিতে শুধু আমরা দু’জন |
আমার বৃষ্টি: আমি তখন ইলেভেনে পড়ি, আর আমার প্রেমিকা স্কুল ফাইনাল দিয়েছে। আমাদের দেখা হত সোমবার। লুকিয়ে লুকিয়ে। সে আমাদের ভাবানীপুরের বাড়ির
|
কৌশিক সেন |
কাছে নাচের ক্লাস করতে আসত সরশুনা থেকে। এই রকমই এক সোমবার নামল অঝোর ধারায় বৃষ্টি। ও তখন নাচের ক্লাসে তালিম নিচ্ছে। ক্লাস শেষ হয়ে গেল একটা সময়। কিন্তু বৃষ্টি থামল না। কোথায় দাঁড়াই, কী ভাবে দুটো কথা বলি! তাই আমরা হাঁটতে শুরু করলাম বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে। লম্বা রাস্তা। আশুতোষ কলেজ থেকে একটানা রাসবিহারী মোড়। বৃষ্টির মধ্যেই কথা বলতে বলতে আমরা যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম। আমরা যে ভিজে জাব্বুস সে দিকে পরোয়া নেই। সে সময় আমাদের দেখা হওয়াটা এত জরুরি ছিল যে বৃষ্টি পড়ছে মনেই হচ্ছিল না। বর্ষা মোটেই আমার প্রিয় ঋতু নয়। বেশ ডিপ্রেসড লাগে। তবুও বৃষ্টির দিনে দু’জনের সেই বাঁধ ভাঙা হাঁটার দৃশ্যটা মনে পড়ে। শেষমেশ সেই প্রেমিকার সঙ্গেই আমার বিয়ে হয়। আমাদের ক্লাস টেনে পড়া ছেলেকে সেই বৃষ্টির গল্পটা করায় সে আমাদের সঙ্গে খুব ঠাট্টা করে।
আমার প্রিয় গান: ওগো বর্ষা তুমি ঝোরো না গো অমন করে... |
দোতলা বাসে চেপে কলকাতা দেখা |
|
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় |
আমার বৃষ্টি: ছেলেবেলায় যখন রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়িতে থাকতাম, বর্ষা দারুণ এনজয় করতাম। রাস্তাঘাট বর্ষা হলেই জলে ডুবে যেত। আরেকটা মজাও খুব হত।
সাদার্ন অ্যাভিনিউ ধরে আমরা চলে যেতাম গোলপার্কে। গোল পার্ক থেকে সেই সময় দোতলা বাস এল নাইন ছাড়ত। বর্ষাকালে আমরা বন্ধুরা মিলে এল নাইনের দোতলায় উঠে সামনের দিকের সিটে বসে পড়তাম। জলে ভাসা কলকাতা দেখতে নানা পথ ঘুরে চলে যেতাম ডানলপ। তার পর ডানলপ থেকে আর একটা এল নাইন ধরে ফিরে আসতাম গোলপার্ক। এটা ছিল আমাদের মনসুন ট্রিপ।
আমার প্রিয় গান: এমন দিনে তারে বলা যায়/এমন ঘনঘোর বরিষায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায়... |
বৃষ্টিতে ভিজে আমিই শ্রীদেবী |
|
তনুশ্রী চক্রবর্তী |
আমার বৃষ্টি: বৃষ্টি পড়লেই নিজেকে শ্রীদেবী মনে হয়। সাদা শাড়ি পরে লম্বা চুল খুলে বৃষ্টিতে ভিজছি বা নাচছি। মনে পড়ে ‘চাঁদনী’ ছবির সেই দৃশ্যটা। আর একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে। এক বার একটা বিজ্ঞাপনী ছবির শ্যুটিংয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ। অনেক দিন শ্যুট করার পর ফিরে আসছি। শুনতে পেয়েছি কলকাতায় খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধে ছ’টার সময় আমাদের প্লেনটা বাংলাদেশ থেকে উড়ল। কিন্তু সাড়ে ছ’টায় দমদমে নামতে পারল না।
প্লেন এয়াপোর্টের ওপর চক্কর কাটতে লাগল। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে তখন। প্লেনে ঘোষণা করা হল খারাপ আবহাওয়ার জন্য প্লেন ল্যান্ড করতে না পেরে বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছে।
রাত দশটার সময় আবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে প্লেন ছাড়ল।
আমার প্রিয় গান: পর্বতসে কালিঘাটা টকরাই/ পানি মে ইয়ে ক্যায়সা আগ লগায়ি... |
|