ফের আশ্বাস হিসেবেই ঝুলে থাকল বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তালুকের সমাধানসূত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচন না-হওয়া পর্যন্ত দূষণমুক্ত হওয়ার আশা দেখছে না ১২০ একরের কলকাতা আই টি পার্ক। দূষণের জেরে যে বানতলা চর্মনগরীর লাগোয়া তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের নাভিশ্বাস উঠছে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরেও সে তথ্য অজানা নয়। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট শেষ হওয়ার পরেই রাজ্য কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে, তার আগে নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করার পরে এই আশ্বাসের বেশি কিছু পাননি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
দূষণের ভুত বানতলা চর্মনগরীর লাগোয়া তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পকে প্রথম দিন থেকেই তাড়া করে ফিরেছে। বছর দুয়েক আগে বিকল্প ব্যবস্থাও করেছে বানতলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিভিন্ন সংস্থা। লগ্নি বাঁচানোর স্বার্থে সংস্থাগুলি বর্জ্য নিকাশি নালা পৃথক করে নেয় নিজেদের খরচেই, যাতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রকল্পে ঢুকে না-পড়ে চর্মনগরীর বর্জ্য। নিয়মিত পাম্প চালিয়ে এই ব্যবস্থা টিঁকিয়ে রাখার বাৎসরিক খরচও কম নয়।
কিন্তু এ সব মেনে নিয়েও সুরাহা হচ্ছে না বলে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির দাবি। তাদের অভিযোগ, এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বর্জ্য পরিশোধন না-করে সরাসরি বর্জ্য ফেলা হচ্ছে চর্মনগরী থেকে। ফলে সেখানকার নালা উপচে বর্জ্য ঢুকে পড়ছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তালুকে। আর এ সবই হচ্ছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের ক্ষোভ, প্রশাসন কড়া হলে সমস্যা এত দূর গড়াত না।
এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে ১৮টি সংস্থা জমি নিয়েছে। বাজার দরেই এখানে জমি কিনেছে কগনিজ্যান্ট, টেক মহীন্দ্রা ও আইগেট পাটনির মতো সংস্থা। ৪০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে তৈরি হয়েছে কগনিজ্যান্টের ক্যাম্পাস। সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ, দূষণের জেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সংস্থার আন্তর্জাতিক মানের তথ্য কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি। ক্যাম্পাস রক্ষণাবেক্ষণের খরচও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
মাস খানেক আগেই শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, নিয়ম ভেঙে যে-সব কারখানা চলছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু খোদ মন্ত্রীর হুশিয়ারির পরেও কাজের কাজ হয়নি।
এর আগেও নির্বাচনের জেরে একাধিকবার এই তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ আটকে গিয়েছে। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচন ও ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ডামাডোলে আটকে যায় এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের জন্য ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’ গড়ার কাজ। সেক্টর ফাইভের নব দিগন্তের ধাঁচে সেই অথরিটি তৈরির সিদ্ধান্ত বহুদিন ধরেই ধামাচাপা পড়ে রয়েছে। বানতলার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি স্বস্তির নিশ্বাস নিতে আপাতত অবশ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হওয়ার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। |