অবাধে চলছে ভেড়ি, ইটভাটা, বিপন্ন সুন্দরবনের সমস্ত নদী
কদিকে নদীর বাঁধ কেটে অবৈধ মাছের ভেড়ি তৈরি হচ্ছে। অন্য দিকে নদীর পাড় ঘেঁষে গজিয়ে উঠছে অগণিত ইটভাটা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেও আজ নদী কূল ছাপিয়ে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপট, আর প্রশাসনের উদাসীনতার জেরে সুন্দরবনের হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন আজ বিপন্ন।
প্রায় সব নদীর বাঁধ কাটা হচ্ছে ৩০-১০০ ফুট লম্বা করে। বাঁধের নীচ থেকে বড় বড় সুড়ঙ্গ করে জোয়ারের জল ঢোকানো হয় ভেড়িতে। এর ফলে এক দিকে যেমন চাষের জমি নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বাঁধ ভাঙার প্রবণতাও বাড়ছে। আবার কাটা বাঁধের অংশের নীচ থেকে ইটভাটার মালিকরা ৩৫ - ৭৫ ফুট গভীর খাল কাঠে। সেখানে জোয়ারে নীদর জল ঢোকে, ভাটার সময়ে পলি ফেলে রেখে জল বেরিয়ে যায়, সহজেই ভাটা মালিকরা পেয়ে যাচ্ছেন ইট তৈরির কাঁচা মাল। কিন্তু নদী হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক গতিপথ। এখানে-ওখানে ধাক্কা খেয়ে তার নিজস্ব গতি হারিয়ে ফেলছে। কখনও আবার বাঁধ কেটে ফেলে জল ঢোকানো হচ্ছে চাষের জমিতে।
ভরা কোটালে জলমগ্ন বসিরহাটের বালিঘাট এলাকা। ছবি: নির্মল বসু।
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও বিশ্বজিৎ বসু জানালেন, মাস কয়েক আগে সর্বদল বৈঠক করে যোগেশগঞ্জ এলাকায় কিছু ভেড়ি বন্ধ করা হয়েছে। ইটভাটা বন্ধ করার জন্য বিএলআরও দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ লাগোয়া এলাকায় বিএসএফকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, নদীবাঁধের ভাঙন রুখতে ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ গত বছর সুন্দরবনের কিছু এলাকায় হয়েছিল। কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ হয়েছে কিছু এলাকায়। কিন্তু মিন ধরতে গিয়ে ম্যানগ্রোভ চারার ক্ষতি করেছেন গ্রামবাসীরাই।
সুন্দরবনে নদীর পাড়-ঘেঁষে অনেক জায়গায় বেআইনি নির্মাণ হয়ে চলেছে। বেআইনি নির্মাণে বাধা দিতে গেলে রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন হতে হয় বলে স্বীকার করছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশই। নদীতে আবর্জনা ফেলার ফলেও নদীগর্ভে জলধারণ ক্ষমতা কমছে। সেই সঙ্গে, নদীবাঁধের উপরে বহু মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের অন্যত্র সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা শোনেন না।
সেচ দফতরের আধিকারিক তরুণ চক্রবর্তী জানান, পলি তোলার জন্য ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন প্রচুর টাকা এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। পলি জমে নদীতে যে ভাবে একের পর এক চড়া তৈরি হচ্ছে। এমনকী নৌকো চালানোও কঠিন হয়ে পড়ছে, ব্যবসা মার খাচ্ছে, জানালেন সন্দেশখালি ১ ব্লকের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা মুকুল মোল্লা। এমনকী বিএসএফ-কেও নজরদারির সময়ে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ডাসা নদীর একাংশ ইতিমধ্যেই মজে গিয়েছে। ইছামতী, কালিন্দী, ছোট সাহেবখখালি, রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী নদীও অনেক জায়গায় এই অবস্থা। বড়সড় অংশ জুড়ে চড়া তৈরি হয়েছে। যোগেশগঞ্জের গোমতী নদী তো পুরোপুরিই মজে গিয়েছে।
চিকিৎসক অর্ধেন্দুশেখর মণ্ডল দীর্ঘ দিন ধরে টাকির বাসিন্দা। জানালেন, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীর আগে চেহারাই অন্য রকম ছিল। কিন্তু নাব্যতা কমে যাওয়ায় এখন সামান্য বৃষ্টি বা জলোচ্ছ্বাসেও নদীর দু’কূল ছাপিয়ে আশপাশের এলাকায় জল ঢুকছে। প্রশাসনের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ অর্ধেন্দুবাবুর। তবে নদী বাঁচাতে স্থানীয় মানুষকেও সক্রিয় হতে হবে, মনে করেন তিনি।
সুন্দরবনের নদী বাঁচলে তবেই বাঁচবেন সুন্দরবনের মানুষ এই সরল সত্যটি এ বার বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে।

লেখক হাসনাবাদের পরিবেশকর্মী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.