প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় এক কিশোরীকে ছুরি মেরে খুন করল এক যুবক। স্থানীয় বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে সেই যুবকও শেষ পর্যন্ত একটি স্কুল বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
কোচবিহারের দিনহাটা বুড়িরহাটের খুটামারা এলাকায় সোমবার সকালে নিহত ওই ছাত্রীর নাম নূপুর দাস (১৫)। ওই যুবক পলাশ সেনকে (২৫) নূপুর শনিবার জুতো পেটাও করেছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তারপরে এই দিন সকালে নূপুর সাইকেলে যাচ্ছিল গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে। পলাশ অপেক্ষা করছিল রাস্তার ধারেই। সে নূপুরের রাস্তা আটকে তাকে সাইকেল থেকে নামিয়ে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে। বেলা তখন ৮টা। রাস্তার উপরেই সেই ঘটনা দেখে ছুটে আসেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দেখে তখনকার মতো পালিয়ে যায় পলাশ।
নূপুরের পিছনেই ছিল তার দুই বান্ধবী। তারা আতঙ্কে কাঁপতে শুরু করে। শুরু হয়ে যায় এলাকার বাসিন্দাদের চিৎকার চেঁচামেচি। রক্তাপ্লুত হয়ে রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়া ওই ছাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তারপরেই এলাকা জুড়ে খোঁজ শুরু হয় পলাশের। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা তার বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করে। আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন পলাশের বাবা, মা ও দিদি সহ পরিবারের লো-কজন। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে চলে আসেন নূপুরের পরিবারের লোকজনও। পুলিশও খোঁজ শুরু করে পলাশের। |
ইতিমধ্যে কয়েক জন পলাশকে খুঁজে পান নাজিরহাট হরকুমারী হাইস্কুলের মাঠে। বেলা তখন সাড়ে ন’টা। স্কুলের দরজা সবে খুলেছে। লোকজন দেখে পলাশ ছুটে ঢুকে পড়ে স্কুল ভবনে। তাকে তাড়া করে স্কুলে ঢুকে পড়েন এলাকার অনেক বাসিন্দাও। স্কুল ভবনের তিন
তলার ছাদে গিয়ে কোণঠাসা পলাশ তখন মরিয়া হয়ে ঝাঁপ দেয় নীচে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, আত্মহত্যার চেষ্টাই করেছিল পলাশ। গুরুতর জখম অবস্থায় দিনহাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই কিছু ক্ষণ পরে মৃত্যু হয় তার।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “ছাত্রীটির ছুরি দিয়ে মারা হয়েছে। খুনের মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্ত যুবকটিও আত্মহত্যা করেছে। সে ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
|
নূপুর দাস। |
নবম শ্রেণির ছাত্রী নূপুরের পরিবারের অভিযোগ, মাস দু’য়েক ধরে পলাশ নূপুরকে রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করত। প্রথম দিকে আমল না দিলেও পরে বাড়ির লোকজন মেয়েকে প্রতিবাদ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। নিহত ছাত্রীর মা বীণা দাস বলেন, “মেয়ের মুখে শুনেছিলাম যে, পলাশ ওকে উত্ত্যক্ত করত। প্রথমে থানা পুলিশ করতে চাইনি। মেয়েকেই প্রতিবাদ করতে বলেছিলাম। মেয়ে শনিবার ছেলেটাকে জুতো দিয়ে মারে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য ওকে এমন খেসারত দিতে হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।” মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন পেশায় মাছ ব্যবসায়ী রবি দাস। নূপুরের ছোট বোন ঝুমুর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। নূপুরের মাসি বিভারানি দাস বলেন, “একজনকে পছন্দ না করার দাম জীবন দিয়ে মেটাতে হল মেয়েটাকে।”
পলাশের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরবাড়ি ভাঙচুরের পরে পরিবারের লোকজন কোথায় গিয়েছেন, তা জানাতে পারেননি প্রতিবেশীরা। পলাশের বাবা খগেন সেন কৃষিজীবী। পলাশ মোবাইলের ক্যাশকার্ড বিক্রির ব্যবসা করত। তাদের পরিচিত এক বাসিন্দা হরিশ সেন বলেন, “খগেনবাবু সাদাসিধে মানুষ। ছেলেটা এক বছর আগে কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দোকান খুলেছিল। ও এমন কাণ্ড ঘটাবে ভাবতেই পারছি না।” নাজিরহাটের বাসিন্দা ধনঞ্জয় রায় বলেন, “ছেলেটি ভালই কথাবার্তা বলত। এমন কাজ করবে কল্পনাও করতে পারিনি।”
এ দিন ওই স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবলু ঘোষ বলেন, “এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, ছাত্রছাত্রীরা এ দিন স্কুলেই আসেনি।”
|