রাজ্যের রোগীদের স্বার্থেই সরকারি ডাক্তারদের অন্যত্র যেতে দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টি নিজেদের হাতে রেখেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে চিকিৎসকেরা ভাল কাজের সুযোগ পেলে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে তাঁদের ছেড়ে দিতেই হবে বলে সোমবার রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের দুই মেডিক্যাল কলেজের দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আর্জির ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে।
ভুবনেশ্বরের ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এ উঁচু পদে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সৌরীন ভুঁইয়া এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের ছাড়ছিল না। ‘রিলিজ অর্ডার’ না-পেয়ে তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি মুরারি শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রায় দিয়েছে, ওই দুই চিকিৎসককে ২৭ জুনের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। কারণ ভুবনেশ্বরে তাঁদের কাজে যোগ দিতে হবে ৩০ জুন।
রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা এই রায়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন। কারণ, ডাক্তার, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের আকাল মেটাতে স্বাস্থ্য দফতর ঘোষণা করেছিল, সরকারি চিকিৎসকেরা ভিন্ রাজ্যে কোনও কাজের সুযোগ পেলে তাঁদের না-ও ছাড়া হতে পারে। বিষয়টি পুরোপুরি স্বাস্থ্য দফতরের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করবে। তারা যদি মনে করে ছাড়া যেতে পারে, তা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ছাড় পেতে পারেন। আর স্বাস্থ্য দফতর যদি মনে করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ছাড়া যাবে না, সে-ক্ষেত্রে তাঁদের এ রাজ্যেই কাজ করে যেতে হবে। এ ভাবে ৪০-৪৫ জন চিকিৎসকের স্বেচ্ছাবসরের আবেদন আটকে রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে কাজের ভাল সুযোগ পেয়েও এখনও পর্যন্ত ছাড়পত্র পাননি নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহ।
রাজ্য সরকার এই ধরনের নিয়মবিধি চালু করেছে কেন?
রোগীদের স্বার্থেই যে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে তা পরিষ্কার। তিনি বলেন, “সরকারি ডাক্তারেরা তাঁদের চাকরিজীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর থেকে মাইনে পাবেন। তার পরে একটু অভিজ্ঞতা অর্জন করা মাত্র তাঁরা স্বেচ্ছাবসর নিয়ে সরকার থেকে মোটা টাকা পেয়ে যাবেন এবং আরও বেশি মাইনেতে অন্য রাজ্যে চলে যাবেন, এটা হতে পারে না। এটা স্বার্থপরতা।” এতে রাজ্যের গরিব রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করে রাজ্য সরকার।
কিন্তু উচ্চ আদালতের এ দিনের রায়ের পরে অন্য চিকিৎসকদেরও আর আটকে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক স্বাস্থ্যকর্তার আশঙ্কা, হাইকোর্টের এই রায়ে ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে যাবে। কারণ, যাঁরা এখনও বাইরে যাওয়ার ছাড়পত্র পাননি, তাঁদের অনেকেই হাইকোর্টের এ দিনের রায় দেখিয়ে আবেদন জানাতে শুরু করবেন।
হাইকোর্টের এ দিনের রায়ের পরে কী বলছে রাজ্য সরকার?
স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্তবাবু বলেন, “আমি এখনও কোর্টের রায়ের প্রতিলিপি দেখিনি। তাই কোনও মন্তব্য করব না। আইন নিশ্চয়ই আইনের পথে হাঁটবে। কী হবে, সেটা বলবে ভবিষ্যৎই।” তিনি জানিয়ে দেন, অরুণ সিংহের বিষয়টি একটু অন্য রকম। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। “তাই এই রায় ওঁর পক্ষে কোনও ভাবেই প্রযোজ্য হবে না,” বলেন সুশান্তবাবু।
|
নার্সের গায়ে গরম চা ছোঁড়ার অভিযোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
কর্তব্যরত এক নার্সের গায়ে গরম চা ছুঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক চিকিত্সকের বিরুদ্ধে। সোমবার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের এই ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিত্সকের নাম অজানা বড়াল। চন্দনা ঘোষ নামের ওই নার্স হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিত্সা সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে ওই চিকিত্সকের সঙ্গে হাসপাতালের নার্স চন্দনা ঘোষের তর্ক হয়। সেই সময়ই আচমকা ওই চিকিত্সক চন্দনাদেবীর গায়ে গরম চা ছুঁড়ে দেন। অভিযুক্ত চিকিত্সক অজানা বড়াল বলেন, “চিকিত্সা সংক্রান্ত একটি বিষয়ে আমি চন্দনাদেবীর কথার প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই সময় উনি উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসায় আমার হাত থেকে ভাঁড়ের চা ছিটকে ওঁর গায়ে পড়ে।” যদিও চন্দনাদেবী বলেন, “আমি কোনও ভুল করিনি। অজানাবাবুর কথার প্রতিবাদ করতে উনি আমার গায়ে গরম চা ছঁুড়ে দেন।” সুপার দেবব্রত ঘোষ বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই চিকিত্সকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |