বন্ধ আউটডোর, তবু ‘সাফল্য’
৭ জুন। সকাল সাড়ে ৯টা। কলকাতার নর্থ সাবার্বান হাসপাতালে চারটে আউটডোরের দরজা সবে খুলেছে। স্ত্রীরোগ, ইএনটি, চোখের আউটডোরের দরজা তখনও বন্ধ। বাইরে রোগীদের ভিড়টায় গুঞ্জন শুরু ‘মনে হচ্ছে আজও খুলবে না’। সময় এগোচ্ছে। এক জন ঝাড়ুদার ছাড়া কেউ নেই। সকাল সাড়ে ১০টা। অলস ভঙ্গিতে এসে এক জন জানালেন, ‘আউটডোর খুলবে না।’
এখন কী করবেন মিঞা আলম? কারখানার শ্রমিক, বাড়ি কাশীপুর। বয়স ৫৫ পেরিয়েছে। চোখের সমস্যায় প্রায়ই আসতে হয় এখানে। আউটডোর বন্ধ। ডাক্তারবাবুও এলেন না। ফিরে যাওয়ার আগে মিঞা বললেন, “বড় হাসপাতালে যাওয়ার টাকা নেই। এখানেই আসতে হয়। কোনও দিন অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কোনও দিন ডাক্তারবাবু আসেনই না। অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”
দুপুর ১২টা। ভবানীপুরের রামরিখদাস হরলালকা হাসপাতালে শুধু জেনারেল মেডিসিনের আউটডোরে হাতে গোনা রোগী। বাকি সবক’টি আউটডোর বন্ধ। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, “এই হাসপাতাল তো কিছু দিনের মধ্যে বন্ধই হয়ে যাবে। আগে তিনটি আউটডোর চলত। এখন সব বন্ধ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। ওই একটা আউটডোরই কোনও মতে চলছে।” এক রোগী অতুলপ্রসাদ জানালেন, এই আউটডোরও রোজ খোলে না। রোগীর সংখ্যাও কমছে।
কলকাতার মাঝারি মানের হাসপাতালগুলিতে এটাই দস্তুর— এমন অভিযোগ রয়েইছে। অথচ এই হাসপাতালগুলিই সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনকে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে, তা দেখে তাজ্জব স্বাস্থ্যকর্তারাই! রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যতগুলো ওপিডি খোলার কথা ছিল, সবক’টিই সময়মতো খুলেছে। ওপিডি-তে যত জন চিকিৎসকের ডিউটি ছিল, প্রত্যেকেই তা করেছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নর্থ সাবার্বান ও রামরিখদাস হরলালকা তো বটেই, পাভলভ, লুম্বিনী, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন, অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি-র মতো হাসপাতালগুলিতেও তাদের রিপোর্ট মোতাবেক আউটডোর পরিষেবা একশোয় একশো!
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী মনে করেন, “গোটা ব্যবস্থাটার গোড়াতেই গলদ। হাসপাতালগুলির ওপিডি-তে নজরদারি করতে চিকিৎসক-অচিকিৎসক মিলিয়ে দুই সদস্যের ২০টি দল গড়া হয়েছিল। ঠিক ছিল, তাঁরা ভাগাভাগি করে হাসপাতালগুলির ওপিডিতে আচমকা পরিদর্শন করবেন, রোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন। হাসপাতালের পাঠানো রিপোর্টের সঙ্গে বাস্তবের মিল কতটা খতিয়ে দেখবেন। কিন্তু আট মাস ধরে এই কাজ পুরোপুরি বন্ধ! কারণ, দলের অনেক চিকিৎসক অবসর নিয়েছেন বা বদলি হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের পরিবর্ত পাওয়া যাচ্ছে না।”
সময়মতো (সকাল সাড়ে ৯টা) আউটডোর চালু নিশ্চিত করতে ক্ষমতায় এসেই সরকারি হাসপাতালগুলির জন্য ‘ওপিডি ট্র্যাকিং সিস্টেম’ চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন হাসপাতালে আউটডোর কখন চালু হচ্ছে, কোন চিকিৎসক কখন আউটডোরে আসছেন বা চলে যাচ্ছেন তা দেখতেই এই ব্যবস্থা। নিয়ম ভাঙলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধানও ছিল। তার ভিত্তিতেই স্বাস্থ্য ভবনকে রিপোর্ট দিয়েছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলি।
মাঝারি মানের হাসপাতালগুলির এ হেন রিপোর্টের নিরপেক্ষতা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। এর পরে ওপিডি-ট্র্যাকিং চালু রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত, উঠেছে সেই প্রশ্নও। কারণ স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত কোনও ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে কি নিয়ম থাকলেও শাস্তি পাবেন না সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তার? রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফাই, “সব পেশাতেই তো লোকে ভুল করেন। তাই বলে কি সব সময়ে তাঁদের শাস্তি দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ?” তা হলে কি ওপিডি-ট্র্যাকিং-এর নামে প্রহসন চলছে? সুশান্তবাবুর জবাব, “যা পারেন লিখে ফেলুন।”
আউটডোর পরিষেবায় নর্থ সাবার্বান, রামরিখের মতো হাসপাতালগুলি নিজেদের একশোয় একশো দিলেও শহরের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলির পাঠানো রিপোর্ট আবার অবনতির ছবি! বলা হয়েছে, অনেক চিকিৎসকই আউটডোরে আসছেন না। আরজি করে গত পাঁচ মাসে ৫৪২৬ জন চিকিৎসকের আউটডোর ডিউটি করার কথা থাকলেও করেছেন ৪৭২৯ জন। বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে ওপিডি-তে আসেননি ২৪৭ জন চিকিৎসক। আবার, চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে ২৩৭ জন, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ১৩৫ জন ডাক্তার আউটডোর করেননি।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্তবাবুর মন্তব্য, “আর কত দিকে নজর দেব?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.