ওঁদের পিছনে কোনও বড় দলের প্রতীক নেই। নেই কোনও সংগঠন। দলীয় কার্যালয় বলতেও কিছুই নেই তাঁদের। এর পরেও বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল এবং সিপিএমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ওই নির্দল প্রার্থীরাই।
কেন? কারণ এখানে নির্দলেরা এককাট্টা হয়ে শাসকদল ও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে একে অন্যের প্রচারে সঙ্গ দিচ্ছেন। এমনকী সমর্থন জোটাতে একসঙ্গে রাস্তায় নেমে মিছিলেও পা মেলাচ্ছেন। মিছিলের দৈর্ঘ্যেই বোঝা যায়, ভাল সাড়া পাচ্ছেন সমর্থকদরে থেকেও।
নির্দলদের এই লড়াকু মনোভাবে আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এলাকার তৃণমূল এবং সিপিএম নেতারা। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সিমলাপাল ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১০৫টি আসনের মধ্যে ৯১টিতে লড়ছেন নির্দল প্রার্থীরা। আবার পঞ্চায়েত সমিতিতে ২১টি আসন থাকলেও নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা ২৪। জেলা পরিষদের দু’টি আসনের মধ্যেও একটিতে আছেন নির্দল প্রার্থী।
এই নির্দলদের একটা বড় অংশই অবশ্য বিক্ষুব্ধ তৃণমূলী। সিমলাপাল ব্লকে টিকিট বণ্টনকে ঘিরে ব্লক তৃণমূল সভাপতির সঙ্গে বিরোধের পরেই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের একাংশ নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। দলের বারংবার নির্দেশ সত্ত্বেও তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টে সমস্ত নির্দল প্রার্থীকে একজোট করে জোর লড়াই দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে নির্দলদের মধ্যে বাম মনোভাবাপন্নরাও আছেন। অঞ্চলে অঞ্চলে মাইক নিয়ে মিছিল করে পুরোদমে চলছে তাঁদের প্রচার। যা দেখে শাসক বা বিরোধী দলের নেতারা তো বটেই, এমনকী সাধারণ মানুষও অবাক। |
সিমলাপালের বাসিন্দা অঞ্জন পাঠক, শান্তিনাথ সিংহ মহাপাত্ররা বলছেন, “জীবনে অনেক ভোট দেখেছি। কিন্তু, নির্দল প্রার্থীদের এমন মরিয়া লড়াই আগে দেখিনি! নির্দল প্রার্থীরা মিছিল করছেন। আর সেই মিছিলে যোগ দিচ্ছেন শতাধিক মানুষএই দৃশ্য কোনও দিন দেখব বলেও ভাবিনি।” সিপিএমের সিমলাপাল জোনাল কমিটির সম্পাদক বিদ্যুত্ বিশ্বাসের মন্তব্য, “ব্লকের সমস্ত নির্দল এক হয়ে মিছিল করছেন, এই ঘটনা আগে কখনও দেখিনি।”
সিমলাপালের এক তৃণমূল নেতার কথায়, “ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের মধ্যে সিমলাপাল, মণ্ডলগ্রাম, লক্ষ্মীসাগর ও পার্সোলার মতো পঞ্চায়েতগুলিতে নির্দল প্রার্থীরা আমাদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। এমনকী, পঞ্চায়েত সমিতিতেও সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছেন। তাঁরা মানুষের সমর্থনও পাচ্ছেন।” দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে প্রকাশ্যে না হলেও একশ্রেণির তৃণমূল কর্মীদের সমর্থন রয়েছে এই নির্দলদের দিকে। তাই গ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকী পঞ্চায়েত সমিতিতেও নির্দলদের সাফল্য পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেই ওই তৃণমূল নেতার অভিমত।
নির্দলদের নেতৃত্বের পুরোভাগে থাকা জেলা পরিষদের ২১ নম্বর আসনের প্রার্থী ফটিক দুমুরিয়ার কথায়, “ব্লকের নির্দলদের একজোট করে আমরা তৃণমূল এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করছি। একত্রিত হয়ে একে অন্যের প্রচারে যাচ্ছি, মিছিল করছি। মানুষের সমর্থন আদায় করাটাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য।” সিমলাপাল পঞ্চায়েত সমিতির ১৯ নম্বর আসনের নির্দল প্রার্থী ভীমসেন রানা বলেন, “এ এক নতুন লড়াই। সব নির্দল এক হয়ে লড়ছেন।”
নির্দল প্রার্থীদের একজোট হওয়া যে তাঁদের চিন্তায় রেখেছে, তা কবুল করে সিমলাপাল ব্লক তৃণমূল সভাপতি সনত্ দাস বলেন, “দলের একটা অংশ বিক্ষুব্ধ হয়েই নির্দলে লড়ছে, দল এতে সমস্যায় পড়ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি, বিক্ষুব্ধদের ফের আমরা দলে ফেরাব।” সিপিএম নেতা বিদ্যুত্বাবুর আবার দাবি, “পঞ্চায়েতের লড়াইয়ে তৃণমূল বা নির্দল, কোনও পক্ষই তাঁদের ঠেকাতে পারবে না। তবে, লড়াইটা শক্ত হবে এ কথা মানছি।”নির্দলের সঙ্গে ‘শক্ত লড়াই’এ কথাটাই বা সিপিএম কবে মেনেছে! |