সম্পাদকীয় ১...
ভারত যাহা করে নাই
রাজপথে ক্ষুব্ধ মানুষের ঢল সাম্প্রতিক ভারতও নেহাত কম দেখে নাই। কিন্তু লক্ষণীয়, অর্থনীতির স্বাস্থ্যভঙ্গ কখনও গণ-বিক্ষোভের কারণ হয় নাই। অথচ, গোটা দুনিয়ায় সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলির কেন্দ্রে অর্থনীতিই ছিল এবং আছে। গ্রিস হইতে স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হইতে ইতালি— অর্থনীতিই ছিল মূল প্রশ্ন। ব্যতিক্রম আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া— সেখানে একনায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আন্দোলনের চালিকাশক্তি হইয়াছে। সম্প্রতি ব্রাজিলের মানুষ রাজপথে নামিলেন— সেখানেও অর্থনীতির স্বাস্থ্যভঙ্গই মানুষের ক্ষোভের কারণ। আর পাঁচটি ক্ষেত্রে যেমন অকিঞ্চিৎকর স্ফুলিঙ্গ হইতেই বিক্ষোভের আগুন জ্বলে, ব্রাজিলেও তাহার ব্যতিক্রম হয় নাই। সাও পাওলো এবং রিও ডি’জেনেইরো, এই দুই শহরে বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নামেন। অনতিবিলম্বেই সেই বিক্ষোভে যুক্ত হয় অন্য কারণগুলি— মূল্যস্ফীতি, বেতন না বাড়া এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতি। তাহার উপর, ব্রাজিলে এখন ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রবল প্রস্তুতি চলিতেছে। তাহাতে স্বভাবতই বিপুল খরচ হইতেছে। সেই খরচ মানুষের চোখে ন্যায্য ঠেকে নাই। ফলে, প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফ-এর বিরুদ্ধে অ-শাসনের অভিযোগে দেশ উত্তাল।
এই বিক্ষোভ প্রেসিডেন্ট এবং তাঁহার দলের নিকট খানিক অপ্রত্যাশিত ঠেকিবে। মার্চ মাসেই দেশের ৭৯ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়া জানাইয়াছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডিলমা রুসেফ-ই তাঁহাদের পছন্দের। কী বিচিত্র পরিহাস— প্রেসিডেন্ট রুসেফ তাঁহার দেশে জনপ্রিয় ছিলেন অর্থনীতির কারণেই। বস্তুত, আজ তিনি সেই জনপ্রিয়তার দাম মিটাইতেছেন, কারণ ব্রাজিলের অর্থনৈতিক বাস্তব তাঁহার জনপ্রিয়তার অনুকূল ছিল না। বিশ্বের কোনও দেশের অর্থনীতির পক্ষেই গত কয়েক বৎসর সুখের হয় নাই। যে দেশগুলি বিশ্বমঞ্চে ব্রাজিলের সহিত একাসনে বসে, সেই চিন বা ভারতের অভিজ্ঞতা দেখিলেই এই কথাটি বোঝা যাইবে। চিনের শাসকরা বার বার বৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা কমাইয়া আনিয়াছেন। ভারতে বৃদ্ধির হার পাঁচ শতাংশে আসিয়া ঠেকিয়াছে। ব্রাজিলও এই অসুখেই আক্রান্ত হইয়াছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রাজকোষ উজাড় করিয়া খরচ করিয়াছেন, যাহাতে দেশের মানুষের ভোগব্যয় না কমে। তিনি পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম জোর করিয়া কমাইয়া রাখিয়াছিলেন। ন্যূনতম মজুরির হার বাড়াইয়াছেন। সুদের হার বাড়াইতে দেন নাই। সিদ্ধান্তগুলি সাধারণ মানুষের কানে মধুর স্বরে বাজিবার মতোই, সন্দেহ নাই। কিন্তু তাহাতে অর্থনীতি বিপাকে পড়ে। ব্রাজিলেও পড়িয়াছে। যে দেশে বাণিজ্য খাতে উদ্বৃত্ত থাকাই দস্তুর, সেখানে ঘাটতি পড়িয়াছে। প্রাথমিক রাজকোষ উদ্বৃত্তের পরিমাণ প্রবল হারে কমিতেছে। মূল্যস্ফীতি ক্রমবর্ধমান। এবং, সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক, দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ জাতীয় আয়ের মাত্র ১৮.৪ শতাংশ। ডিলমা রুসেফ বুঝিতেছেন, স্বখাতসলিল কাহাকে বলে।
এখন তিনি প্রাণপণে পরিস্থিতি সামলাইতে ব্যস্ত। এই বৎসর বেতন বাড়িয়াছে নামমাত্র, ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়াইয়াছে। তাহাতে বিনিয়োগের হার বাড়িবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। কিন্তু এক্ষণে যাহা শিক্ষণীয়, তাহা হইল, জনমোহনের তাড়নায় অর্থনীতির প্রাথমিক পাঠ বিস্মৃত হইলে তাহার ফল কখনও সুখদ হয় না। এই প্রসঙ্গেই ভারতের সহিত ব্রাজিলের তুলনা করা প্রয়োজন। ভারতীয় অর্থনীতি যে বিপাকে পড়িয়াছিল বস্তুত এখনও যে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়া যাইতেছে তাহাতে ভারতের অবস্থাও ব্রাজিলের মতোই হইতে পারিত। হয় নাই, কারণ মেরুদণ্ডের যাবতীয় দুর্বলতা সত্ত্বেও ইউপিএ সরকার ডিলমা রুসেফ-এর ভুলটি করে নাই। অর্থমন্ত্রী অথবা যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আকারে-ইঙ্গিতে মনোবাসনা জানাইয়াছেন, ব্যাঙ্ক সেই ইঙ্গিত অগ্রাহ্য করিলে হতাশও হইয়াছেন কিন্তু ভুলিয়াও ব্যাঙ্ককে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন নাই। বিলম্বে হইলেও রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ কমাইবার দিকে মন দিয়াছে সরকার। পেট্রোলের দাম বাজার-নিয়ন্ত্রিত হইয়াছে, ডিজেলেরও দাম বাড়িতেছে। ব্রাজিল এই প্রাথমিক কাজগুলি করিতেই ব্যর্থ। ইউপিএ সরকার সম্পূর্ণ কর্তব্য করে নাই, কিন্তু যেটুকু করিয়াছে, সেই কৃতিত্ব তাহার প্রাপ্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.