মালদহে আম নষ্ট হচ্ছে গাছেই
রেকর্ড ফলন হয়েছে। তবু মালদহে গাছের আম গাছেই ঝুলছে।
মালদহে এ বার সাড়ে ৩ লক্ষ টন ফলন হয় আমের। কিন্তু বাংলাদেশে রফতানি করায় বাধা তৈরি হয়েছে। এই সাঁড়াশি আক্রমণে মালদহের আম চাষিদের মাথায় হাত। বাজারে আমের যা দাম মিলছে তাতে ফলনের খরচ উঠছে না দেখে বহু বাগানের মালিক আম পাড়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বছর থেকে প্রতি কেজি আমে শুল্ক ১৭ থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করেছে। ওয়েস্টবেঙ্গল এক্সপোর্টার কোঅর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “চার বছর আগেও ৩ লক্ষ টন আম বাংলাদেশে রফতানি করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি শুল্ক বাড়াতে বাড়াতে কেজি প্রতি আমে ২৫ টাকা ধার্য করছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আম কিনতে চাইছেন না।
আমকাহন
বাগানে বিক্রি (কেজি)
• লক্ষ্মণভোগ ৫-৬ টাকা • হিমসাগর ৯-১০ টাকা • ল্যাংড়া ১০-১১ টাকা
• বাগান থেকে বাজার ঝুড়ি ও পরিবহণ বাবদ কেজিতে খরচ ৪ টাকা
• পাইকারি এবং খুচরো বাজার ঘুরে তা ক্রেতার হাতে পৌঁছচ্ছে
• লক্ষ্মণভোগ ১০-১২ টাকা হিমসাগর ১৫-১৬ টাকা ল্যাংড়া ১৬-১৭ টাকা

জেলায় উৎপাদন
২০১০ সালে তিন লক্ষ টন
২০১১ দু’লক্ষ ২৫ হাজার
২০১২ এক লক্ষ ২০ হাজার
২০১৩ তিন লক্ষ ৫০ হাজার
(সূত্র: জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতর)
কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে আমদানি শুল্ক কমাতে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।” খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরে উপ অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সানিগ্রাহী বলেন, “আম থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয় হয়। কিন্তু এ বার যদি মালদহের আম বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ হয়ে যায়, তবে জেলার চাষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রভাবিত হবে জেলার অর্থনীতি।” তিনি বলেন, “এ বছর জেলায় আমের রেকর্ড ফলন হয়েছে। ২০ বছরে এত ফলন হয়নি।”
তবু জামাইষষ্ঠীর কয়েকদিন আগে থেকে বাজারে মালদহের হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ আমের দাম নামতে শুরু করেছে। শুরুতে যে হিমসাগর আম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা ল্যাংড়া ২৫ থেকে ৩০, লক্ষণভোগ ১০ থেকে ১৫ টাকা হওয়ার কথা ছিল, সেই হিমসাগর ৮ টাকা, ল্যাংড়া ১০ টাকা, লক্ষ্মণভোগ ৫ থেকে সাত টাকা কেজির বেশি বিক্রি হচ্ছে না। গোপালভোগ আম থেকে আমস্বত্ব হয়। সেই আমের দাম ২০ টাকার উপরে ওঠেনি। ছোট ছোট গুটি আম ৬ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, কেজি প্রতি আম উৎপাদন করতে গড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা খরচ হয়। এই খরচের মধ্যে গাছে স্প্রে করা, মুকুল আসার পরে বিভিন্ন পর্বে জল দেওয়া। এবং আম পাড়তে খরচ হয় কেজি প্রতি চার টাকা। সব মিলিয়ে গড়ে কেজি প্রতি ১৫ টাকা উৎপাদন খরচ হয়। সেই জায়গায় আমের দাম এখন ১২ থেকে ১৫ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য রাজ্য থেকে যে সব খদ্দেররা আম কিনতে আসছেন, তাঁরা এর বেশি দাম দিতে চাইছেন না। ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক সুবোধ মিশ্র জানান, প্রতি বারই এই সময় বাইরের খদ্দেররা বড় বড় ট্রাক নিয়ে বাগানে চলে আসেন। কিন্তু এ বার এখনও ক্রেতারা আসেননি।
তবে আমের গুণগত মানও এই অবস্থার জন্য কিছুটা দায়ী। বাঙ্গিটোলার সুবোধবাবুর প্রায় ২০ বিঘার বাগানে বেশিরভাগ আম এখনও গাছে ঝুলছে। সুবোধবাবুর কথায়, “এ বারে আমের ফলন ভাল হলে আমের গায়ে কালো ছোপ পড়েছে। মাপেও ছোট হয়েছে।” সুবোধবাবুর অনুমান, বেশি কীটনাশক প্রয়োগ এবং জলের অভাবেই আমের এ অবস্থা। ক্রেতারা মালদহের আমকে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। তার উপরে জেলায় আম থেকে জ্যাম, জেলি বা আচার করার শিল্পও নেই। জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার বলেন, “জেলায় ফুড পার্ক করতে সরকার উদ্যোগী। তা হয়ে গেলে এমন সমস্যা হবে না।”
হিমসাগরের মরসুম প্রায় শেষ। এ বার ফজলি পাকার সময় হয়ে গিয়েছে। সুবোধবাবু জানান, মালদহে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। তার মধ্যে এক থেকে দেড় লক্ষ টন ফজলি আম। এর মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে গাড়ি থাকবে না, লোক ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকবেন। সমস্যা আরও বাড়বে। এতে আম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। রতুয়া ম্যঙ্গো গ্রোয়ার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক লোকনাথ কুমার বলেন, “ফজলি পেকে গেলে আমের ফলন এ জেলায় আরও বাড়বে এ বছর। কিন্তু তা বাজারজাত করা যাবে কি না, সে উদ্বেগ কাটছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.