৯২৭ আসন বিশিষ্ট হল নিয়মিত ভাড়া হয় না। রক্ষণাবেক্ষণের খরচ তোলাই মুশকিল। ফলে, জলপাইগুড়ির সরোজেন্দ্র দেব রায়কত কলা কেন্দ্র তথা ‘আর্ট গ্যালারি’ একটি বেসরকারি বিনোদন সংস্থাকে লিজে দিতে উদ্যোগী এসজেডিএ। কলাকেন্দ্রের ব্যবহার নিয়ে সরকারি বিধি-নিষেধ বলবত থাকবে বলে জানিয়েছে এসজেডিএ। বছরে ৩০ দিন হলের ভাড়া দেওয়ার এক্তিয়ার থাকবে এসজেডিএর। ওই দিনগুলিতে শহরের বিভিন্ন স্কুল বা নাট্যদলগুলিকে ভর্তুকিতে হল ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসজেডিএ।
কী ভাবে ব্যবহার হবে কলাকেন্দ্র? যে দিনগুলিতে কলাকেন্দ্রে কোনও সংস্থার বুকিং থাকবে না, তখন ওই হলে তিন অথবা চারটি শোয়ে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে। এসজেডিএর বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে কলকাতা তথা পূর্ব ভারতের একটি প্রতিষ্ঠিত বিনোদন সংস্থা কলাকেন্দ্রের দায়িত্ব পেতে চলেছে। সংস্থার এমডি অরিজিৎ দত্ত বলেন, “মেনস্ট্রিমের পাশাপাশি সমান্তরাল যে বাংলা ছবি টলিউডে তৈরি হচ্ছে, সেগুলি রিলিজের পরে জলপাইগুড়িতে পৌঁছয় না, বা পৌঁছয় ঢের দেরিতে। সে কথা মাথায় রেখেই মূলত বাংলা সিনেমা দেখানো হবে। যেদিন কোনও সংস্থার বুকিং থাকবে সে দিন সিনেমা বন্ধ থাকবে। সিনেমার নাটক, গান, স্কুল অনুষ্ঠান সেমিনারেরও ব্যবস্থা থাকবে।” কলাকেন্দ্রের সামনে কাফেটেরিয়া হবে এবং চিত্র প্রদর্শনী কেন্দ্রে প্রতিদিনই ছবি প্রর্দশনী ও বিক্রিরও সুযোগ থাকবে। |
জলপাইগুড়ি আর্ট গ্যালারি। —নিজস্ব চিত্র। |
কেন এই লিজ? ২০১২-১৩ বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে কলাকেন্দ্রে অনুষ্ঠান হয়েছে ৭৩ দিন। এসজেডিএ সূত্রে জানানো হয়েছে, বাতানুকূল কলাকেন্দ্র ব্যবহারের জন্য ১ দিনের ভাড়া ৩ হাজার টাকা। নিয়মিত অনুষ্ঠান না থাকায়, কলাকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৬০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে। অব্যবহারে বাতানুকূল যন্ত্র, অত্যাধুনিক আলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
বস্তুত, উদ্বোধনের পর থেকেই ধুঁকছে এই কলাকেন্দ্র। ২০০৫ সালে উদ্বোধনের পরে সংস্কারের অভাবে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের আলো ও শব্দের যন্ত্র লোপাট হয় কলাকেন্দ্র থেকে। শতচ্ছিন্ন কার্পেট, হাতল ভাঙা চেয়ার, বৃষ্টির জল চুঁইয়ে পড়ার দাগ পরিচিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়ায় কলাকেন্দ্রে। গত বছর মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য প্রাথমিক সংস্কারের কাজ করলেও বছর ঘুরতেই কলাকেন্দ্র ফের পুরোনো হালে ফিরে গিয়েছে।
এসজেডিএর চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “জলপাইগুড়িবাসী দীর্ঘদিন ধরেই আর্ট গ্যালারির সংস্কার চাইছিলেন। কিছুদিন আগে নাগরিক কনভেনশনে শহরে বসে ভাল ছবি দেখার পরিকাঠামো নেই বলেও অনেকে জানিয়েছিলেন। বাণিজ্যিক সংস্থা নিলেও হলের ভাড়া কম রাখতে বলা হয়েছে, এবং বছরে ৩০ দিন নুন্যতম খরচে শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কম সামর্থ্য থাকা নাট্যদলগুলিকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে।”
বিশিষ্টজন মিহির বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ভূতের ভবিষ্যত দেখতে পেলেও যেখানে ভূতের ভয় বা মেঘে ডাকা তারার মতো সিনেমা থেকে জলপাইগুড়িবাসী বঞ্চিত। এক্ষেত্রে সেই সুযোগ মিললে তো ভালই। তবে শহরের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা দেখতে হবে।” নাট্যকর্মী মৌসুমী মজুমদার বলেন, “ভাল সিনেমা দেখার ব্যবস্থা থাকলে খুবই ভাল। বছরে অর্ধেক দিন নাটকের জন্য বরাদ্দ থাকুক। অমুনাফাভোগী নাট্য সংস্থাগুলিকে আগের মতো ভর্তুকি দেওয়া হোক।” সাহিত্যিক তথা গবেষক উমেশ শর্মা বলেন, “শহরের কারও সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করে একতরফা ভাবে কলাকেন্দ্রকে বাণিজ্যিক করার সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্যই আলোচনা প্রয়োজন ছিল, প্রতিবাদ করা হবে।” |