তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির ডাকে ১২ ঘণ্টা বনধে ডুয়ার্সে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ্গের ডুয়ার্স সফরে অশান্তির আশঙ্কায় কমিটি এ দিন বনধ ডাকে। রবিবার ছুটির দিনে অফিস, স্কুল বন্ধ থাকায় এমনিতেই ডুয়ার্সের রাস্তায় ব্যস্ততা দেখা যায়নি। বনধের জেরে মালবাজার, মেটেলি নাগরাকাটা এলাকায় দোকান বাজার বনধ থাকায় সকাল থেকেই রাস্তা ছিল সুনসান। সরকারি কয়েকটি বাস আলিপুরদুয়ার, মালবাজার রুটে চলাচল করলেও, বেসরকারি বাস রাস্তায় নামেনি। ডুয়ার্সে মালবাজারে দোকান, গ্রামীণ হাটের সিংহভাগ বন্ধ থাকলেও, আলিপুরদুয়ার মহকুমার কিছু এলাকা স্বাভাবিক ছিল। বনধে ডুয়ার্সে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।
এদিন সকালে নিউ মালে রাজেন্দ্র নগর তিনসুকিয়া এক্সেপ্রেস, ডামডিমে শিলিগুড়ি-আলিপুরদুয়ার জংশনগামী প্যাসেঞ্জার বনধ সমর্থকদের পিকেটিং -এ পড়ে। বিন্নাগুড়িতে শিলিগুড়িগামী প্যাসেঞ্জার ও হাসিমারায় শিলিগুড়িগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসও আটকে পড়ে। বনধের জন্য ধুবরি-শিলিগুড়ি ইন্টারসিটি বামনহাট প্যাসেঞ্জার, দিনহাটা শিলিগুড়ি ডিএমইউ প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়। দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। দোকানবাজার বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন ডুয়ার্সের বাসিন্দারাও। গত ১৯ জুন কংগ্রেসের ডাকে জলপাইগুড়িতে জেলা বনধ হয়েছে। মালবাজারের মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন যুগ্ম সম্পাদক মোহিত শিকদার জানান বলেন, “দু’দিন ব্যবসা বনধ থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়ে।” |
বনধের দিনেই জয়গাঁয় প্রচারে বিমল গুরুঙ্গ। |
এ দিন কালচিনি, হ্যামিল্টনগঞ্জ, হাসিমারা ও জয়গাঁয় এলাকার বেশির ভাগ দোকান খোলা ছিল। বীরপাড়া, বানারহাট, বিন্নাগুড়ি সহ বেশ কয়েকটি এলাকার দোকানপাট এ দিন বনধ ছিল। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের ফলে অসম-শিলিগুড়ি যোগাযোগ বনধ হয়ে যায়। বনধ সফল বলে দাবি করে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি আহ্বায়ক তেজ কুমার টোপ্পো বলেন, “মানুষ নিজেই স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে বনধ পালন করল। তাই আমাদের পথে নামতে হয়নি।”
বনধ উপেক্ষা করে এ দিন জঁয়গায় প্রচার চালিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। তবে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ভোটের প্রচারে সভা করে বির্তক তৈরি হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা মোর্চার সভাগুলির আগাম কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে ভোট বিধিভঙ্গের মামলা করা হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসনে। পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “বিমল গুরুঙ্গের সভার জন্য মোর্চাকে সোমবার ২৪ তারিখ গোপীমহোন মাঠে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রবিবার তিনি অনুমতি ছাড়া জয়গাঁর কয়েকটি গ্রামে সভা করেন বলে অভিযোগ এসেছে। এতে নির্বাচন বিধি ভঙ্গ হয়েছে কি না খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাংগঠনিক সম্পাদক তথা জিটিএর নির্বাচিত সদস্য প্রেমবা ছিরিং ওলা নির্বাচন বিধিভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “মিছিল ও মাইকে প্রচারের আগাম অনুমতি নেওয়া আছে।” রবিবার সকাল থেকে মঙ্গলা বাড়ি, তড়িবাড়ি, থাপাটোল, আপার খোকলা বস্তি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তিনি সভা করেন। |
বনধে গাড়ি কম থাকায় ছোট গাড়িতেই
যাতায়াত ময়নাগুড়িতে। |
কালচিনির আতিয়াবাড়িতে
চা বাগানে কাজ হয়েছে রবিবার। |
|
তিনি বলেন, “জয়গাঁয় নদীগুলিতে প্রতিবছর বর্ষায় ভাঙন হয়। এলাকায় বাধেঁর প্রয়োজন রয়েছে। রাস্তাগুলি যেন নদীতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা স্বাস্থ্যের জন্য স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে। এই সমস্ত এলাকায়। উন্নয়নের কাজ হয়নি।” আজ সোমবার গোপীমোহন মাঠে জনসভা রয়েছে গুরুঙ্গের। তিনি ডুয়ার্সে এসে অশান্তি ছড়াতে পারেন আশঙ্কা প্রকাশ করে এ দিন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির ডাকা বনধ প্রসঙ্গে গুরুঙ্গ বলেন, “যাঁরা বনধ ডেকেছেন তাদের সঙ্গে যে মানুষ নেই বনধ ব্যর্থ হওয়ায় তা প্রমাণ হয়েছে।”
রবিবার তরাইয়ে ভোট প্রচার করে মোর্চা। শালুগাড়ার দশ মাইল বনবস্তির চমকডাঙি এলাকায় মোর্চার সভায় ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। তিনি বলেন, “বনধ ডেকে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করা হচ্ছে। গণতন্ত্রে সব দলের প্রচার করার অধিকার আছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ জানাব আমরা।” এ দিন ডাবগ্রাম ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে মোর্চা সমর্থিত নির্দল প্রার্থী শোভা তামাঙের সমর্থনে সভা করেছেন রোশন। সভায় রোশন গিরি বলেন, “আমরা জিতলে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে জোর দেব। পাশাপাশি তরাই ডুয়ার্সের প্রস্তাবিত এলাকাগুলিকে জিটিএতে অর্ন্তভুক্তির দাবিতেও প্রশাসনকে চাপ দেব।”
আদিবাসী বিকাশ পরিষদ (ডুয়ার্স) সম্পাদক রাজেশ লাকরা বলেছেন, “আজকের বনধ সফল হয়েছে। মোর্চার সভার কারণে কোনও গোলমাল হয়ে সে দায়িত্ব প্রশাসনকে নিতে হবে।” |