অস্বস্তিটা রয়েই যাচ্ছে।
পার্ক স্ট্রিট, কাটোয়া থেকে কামদুনি, গেদে, কৈজুড়ি একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। তা সামলাতে কখনও মুখ্যমন্ত্রী বলছেন সরকারের সক্রিয়তার কথা, কখনও সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করছেন, কখনও বিরোধীদের একহাত নিচ্ছেন, কখনও বা বিশিষ্টজনদের সাহায্য চাইছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু অস্বস্তিটা কি এড়াতে পারছেন মুখ্যমন্ত্রী?
রবিবার আরও এক বার সেই প্রসঙ্গ উঠে এল উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি জনসভার পরে। সেখানে কামদুনি-কাণ্ডের নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বারাসতে একটা ঘটনাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। টাকা নিয়ে স্নো-পাউডার মেখে অনেকে টিভির সামনে বসে এ নিয়ে কুৎসা করে যাচ্ছে। দু’একটা ছোট ঘটনাকেও বড় করে দেখানো হচ্ছে।” অনেকেই বলছেন, অস্বস্তি কাটাতেই সমালোচনাকে ঢাল করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নারী নির্যাতনের ঘটনাকে ছোট বা সাজানো ঘটনা তিনি এর আগেও বলেছেন। পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের সময়ে মমতা বলেছিলেন, সাজানো ঘটনা। এর পরে কাটোয়ার ছোটরেলে ডাকাতির সময়ে মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিধবা মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে দুষ্কতীদের বিরুদ্ধে। তখন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ছিল, “সাজানো ঘটনা। ওই মহিলার স্বামী সিপিএম করেন।” কিন্তু দেখা যায়, ওই মহিলার স্বামী দীর্ঘদিন আগেই মারা গিয়েছেন। এবং তিনি বাম-বিরোধী রাজনীতিই করতেন।
‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ নারী নির্যাতনে প্রথম। ধর্ষণে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এ রাজ্য ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। গত বুধবার রাতে স্বরূপনগরের কৈজুড়িতে ধর্ষণে বাধা পেয়ে এক মহিলার যৌনাঙ্গে ভোজালি দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতী। সেই ঘটনার পরে আতঙ্কে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন বিরোধীরা। কামদুনি-কাণ্ডের পরে সরকারের সমালোচনায় পথে নামেন বিশিষ্টজনেরা এবং সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন ওঠে কামদুনিতে গিয়ে মমতার আচরণ নিয়েও। জবাবে তিনি প্রশাসনের সক্রিয়তার দাবি তুলেছেন প্রতিটি সভায়। এ দিনও মিনাখাঁয় মমতা বলেন, “বামুনগোলায় ধর্ষণের ঘটনায় ২৭ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। দোষীর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। বারাসতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে ফাঁসির দাবি করব আমরা।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে ভাল হয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, “বারুইপুর, রাজারহাট, কেশপুর, খানাকুল, ধানতলা এ সব জায়গায় যে একের পর এক ধর্ষণ হয়েছে, বিজন সেতুতে আনন্দমার্গীদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, কই তখন তো কাউকে দেখিনি? সিপিএমের সময়ে ধর্ষণের অভিযোগই থানায় করা যেত না। সব মহিলা কি ধর্ষিতা হচ্ছেন, না সব পুরুষ ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত? মিথ্যা, কুৎসা করার চেষ্টা হচ্ছে।” এর পরেই প্রশ্নটা উঠছে, তাঁর এ সব কথা অস্বস্তি ঢাকার ঢাল নয়তো? |
