দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে চার বছর আগে সিপিএম ছেড়েছিলেন বালির দুর্গাপুর অভয়নগর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিমান দাস। রবিবার তিনি-সহ পাঁচ জন যোগ দিলেন তৃণমূলে। বিমানবাবু সিপিএম ছাড়ার পর থেকে নির্দল হিসাবে ওই পঞ্চায়েতে প্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরও যে চার জন এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পিনাকী হালদার এবং অনন্যা পর্বত। পিনাকীবাবু ওই পঞ্চায়েতেরই সদস্য। তিনিও চার বছর আগে বিমানবাবুর সঙ্গেই সিপিএম ছেড়েছিলেন। অনন্যাদেবী বালি-জগাছা পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য ছিলেন। তিনি এ দিন জানান, এ বারও সিপিএম তাঁকে পঞ্চায়েতে প্রার্থী হতে বলেছিল। তিনি রাজি হননি। বাকি যে দু’জন এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা সিপিএমের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
এক সময় সিপিএমের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বলে পরিচিত ওই পঞ্চায়েত এলাকায় নির্বাচনের আগে এই ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক শিবির। সিপিএমের হাওড়া জেলার ৯ নম্বর জোনাল কমিটির সদস্য বিমানবাবু ২০০৮-এ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হন। তার পরে ওই এলাকায় সিপিএমের দলীয় কোন্দল শুরু হয়। বিভিন্ন বিষয়ে বিমানবাবুর মতানৈক্য হয় নেতৃত্বের সঙ্গে। ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে বিমানবাবু এবং পার্শ্ববর্তী পঞ্চায়েত দুর্গাপুর অভয়নগর-১-এর প্রধান মিত্রা মুখোপাধ্যায়-সহ বালি গ্রামাঞ্চলের ৪০ জন্য সিপিএম সদস্য সরাসরি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলের রাজ্য সদর দফতরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। সে সময় তাঁরা হাওড়া জেলা সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে সমাজবিরোধীদের প্রশ্রয় দেওয়া, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা, স্বজনপোষণ-সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলেছিলেন। বিমানবাবু এ দিন বলেন, “নামেই প্রধান ছিলাম। কোনও উন্নয়নমূলক কাজই করতে দেওয়া হত না।”
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরে সিপিএমের রীতি মেনে দলের হাওড়া জেলা নেতৃত্ব বিমানবাবু, মিত্রাদেবী-সহ আরও কয়েক জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিমানবাবু-সহ পাঁচ জনকে এ দিন তৃণমূলে যোগদান করান। বিমানবাবু বলেন, “আগে কংগ্রেস করতাম।’ ৬৭ সালে সিপিএমে যোগ দিই। দীর্ঘ দিন দলটা করেছি। কিন্তু শেষের দিকে কাজ করতে দেওয়া হত না। প্রতিবাদও করা যেত না।” মনে মনে কিছু দিন ধরেই তৃণমূলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিমানবাবু।
রাজীববাবু বলেন, “সিপিএম কখনওই ভাল লোকেদের কাজ করতে দেয় না। বিমানবাবুও তার ব্যতিক্রম নন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে কেউ ভাল কাজ করতে চাইলে তাঁকে সব সময় স্বাগত জানানো হবে। তাই ওঁদের দলে নিলাম।” ওই এলাকা ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে। প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের মোহন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনায় ওই এলাকায় দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করি না। উনি পঞ্চায়েত প্রধান হয়ে গোপনে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করেছিলেন বলেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।” নদিয়া জেলার কল্যাণী পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সোমনাথ বেহরাও তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে সোমনাথবাবু ও তাঁর সমর্থকেরা তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে দল বদল করেন। বিগত ১৫ বছর ধরে কল্যাণী পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন সোমনাথবাবু। |