‘মায়ার আখড়ায়’ জেরবার মায়াপুর
প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রমরমিয়ে চলছে মায়াপুর বা নবদ্বীপের কয়েকটি হোটেলে নানা অবৈধ ব্যবসা--অন্তত এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তেমনই। নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মায়াপুর এবং নবদ্বীপের বেশ কিছু হোটেলে অসামাজিক কাজ হয়। সাধারণ মানুষ হোটেলে উঠতে ভয় পান।” হোটেল মালিকদের একটি সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকারও বলেন, “নদিয়ার পর্যটন অর্থনীতির প্রধানকেন্দ্র মায়াপুরের হোটেল লজ নিয়ে কুখ্যাতি ক্রমশ বাড়ছে।”
গত ছ’মাসে পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগের উপরে নজর দিলেও বোঝা যায়, বারবার নানা ঘটনায় এই এলাকার হোটেলগুলি আলোচনায় উঠে এসেছে। গত ১৩ জানুয়ারি দুই নাবালিকাকে জোর করে আটকে রেখে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগে নবদ্বীপের দণ্ডপাণিতলার এক হোটেল থেকে গ্রেফতার হন দু’জন। ২৪ জানুয়ারি স্বামী-স্ত্রীর মিথ্যে পরিচয় দিয়ে মায়াপুরের এক হোটেলে উঠে আত্মঘাতী হন নাকাশিপাড়ার দুই বাসিন্দা। কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই তাঁদের ঘর ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে। পরে এই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হোটেল মালিক গ্রেফতার হন। ১৪ মাচ যাত্রী বোঝাই নৌকায় হোটেল থেকে মদের বোতল উড়ে গিয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে নবদ্বীপ ঘাটে খেয়া চলাচল। মার্চের শেষ সপ্তাহে সদর মহকুমাশাসকের নেতৃত্বে নবদ্বীপের পোড়াঘাটের একটি হোটেলে আচমকা অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। ২০ জুন মায়াপুরের এক হোটেলে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী তাঁর পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে কৃষ্ণনগর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গ্রেফতার হয় ওই মেয়েটির সঙ্গী। হোটেলের মালিক ও ম্যানেজারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে নবদ্বীপের দণ্ডপাণিতলার বাসিন্দারা স্থানীয় একটি হোটেলের অবৈধ ব্যবসা বন্ধের দাবিতে পথে নামেন। কোনও ঘটনা ঘটলে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কিছু দিন সামলে চলা। তারপর থিতিয়ে যায় সব কিছুই। দিলীপবাবু বলেন, “প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েও কিছুই হয়নি।”
মায়াপুরের হুলোর ঘাট এলাকায় কমবেশি ২০টি হোটেল রয়েছে। ফেডারেশন অফ বেঙ্গল হোটেলিয়ার্সের মায়াপুর শাখার সম্পাদক প্রদীপ দেবনাথ বলেন, “আমরা সাধারণত ভোটারকার্ড দেখে তবেই অতিথিদের ঘর ভাড়া দিই। তাতে নিরাপত্তা বেশি।” ওই সংগঠনের প্রসেনজিৎবাবু বলেন, “এক সময়ে মায়াপুরের ১৯টি হোটেল আমাদের সংগঠনভুক্ত ছিল। অবৈধ কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১০টি হোটেলের সদস্যপদ খারিজ করে দিয়েছি।”
মায়াপুর ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “এই অসামাজিক কাজ বন্ধের দায় সকলেরই। প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।” বিরক্ত স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহাও। তিনি বলেন, “মায়াপুরে আবার জন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পঞ্চায়েত ভোট মিটে গেলেই আমি নিজে এই বিষয়টি দেখব।”
নদিয়ার সদর মহকুমাশাসক সব্যসাচী সরকার অবশ্য জানিয়েছেন, প্রশাসন নজরদারি চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “কেউ ধরা পড়লে হোটেল ‘সিল’ করে দেওয়া হবে এবং লাইসেন্স বাতিল করা হবে।” পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্রও বলেন, “আমরা সুযোগ বুঝে অভিযান চালাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.