সেই ১৯৩০ থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবল হয়েছে ১৯ বার। তার মধ্যে ব্রাজিল, ইতালি ফুটবল দুনিয়ার দুই কুলীন দেশ কাপ নিয়ে গিয়েছে মোট ন’বার। ব্রাজিল পাঁচ বার, ইতালি চার বার। ব্রাজিল-ইতালি ম্যাচ মানে তাই আমার কাছে ‘ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটানস’ ফুটবল বিনোদনের শীর্ষবিন্দু।
‘স্যাটারডে নাইটে’ সেই বিনোদন থেকে কিন্তু সে ভাবে মন ভরল না। টিভিতে ম্যাচটা দেখতে বসার সময়ই জানতাম পির্লো, ডি রোসি নেই। সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহ শিকার করতে গিয়ে আপনার হাত থেকে যদি আসল দুটো অস্ত্রই বেরিয়ে যায় তা হলে প্রথম থেকেই তো আপনি ব্যাকফুটে চলে যাবেন। ম্যাচেও দেখলাম সেটাই হল। ইতালি মাঝমাঠে পির্লোর অভাব মন্তোলিভো বা আকুইলানি ঢাকতেই পারল না। কিন্তু তবুও মনে ভাসছিল চুরানব্বই বিশ্বকাপে রোমারিও-বেবেতোদের বিরুদ্ধে বারেসি, মালদিনিদের সেই মরিয়া লড়াই। কিন্তু সেটাও যে কনফেড কাপে হল না! প্রান্দেলির ইতালি শুরু থেকেই আক্রমণে একা বালোতেলিকে রেখে গোটা দলটাকে নীচে নামিয়ে রাখায় ম্যাচের ছন্দটা কাটল দু’ভাবে। |
ফ্রেডের গোলের পর ব্রাজিলের উচ্ছ্বাস। ছবি: এপি |
এক) বালোতেলিকে লুইস গুস্তাভো কড়া মার্কিংয়ে রাখায় আজুরিদের আক্রমণ আছড়ে পড়ার সুযোগ রইল না ব্রাজিল বক্সে।
দুই) উল্টো দিকে ইতালি রক্ষণেও লোক বেড়ে যাওয়ায় সে ভাবে ফাঁকা জায়গা পাচ্ছিল না নেইমার, অস্কার, হার্নানেসরা। ভাবা যায়, ব্রাজিল-ইতালি ম্যাচে প্রথমার্ধে একটাও বল ধরতে হয়নি ব্রাজিল গোলকিপারকে? এই সময়ে ইতালির কর্নারের সংখ্যা মাত্র এক! ফুটবল বিনোদন আর আসে! ম্যাচটার গতি আরও কমে গেল প্রথম আধঘণ্টার মধ্যেই প্রান্দেলির দলের দুই নির্ভরযোগ্য ফুটবলার মন্তোলিভো আর আবাতে উঠে যাওয়ায়। আজুরিরা তখন থেকে যেন দাঁত-নখ উপরে নেওয়া বাঘ। কিন্তু তাকেও ধরাশায়ী করতে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় লেগে গেল স্কোলারির দলের। রোমারিও তো ছার, রোনাল্ডোর ব্রাজিল হলেও এই ইতালিকে নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করত! তাও দাতের গোলটা আমার মতে অফসাইডে। ফ্রেডের দ্বিতীয় গোলটাও। উজবেক রেফারি রভশান ইরমাতভ সিদ্ধান্ত নিতে খুচখাচ ভুল করছিলেন। যা এশিয়ার ফুটবলের পক্ষে আরওই খারাপ বিজ্ঞাপন।
স্কোলারি ৩-১ এগিয়েও কেন রক্ষণাত্মক কৌশলের খোলসে ঢুকে পড়লেন তাও বোধগম্য হল না। যেখানে ব্রাজিল রক্ষণে থিয়াগো সিলভা ছাড়া একা কুম্ভ হয়ে লড়ার ফুটবলার দূরবীন দিয়ে দেখতে হয়। ইতালি সেই সুযোগটা নিয়েই ব্যবধান কমিয়েছিল। জানি, বলবেন ৪-২ জেতা সত্ত্বেও ব্রাজিলের স্তুতি গাইছি না কেন? কারণ, চোখে পড়ার মতো তেমন ফুটবল কিন্তু নেইমাররা উপহার দিতে পারেনি।
প্রাপ্তি কেবল দ্বিতীয়ার্ধে চোখ ধাঁধানো ফ্রিকিকে নেইমারের গোলটাই। ওই গোল দেখেই বুঝলাম কেন নেইমারের বাবা ছেলেকে বলেছেন, “পেলে নয়, তুমি অনেকটা গ্যারিঞ্চার মতো খেলছ।” যখন-তখন ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে নেইমার। তবে ক্রিশ্চিয়ান মাজিও-র ওই জায়গায় নেইমারকে ফাউল করাটাও ভুল। মালদিনি, নেস্তা, বারেসিরা কিন্তু এমন ভুল করত না। সেই ব্রাজিলও যেমন নেই। নেই সেই ইতালিও। প্রান্দেলির দলের রক্ষণেও অনেক ত্রুটি। তাই তিন ম্যাচে আট গোল হজম করল দলটা। আর ফ্রেডের প্রথম গোলের সময় বনুচ্চির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে জায়গায় ছিল না চিয়ালিনি। চিয়ালিনি ওর গায়ে লাগল অনেক দেরিতে। আর বুঁফোও প্রথম পোস্টে জায়গা অনেকটা ছেড়ে রেখেছিল দেখলাম।
প্রান্দেলির দল সেমিফাইনালে খেলবে স্পেনের বিরুদ্ধে। সে দিন কিন্তু পির্লো, ডি রোসি থাকবে। কাজেই ওই ম্যাচটা হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই মনে হচ্ছে।
আর ব্রাজিল! অনেকে ইতালির সঙ্গে জেতার পরেই কনফেডারেশন তো কোন ছার! পরের বছর সম্ভাব্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসাবে স্কোলারির দলকে তুলে ধরছে। এই রক্ষণ নিয়ে ব্রাজিলের সাফল্য প্রসঙ্গে আমার কিন্তু সন্দেহ থাকছে। |