জয়ের পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে এমন লাফিয়ে উঠতে দেখেছেন কোনও দিন? মনে পড়ছে না। রবিবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালটা যে ধোনির অধিনায়ক জীবনের একটা বৃত্ত সম্পুর্ণ করার ম্যাচ ছিল। সে জন্যই বোধহয় এত উচ্ছ্বাস। ক্যাপ্টেন হিসেবে ধোনির তো শুধু আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটা হাতে তোলাই বাকি ছিল। এ বার সেটাও হয়ে গেল।
আমাদের দলের এই ছেলেরা যে টি টোয়েন্টিতে এক একজন বিশেষজ্ঞ, এই নিয়ে আর নতুন করে বলার কী আছে? তাই ম্যাচটা ২০ ওভারের হয়ে যেতেই ভারতের দিকে অর্ধেক চলে আসে। উইকেটটা স্যাঁতস্যাঁতে বলেই এখানে ব্যাট করা মোটেই সোজা ছিল না। বল স্কোয়ার টার্ন করছিল খুব। ভারতের প্রথম দিকের হোঁচটটা সে জন্যই। উইকেট ও ইংরেজ বোলারদের আক্রমণের ছকটা বুঝে নিয়ে রানে ফিরতে তাই সময় লেগে গেল। এই কাজটা কোহলি ও জাডেজাই করে। ভারতের সাত নম্বর পর্যন্ত কোয়ালিটি ব্যাটসম্যানে ঠাসা। যেটা ইংল্যান্ডের নেই। তাই ওদের পরপর চারটে উইকেট পড়ে যাওয়ায় ধাক্কাটা বেশ জোরেই লাগে কুকদের। আসলে ওদের লেজটা বেশ লম্বা। সে জন্যই শেষের দিকের চাপটা নেওয়ার মতো কেউ ছিল না। |
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ৫০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ, আইপিএল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি টোয়েন্টি, টেস্ট এবং ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের সেরা দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর এ বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও হাতে তুললে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেনের জায়গায় সে বসে পড়বে অনায়াসেই। চ্যাম্পিয়ন না হলেও আমি ধোনিকেই সেরার আসনে বসাতে রাজি ছিলাম।
এখনই পরিসংখ্যান যা বলছে, তাতে ধোনিকে সেরা ক্যাপ্টেনের আসনে বসিয়ে দিতেই পারেন পরিসংখ্যানবিদরা। যদি সাম্প্রতিককালের অন্য দেশের ক্যাপ্টেনদের সঙ্গেও ধোনির তুলনা করেন, তা হলেও কিন্তু ও বেশ এগিয়েই থাকবে। একমাত্র রিকি পন্টিং ওর সঙ্গে তুলনীয়। পন্টিংয়ের জমানায় অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ও ওয়ান ডে দুই ধরনের ক্রিকেটেই এক নম্বরে থেকেছে। কিন্তু টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএল বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ধোনির মতো ভাগ্য হয়নি পন্টিংয়ের। |
চেনা আর অচেনা ছবি |
|
|
ফাইনালেও বলের পাশাপাশি
জাডেজার ব্যাট কথা বলল। |
ইংল্যান্ড পাঁচ রান আগে থেমে
যেতেই ভারত অধিনায়কের নাচ। |
|
টেস্ট ক্রিকেটে ওর ক্যাপ্টেনসি নিয়ে হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন অনেকে। যতই হোক ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টানা আটটা টেস্ট হারের কালো দাগটা তো কখনও মোছা যাবে না। সেই জন্যই ওকে টেস্টের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছিল কোনও কোনও মহল থেকে। এমনকী নির্বাচকের আসনে বসে সেই দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন মোহিন্দর অমরনাথও। এখন তিনি নির্বাচকদের কমিটিতে থাকলে কী বলতেন জানা নেই, তবে তখনকার পরিস্থিতিতে দাবিটা যে একেবারে বেঠিক ছিল, তা বলা যাবে কী করে?
তবু বলব ধোনিই সেরা এবং সর্বকালের সেরা।
|
ধোনি উবাচ
...দলের কয়েকজনের এই ধরনের পরিবেশে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। ওরা কিন্তু প্রত্যাশার চেয়েও ভাল সাড়া দিয়েছে। আজ শুরু থেকেই চাইছিলাম অন্তত ১৩০-এর কাছাকাছি পৌঁছতে। বৃষ্টিটা আমাদের সাহায্য করল। ওদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছিল। আসলে ইতিবাচক মনোভাব থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সবাইকে বলি, আকাশের দিকে তাকিও না ঈশ্বর সাহায্য করবেন না। আমরা এক নম্বর দল এবং সে ভাবেই খেলতে হবে আমাদের। পাওয়ার প্লে-র দুটো ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই সময়ে স্পিনারদের দিয়ে গতি কমানোর চেষ্টা করি। ওরা সত্যিই দারুণ ভাবে চাপটা সামলে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেকনিক নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হয় ঠিকই। কিন্তু আমি বলব চাপ সামলানোটাই এখানে বড় ব্যাপার। আমার আর নিজেকে কারও কাছে প্রমাণ করার দরকার নেই... |
আমার এই সাফল্য আমি উৎসর্গ করলাম উত্তরাখণ্ডে বন্যাদুর্গতদের প্রতি।
শিখর ধবন |
|
ইতিহাসের দিনে হঠাৎই বেল-বিতর্ক
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের দিনই নতুন বিতর্ক বেঁধে গেল ইয়ান বেলের আউটকে ঘিরে। ম্যাচের পর বেলের আউটকে ঘিরে এতই বিরক্ত হয়ে পড়ে ইংরেজ শিবির যে খোদ ইংরেজ অধিনায়কই দেশজ প্রচারমাধ্যমের কাছে এই নিয়ে মুখ খুলে ফেললেন!
ঘটনাটা কী? ইংল্যান্ড ইনিংসের তখন ন’নম্বর ওভার চলছে। বল করছেন রবীন্দ্র জাডেজা। আচমকা বলের লাইন মিস করে যান বেল, ধোনিও অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় বেল ফেলে দিয়ে স্টাম্পিংয়ের জোরালো আবেদন করেন। তৃতীয় আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড আউটও দিয়ে দেন। যে সিদ্ধান্তে ধারাভাষ্যকারদের কেউ কেউ আশ্চর্য হয়ে গিয়ে ‘চরম সাহসী সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করে ফেলেন। কারণ, বেল পড়ে যাওয়ার সময় ইংরেজ ব্যাটসম্যানের পা ক্রিজে ছিল কি ছিল না, তা নিয়ে কোনও অ্যাঙ্গেল থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। ম্যাচের পরপর দেশের সাংবাদিকদের কাছে যা নিয়ে ক্ষোভ লুকিয়ে রাখেননি অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। বলে ফেলেছেন, “আমরা যে অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেছি, তাতে আউট মনে হয়নি। টিভি আম্পায়ার বোধহয় অন্য কোনও অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেছেন।” কুককে জিজ্ঞেস করা হয়, আম্পায়ারদের নিয়ে কড়া কিছু তা হলে থাকবে কি না রিপোর্টে? এ বার তাঁর উত্তর, “সেটা কনফিডেনশিয়াল ব্যাপার। বলা যাবে না।” |