‘পঞ্চায়েত ভোট’ সাঙ্গ, বিজয়োৎসব জেলখানায়
নির্বিঘ্নেই মিটে গেল ‘পঞ্চায়েত ভোট’। হল বিজয়োৎসবও। তাতে আবার এলাহি আয়োজন। মধ্যাহ্নে ভুরিভোজে সামিল জয়ী-বিজিত-ভোটার, সব পক্ষ। ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য সরকার আর নির্বাচন কমিশনের দড়ি টানাটানির মধ্যে অন্য পঞ্চায়েত ভোটের এই ছবি দেখা গেল মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। ভোট-পর্ব মিটেছিল আগেই। রবিবার বিজয়োৎসব। তবে এর সঙ্গে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সম্পর্ক নেই। এই ভোটে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা নিজেদের মধ্যে থেকে চার জন প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করেন। এই প্রতিনিধিরা বন্দিদের দাবিদাওয়া নিয়ে দরবার করেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। পরিভাষায় এঁদেরই বলে ‘পঞ্চায়েত’। আর প্রতিনিধিদের নেতা হলেন ‘মুখ্য পঞ্চায়েত’। সেই সূত্রে ভোটের নাম ‘পঞ্চায়েত ভোট’।
১৬ জুন মেদিনীপুর জেলে ভোট হয়। ফলপ্রকাশ সে দিনই। ওই দিন বন্দিরা আবির মেখে বিজয় মিছিলও করেন। রাজনীতির দলাদলি না থাকায় লাল-সবুজ-গোলাপি সব আবিরেই সে দিন রেঙেছিল জেল-চত্বর। রবিবার বিজয়োৎসবেও সামিল হলেন বন্দি-জেলকর্মী-আধিকারিক সকলে। সকাল থেকেই উৎসবের মেজাজ। দিনভর জমিয়ে চলল আড্ডা-হইহুল্লোড়। দুপুরে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া। মেনুও রীতিমতো জম্পেশ। ভাত, ডাল, কুমড়ো-পুঁইশাক-বড়ি দিয়ে তরকারি, মুরগির মাংস, আমের চাটনি, পাঁপড় একেবারে ষোলোকলা পূর্ণ। যাঁরা মাংস খান না, তাঁদের জন্য মাছের বন্দোবস্ত ছিল। ভোটদানের বা ভোটে লড়ার অধিকার কেবল সাজাপ্রাপ্তদের।
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
বিজয়োৎসবে কিন্তু সামিল হয়েছিলেন বিচারাধীন বন্দিরাও। সব মিলিয়ে ১২৩১ জন বন্দি এ দিন একসঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া করেন। মাওবাদী মামলায় বিচারাধীন ছত্রধর মাহাতো, সুদীপ চোঙদার (কাঞ্চন), রাজা সরখেলরাও সেই দলে ছিলেন। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার খগেন্দ্রনাথ বীর বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের ‘সেলিব্রেশন’ ছিল এ দিন। তাই আবাসিকেরা দিনটা একটু অন্য রকম ভাবে কাটিয়েছেন। সব আয়োজন ওঁরা নিজেরাই করেছেন। আমরা সহযোগিতা করেছি মাত্র।” ডিআইজি (কারা) শোভন দীনের বক্তব্য, “বন্দিদের অনুরোধ রাখতে এই আয়োজন করা হয়েছিল।”
রাজ্যে পাঁচ বছর অন্তর ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। তবে জেলের ‘পঞ্চায়েত নির্বাচন’ হয় এক বছর অন্তর। যাঁরা জেতেন, তাঁরাই বন্দিদের সমস্যা-অসুবিধের কথা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেন। প্রয়োজনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সমস্যার সমাধান কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচিত ‘পঞ্চায়েত প্রতিনিধি’রা প্রস্তাব দেন। তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেন জেল-কর্তৃপক্ষ। নিয়মানুযায়ী, শুধু সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরাই নির্বাচনে যোগ দিতে পারেন। মেদিনীপুর জেলে এ বারের নির্বাচনে ৮ জন প্রার্থী ছিলেন। কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন ধামসা মাদল চিহ্নে, কারও প্রতীক মাছ, কারও বা ছাতা। ব্যালট পেপারেই ভোট হয়। সব মিলিয়ে ভোটার ছিলেন ৬৯২ জন। তার মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৭২ জন। এঁরাই চার জন প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করেছেন। ‘মুখ্য পঞ্চায়েত’ নির্বাচিত হয়েছেন জগদীশ সামন্ত। তিনি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। ডাব চিহ্নে লড়ে বাজিমাত করেছেন জগদীশ।
জেলবন্দি অবস্থায় এমনিতে ভোটদানের সুযোগ মেলে না। সংশোধনাগারের চৌখুপ্পিতে তাই এই ‘পঞ্চায়েত ভোটে’র অন্য মানে রয়েছে বন্দিদের কাছে। এ যেন তাদের কাছে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ। মেদিনীপুর জেলের জনকল্যাণ আধিকারিক মহুয়া বাগচি মিত্র বলছিলেন, “এই ভোটের জন্য বন্দিরা মুখিয়ে থাকেন। আর আমাদের জেলখানার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। সুষ্ঠু ভাবেই মিটে গিয়েছে গোটা পর্ব।”
আইন ভেঙে যাঁরা জেলে, তাঁরা কিন্তু নিয়ম মেনে নিজেদের ‘পঞ্চায়েত’ গড়লেন। আইন যাঁরা বানান, সেই জনপ্রতিনিধিদের সরকার এ বার কী করেন, সেটাই দেখার!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.