বাড়তি বগি, টানা বাস, তবু ভাঙছে ধৈর্যের বাঁধ
কাকভোরে উঠে কোনও মতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রবিবার হেলিকপ্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রমেন্দ্রনাথ জোয়ারদার। চার-পাঁচ ঘণ্টা পরেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য উড়ান শুরু না-হওয়ায় বেলা ১০টা নাগাদ আশা ছেড়ে দিলেন তিনি। ফিরে এলেন বদ্রীনাথ ধামের বালানন্দ বৃদ্ধাশ্রমের আশ্রয়ে। আর শরীরে দিচ্ছে না। আজ, সোমবার সকালে ফের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী ওই বৃদ্ধ।
রমেন্দ্রনাথবাবু একা নন। বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী, অগস্ত্য বা হিমাচলের কাংলায় এ রাজ্যের অন্তত শ’পাঁচেক বাসিন্দা এখনও আটকে রয়েছেন। তাঁদের উদ্ধারের তদারকির জন্য উত্তরাখণ্ডে পড়ে আছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী মদন মিত্র এবং রচপাল সিংহ। কিন্তু দিনের পর দিন আটকে থাকা বাসিন্দাদের ক্ষোভ তাতে সামাল দেওয়া যাচ্ছে কোথায়? মধ্য কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থার ম্যানেজার অজয় ঘোষ এ দিন ঝাঁঝের সঙ্গে বলছিলেন, “এই তো ছত্তীসগঢ়ের মতো ছোট রাজ্যও দেখলাম সেখানকার লোকেদের ফেরাতে নিজেদের হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করেছে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকার পারল না!” এ দিন বদ্রীনাথে ঝকঝকে আকাশ, চড়া রোদের দেখা মেলে বেলা ১১টার পর।
অবশেষে উদ্ধার। সেনা নামিয়ে আনছে কয়েক জন পুণ্যার্থীকে। ছবি: এপি
তখন থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ছ’টা-সাতটা পর্যন্ত চার-পাঁচ দফায় কেন্দ্রীয় সরকারের হেলিকপ্টারে উদ্ধার-পর্ব চলে।
অজয়বাবু জানালেন তাঁদের সংস্থার সঙ্গে বেড়াতে এসেছিলেন, এমন দু’টি দম্পতি এ দিন হেলিকপ্টারে ঠাঁই পেয়েছেন। ৩৪ জন পর্যটক ও সংস্থার ন’জনকে ধরলে তাঁদের দলের ৪৩ জন এখনও আটকে রয়েছেন বদ্রীনাথে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ঠিক কত জন আছেন, সে সম্পর্কে কারও কাছেই স্পষ্ট জবাব নেই। দুর্মূল্য কেরোসিন তেল, ৪০ টাকা কেজি দরের আলুর সংস্থান করে যা হোক করে একটু ডাল-ভাত-তরকারির ব্যবস্থা হচ্ছে। অস্থায়ী আস্তানায় গত শুক্রবার অন্তত বিদ্যুৎ সংযোগটুকু ফিরেছে। কয়েকটি সংস্থার মোবাইল কাজও করছে। সকালের দিকটায় জেনারেটরে ফোন চার্জ করে নিয়ে তাই পাইকপাড়ার ওলাইচণ্ডীতলায় নিজের পরিবারের সঙ্গে একটু কথা বলতে পেরেছেন অজয়বাবু। “আমি ম্যানেজার, আমায় তো থাকতে হবেই! সবাই না ফেরা পর্যন্ত আমার নীচে নামার জো নেই।” আর কত দিন এমন চলবে? উদ্ধারকাজের গতি নিয়ে অসন্তুষ্ট অজয়বাবু বুঝে উঠতে পারছেন না। সদুত্তর নেই মদনবাবুদের কাছেও।
কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যেই নিজের লোকেদের ফেরাতে রীতিমতো ‘লবি’ করার প্রতিযোগিতা চলছে। সবারই ক্ষোভ উদ্ধারকাজের অপ্রতুলতা নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে যে যাত্রীরা নীচে নামতে পেরেছেন, তাঁদের দ্রুত ঘরে ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বাংলার দুই মন্ত্রী।
এক শিশুকে উদ্ধার করছে আইটিবিপি-র জওয়ানরা। রবিবার গোবিন্দঘাটে। ছবি: এএফপি
ট্রেন বা বিমান ছাড়াও পর্যটকদের ফেরাতে বাসের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন মদনবাবু। তিনি জানান, ৬০-৭০ জনকে নিয়ে একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস এ দিন সন্ধ্যায় হরিদ্বার থেকে রওনা দিয়েছে। হৃষিকেশ-দিল্লি ছুঁয়ে সেটি ৪৮ ঘণ্টা বাদে কলকাতা পৌঁছবে। তাঁর কথায়, “পর্যটকেরা অস্থির হয়ে আছেন। ট্রেন বা বিমানের টিকিট পেতে দেরি তাঁদের আর ভাল লাগছে না। তাই বাসের ব্যবস্থা।” গত কালের মতো আজও ৫০-৬০ জনের একটি দল কলকাতায় আসার জন্য দুন এক্সপ্রেসে রওনা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের যাত্রীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। তাঁদের জন্য প্রতি দিনই দুন এক্সপ্রেসে একটি অতিরিক্ত কামরা থাকছে। প্রয়োজনে যাতে আরও অতিরিক্ত কামরা জোড়া যায়, সে জন্য অতিরিক্ত কামরা দেরাদুন স্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি উত্তর রেলওয়ের কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, “আটকে পড়া যাত্রীরা যাতে পুরনো টিকিটেই যাত্রা করতে পারেন, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকী যাঁরা পুরনো টিকিটের বদলে টাকা ফেরত চাইছেন, তাঁদেরও টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
হরিদ্বার থেকে রবিবার বিকেলের দিকে গাড়িতে গুপ্তকাশীর দিকটায় উঠে রাজ্যের আর কেউ উদ্ধার পেলেন কি না, খোঁজ নিতে যাচ্ছিলেন মদনবাবু ও রচপাল। তখনই কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের মারফত খবর আসে, সারা দিনে হেলিকপ্টারে শ’চারেকের বেশি লোককে উদ্ধার করা যায়নি। এর মধ্যে খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া-অফিস। উদ্ধারকাজের অগ্রগতি নিয়ে দুশ্চিন্তা তাই থেকেই যাচ্ছে।
হরিদ্বার, হৃষিকেশ এবং দেরাদুনে তিনটি হেল্প সেন্টার খোলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে। তিনটি সেন্টারে দৌড়োদৌড়ি করছেন রেসিডেন্ট কমিশনার ভাস্কর খুলবে। বললেন, “আমাদের কাছে খবর, বদ্রীনাথে এখনও আটকে রয়েছেন প্রায় ৮০০ রাজ্যবাসী। আর যদি বৃষ্টি না-হয়, তা হলে দিন তিনেকের মধ্যেই সবাই নিরাপদে ফিরে আসতে পারবেন বলে আশা করছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.