ঘটা করে উদ্বোধন হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রামের ঐতিহ্য-যাত্রার। কিন্তু যথেষ্ট যাত্রীর অভাবে গোড়াতেই দেখা দিয়েছে আশঙ্কা। ট্রাম-কর্তৃপক্ষ (সিটিসি) এবং পর্যটন দফতরের কর্তারা অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত যাত্রী মিলবে। বাড়তি যাত্রী টানার পথ খুঁজতে আজ, সোমবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের পদস্থ অফিসারদের বৈঠক হওয়ার কথা। ঠিক হয়েছে, এ বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
সোমবার ও বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহে পাঁচ দিন ‘হেরিটেজ ট্যুর’-এ বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছে পর্যটন দফতর। এ জন্য শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত ট্রাম তৈরি করে দিয়েছে সিটিসি। নাম দেওয়া হয়েছে ‘চরৈবতি’। সকালে সাতটা থেকে ন’টা সফর চলবে দু’ঘণ্টা। এসপ্ল্যানেড থেকে মেডিক্যাল কলেজের সামনে দিয়ে ট্রামটি যাবে শ্যামবাজার। ফিরবেও একই পথে। বিকেলে আবার এই ট্রামই হয়ে উঠবে ‘ভ্রাম্যমাণ রেস্তোরাঁ’। বিকেলে তিন বার যাতায়াত করার কথা। সওয়া এক ঘণ্টার এই যাত্রা এসপ্ল্যানেড থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে খিদিরপুরে। টিকিটের মূল্য থাকছে মাথাপিছু ২৬০ টাকা। তবে, বিকেলে খাবারের খরচ আলাদা।
বিশেষ এই ট্রামটির উদ্বোধন হয় বুধবার। উদ্বোধনী যাত্রায় সামিল হন মূলত ভিআইপি-রা। বৃহস্পতিবার চলেনি ট্রামটি। যাত্রীর অভাবে শুক্রবার সকালে সেটি পড়ে ছিল গুমটিতে। রবিবার যাত্রী মিললেও শনিবার ট্রামের প্রায় অর্ধেক আসন ছিল খালি।
কেন এই হাল? সিটিসি-র এমডি নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য বলেন, “আমরা ট্রামটি তৈরি করে চালানোর দায়িত্ব নিয়েছি। কিন্তু যাত্রী সংগ্রহের দায়িত্ব পর্যটন দফতরের।” সূত্রের খবর, বুকিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন’-কে। বুকিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার বিবেক বর্মণ বলেন, “কয়েকটি দৈনিক এবং এফএম-এ এই পরিকল্পনার কথা প্রচার করা হয়েছে। যাঁরা ফোন করছেন, তাঁদের প্রত্যেকের নম্বর আমাদের কাছে থাকছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো বৃষ্টির কারণে যাত্রী মেলেনি, তবে আশা করছি ভবিষ্যতে যাত্রীসংখ্যা বাড়বে।”
যাতায়াতের পথে যাত্রীরা দেখবেন কিছু ঐতিহ্যপূর্ণ ভবন। কিন্তু সেগুলির প্রায় সব ক’টিই ট্রামরাস্তা থেকে দূরে। ট্রাম থেকে নেমে যাত্রীদের সেই সব বাড়ি দেখার ব্যবস্থা বা সুযোগ রাখা হয়নি। সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈনের বক্তব্য, “এক জায়গায় ট্রাম রেখে যাত্রীদের সংলগ্ন হেরিটেজ বিল্ডিং দেখাতে নিয়ে গেলে তো ট্র্যাক আটকে যাবে।” পর্যটন দফতরের এক অফিসার বলেন, “এ রকম সফরে কলকাতার হেরিটেজ বিল্ডিং সম্পর্কে যাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করা সম্ভব।”
প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে ‘চরৈবতি’ তৈরি করতে। আইআরসিটিসি-র গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার অম্লান বিশ্বাস বলেন, “যাত্রীদের কাছ থেকে টিকিট-বাবদ ২৬০ টাকা নেবে পর্যটন দফতর। প্রতি টিকিটের ৬০ টাকা দেওয়া হবে আমাদের।” যথেষ্ট যাত্রী না হলে প্রকল্পটির মুখ থুবড়ে পড়ার কথা স্বীকার করে অম্লানবাবু এ দিন বলেন, “পর্যটন দফতর বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আমরাও দেব। কাল থেকে ‘অন লাইনেও’ ট্রামের আসন সংরক্ষণ করা যাবে।”
|