পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট নিয়ে এখনও ঘোর অনিশ্চয়তা। তবে জেলায় জেলায় ভোট-সন্ত্রাসের বিরাম নেই। খুনোখুনি, মারধর চলছেই।
মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে শুক্রবার রাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন সিপিএম কর্মী দেবশরণ ঘোষ (৪২)। গুলিবিদ্ধ আর এক সিপিএম কর্মী অমর ঘোষ (৪৫) মারা যান শনিবার সকালে। একডালা গ্রামে শুক্রবার রাতে কংগ্রেস-সিপিএম সংঘর্ষে জখম হন ওই দু’জন। আন্দুলবেড়িয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ ও দলীয় কর্মী বৈদ্যনাথ ঘোষও আহত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে।” রেজিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী অবশ্য বলেন, “প্রথমে আমাদের এক কর্মীকে আক্রমণ করে সিপিএম। তারই পাল্টা হিসাবে ঘটনাটি ঘটেছে।” পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানান, একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ৮ জন অভিযুক্ত পলাতক। বর্ধমানের মন্তেশ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিএম বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ হেদায়তুল্লাহ। শনিবার বিকেলে কুসুমগ্রামে দেওয়াল-লিখন নিয়ে গোলমালের পর সিপিএম পথ অবরোধ করে, বেরোয় মিছিল। সেই মিছিলে চড়াও হয়েই তৃণমূল কর্মীরা বিধায়ককে মারে বলে অভিযোগ। তাঁর মাথায় চোট লেগেছে। জখম হয়েছেন মন্তেশ্বরের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান রুবেন রায়-সহ ৩০ জন। জামুড়িয়ার খাসকেন্দায় সিপিএম প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। |
নন্দীগ্রামে আবার পুরনো জোটসঙ্গী এসইউসি-র উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এসইউসি নেতা তথা ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র সম্পাদক নন্দ পাত্র এ দিন সকালে প্রচার সেরে ফিরছিলেন। গিরিরবাজারে তৃণমূলের লোকজন তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। বাঁ হাত ভেঙে তিনি তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি। জখম হন এসইউসি-র আরও ৬ জন নেতা-কর্মী। দলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসুর অভিযোগ, “সিপিএমের কায়দাতেই বিরোধীদের কণ্ঠরোধে আক্রমণ করছে তৃণমূল।” নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান অবশ্য এমন ঘটনা জানেন না বলে দাবি করেছেন। আর পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈনের বক্তব্য, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পোস্টার, ফেস্টুন ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে হাওড়ার জয়পুরের কাশমলি পুকুরপাড়ে কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধে। শুক্রবার ভোররাতে বসিরহাটের পিঁফা পঞ্চায়েতের ব্যাঙপুকুরে আবার কংগ্রেস কার্যালয় পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে সাঁইথিয়ার বোলসণ্ডা কলোনির কংগ্রেস প্রার্থী নমিতা দাসের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
শুধু শাসক নয়, অভিযোগের তির উঠছে বিরোধীদের দিকেও। শনিবার বিকেলে রায়নার উচিতপুরে নির্বাচন কমিশনের ‘মডেল কোড অব কন্ডাক্ট টিম’-এর উপর হামলার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত হন তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী নেপাল ঘোড়াই-সহ কয়েকজন দলীয় কর্মীও। পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন সরকারি ভবন থেকে রাজনৈতিক দলের পতাকা খুলছিল কমিশনের লোকজন। তখনই প্রচারে বেরিয়েছিলেন নেপালবাবু। হামলায় ৬ জন আহত হন, তিন জন তৃণমূল কর্মী ও তিন জন ওই দলের সদস্য। সকলকেই রায়না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। সিপিএম নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বর্ধমান জেলারই আউশগ্রাম থানার বননবগ্রামে প্রচারে বেরনো তৃণমূলের দুই মহিলা প্রার্থীকে মারধর ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। এই এলাকাটি বর্ধমানের জঙ্গলমহল বলে পরিচিত। অভিযোগ, সিপিএম নেতা স্বপন কোনারের নেতৃত্বেই ঘটনাটি ঘটে। যদিও সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রেজ্জাক মণ্ডল বলেন, “একেবারেই সাজানো অভিযোগ।”
এ দিনই স্বরূপনগরের বয়ারঘাটায় তৃণমূল নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে ইট মারার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। বসিরহাটের কচুয়ায় সিপিএম-কংগ্রেস সংঘর্ষে দু’দলের পাঁচ জন আহত হন। শনিবার রাতে বাদুড়িয়ার ফতুল্লপুর পূর্বপাড়ায় সিপিএম-কংগ্রেস সংঘর্ষে তিন মহিলা-সহ ৬ জন জখম হন।
তৃণমূলের মহিলা পঞ্চায়েত প্রার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় কংগ্রেসের নাম জড়িয়েছে নলহাটির শালিসণ্ডায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অর্চনা ফুলমালির অভিযোগ, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থীর স্বামী প্রশান্ত বাগদি লোকজন নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন। তার জেরেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। যদিও কংগ্রেসের দাবি, মদ্যপ স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরেই অর্চনাদেবী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। |