চাকরি কিংবা মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ, সরকারি প্রতিশ্রতির এই চেনা সুরে সাড়া দিচ্ছে না নদিয়ার গেদে কিংবা ধানতলা। নারী নির্যাচনের সাক্ষী, নদিয়ার এই দুই প্রান্তিক জনপদ শনিবার স্পষ্ট করে দিয়েছে শাসক দল কিংবা রাজ্য সরকারের আশ্বাসে ইতিবাচক সাড়া না দিয়ে তারা কামদুনির পথেই চাইছে অপরাধীদের ‘চরম শাস্তি’। ধানতলার ঘটনার বয়স দশ বছর পেরিয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তের গেদেতে ছাত্রীধর্ষণ ও খুনের ঘটনাটি সাম্প্রতিক। এ দিন দু’জায়গাতেই স্থানীয় বাসিন্দা এবং নির্যাতিতের পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দাবি করা হয়।
শনিবার গেদের ধর্ষিতা ও নিহত ছাত্রীর পরিবার যেমন বিদ্বজ্জনদের সাফ জানিয়ে দিল, সরকারি চাকরি দিয়ে তাঁদের ‘মুখ বন্ধ’ করা যাবে না। তাঁদের দাবি অপরাধীদের ‘চাকরি নয়, শাস্তি চাই।’ শনিবার কলকাতা থেকে বিদ্বজ্জনদের একটি দল গেদের ধষির্তা ছাত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। চিত্রশিল্পী সমীর আইচ, সমাজকর্মী বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, শাশ্বতী ঘোষ প্রমুখ এ দিন ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেই ওই ছাত্রীর দাদা বলেন, “চাকরি নয়। আমরা দোষীদের চরম শাস্তি চাই।” ওই ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর গ্রামে গিয়ে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সুশীল বিশ্বাস। গ্রামবাসীরা তাঁকে চাকরির প্রতিশ্রুতি লিখিত ভাবে দিতে বলেন। নির্বাচনীবিধি ভঙ্গের দোহাই দিয়ে সুশীলবাবু অবশ্য সে দিন কোনও মতে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন। ঘটনার এত দিন পরও সেই ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম।
এ দিন ওই গ্রামের মহিলারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, চাকরি দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চাইছে শাসক দল। তাঁরা বলেন, “আমরা সরকারের কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠাচ্ছি, টাকা কিংবা চাকরি দিয়ে মেয়েদের ইজ্জত কেনা যাবে না।” ঘটনার পরেও আতঙ্ক কাটেনি গ্রামের। মেয়েরা এখনও অনেকেই স্কুলে যেতে সাহস পাচ্ছে না বলে গ্রামবাসীদের দাবি। এ দিন সমীর আইচ ঘটনাস্থল ঘুরে তাঁর দাবি, “থানা থেকে গ্রামটি প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি হওয়া আবশ্যক।” বোলানদেবী বলেন, “ওই হতদরিদ্র পরিবারটির নামই বিপিএল তালিকায় নেই।” আতঙ্ক কাটেনি ওই জেলারই অন্য প্রান্তের ধানতলাতেও। দশ বছর আগের স্মৃতি উস্কে উঠছে নির্যাতিতাদের কথায়। তাঁরা সমস্বরে জানান, এখনও ওই দিনের কথা ভাবলে শিউরে ওঠেন তাঁরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, “ভাবলে এখনও দুঃস্বপ্ন মনে হয়। ভুলে থাকতে চাই সেই রাতের কথা।’’ তাঁরা বলেন, “আমরা চাই অপরাধীদের চরম শাস্তি হোক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে কী? যদি আজীবন অপরাধীরা জেলে থাকে তাহলে একরকম। না হলে ছাড়া পেলেই তারা আমাদের উপরে চড়াও হতে পারেন। এই আশঙ্কাতেই রয়েছি।” যে কোনও ধরনের নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে অরাজনৈতিক আন্দোলনেও তাঁরা পিছপা নন বলে জানান তাঁরা। |