বিধায়কের প্রতিশ্রুতি শুনে দর কষাকষি গ্রামবাসীদেরও
রের পর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন বিধায়ক। গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দাও শুরু করে দিলেন দর কষাকষি। দু’পক্ষের কারও কথাই বুঝছিলেন না সদ্য কন্যাহারা এক মহিলা। ফ্যালফ্যাল করে একবার বিধায়কের দিকে আর একবার গ্রামবাসীদের দিকে তাকাচ্ছিলেন। এক সময়ে দু’হাত জড়ো করে চোখ বন্ধ করে বসে পড়লেন মাটির উপরেই।
বুধবার তখন বেলা একটা। সোমবার নদিয়ার গেদে সীমান্তের উত্তরপাড়ার মূক ও বধির এই মহিলার একমাত্র কন্যাকে গণধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে। অভিযুক্ত ওই গ্রামেরই বিমল সর্দার নামে এক যুবক সহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় বিমল খুনের কথা স্বীকারও করেছে। সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে বারবার উত্ত্যক্ত করায় সে রবিবার বিমলকে জুতো দিয়ে মারে। তারপরেই বিমল তাকে ধর্ষণ করে খুনের ষড়যন্ত্র করে। তার সঙ্গে ছিল আরও দু’জন। মঙ্গলবার সকালে ওই কিশোরীর দেহ পাওয়া যায় গ্রামের বাঁশবাগানে। তার উপরে অকথ্য অত্যাচারের চিহ্ন ছিল সেই দেহে।
সেই থেকে না খেয়েই রয়েছেন ওই কিশোরীর মা। রাগে ফুঁসছিলেন গ্রামের মানুষ। ঘটনা জানাজানি হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পরে এই দিন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূলের সুশীল বিশ্বাস গ্রামে ঢুকে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিতেই যেন আগুনে ঘি পড়ল। তিনি পৌঁছতেই ভিড় করে আসেন পাড়া প্রতিবেশীরা। তখনই ওই কিশোরীর দাদার পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেন সুশীলবাবু। কিন্তু তখন গ্রামের মানুষ দাবি করতে থাকেন, আরও সাহায্য চাই।
গেদেতে কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সুশীল বিশ্বাসের সামনে নিহত ছাত্রীর মা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
ওই বাড়ির দাওয়ায় বসেই সুশীলবাবু ফোন করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে। তারপরে তিনি গ্রামবাসীদের জানান, ওই ছাত্রীর দাদা মাধ্যমিক পাশ করলেই তার সরকারি চাকরির ব্যবস্থাও করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে যাতে ওই পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হয়, তারও ব্যবস্থা হবে।
সে কথা শোনার পরে গ্রামবাসীদের স্বর কিন্তু আরও চড়ে যায়। তাঁরা দর কষাকষি শুরু করে দেন, অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ওই কিশোরকে এখনই চাকরি দিতে হবে। গ্রামের এক মহিলা বিধায়ককে সরাসরিই বলে দেন, “এমন প্রতিশ্রুতি অনেক শুনেছি। এতে কাজের কাজ হয় না। যা দিতে চান, লিখে দিয়ে যান।” সঙ্গে সঙ্গেই অন্য গ্রামবাসীরাও সে কথা সমর্থন করেন।
দু’দিন থেকে ওই বাড়িতে রান্নাবান্নার পাট বন্ধ। তার মধ্যেই শুরু হয়ে গেল তীব্র বাকবিতণ্ডা। সুশীলবাবু কোনওমতে বলেন, “লিখিত কোনও প্রতিশ্রুতি আমি দিতে পারি না। তাতে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হবে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে অবশ্য দাবি করেছেন, “নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ তো হয়েইছে। তা ছাড়া, প্রতিশ্রুতি দিয়ে সস্তা রাজনীতিই করা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “এই সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সযত্ন নয় বরং শুধু ফাঁকা কথা বলে সমস্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।” ওই পরিবারটি বিপিএল তালিকাভুক্তনয়। নামমাত্র সরকারি সাহায্য পেয়েছিল গত বছর অল্প কয়েকদিনের জন্য। এই দিন রাতে জেলাশাসক পিবি সালিমও উত্তরপাড়ায় পৌঁছে আশ্বাস দেন, ওই পরিবারটি যাতে সরকারি সাহায্য পায়, তা দেখা হবে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এই সরকার সক্রিয়। তা ছাড়া, আন্তরিক ভাবেই ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই আমরা।”
সেই কিশোরী যে স্কুলে পড়ত, তার ছাত্রীরা এই দিন এলাকায় মৌনী মিছিল করে। ওই বাড়ির পাশ দিয়েই গিয়েছে তাদের মিছিল। সুশীলবাবু তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে যান। এক এক করে চলে যান গ্রামবাসীরাও। ফাঁকা ঘরে একা বসে থাকেন ওই মহিলা। চারপাশে ছড়ানো মেয়ের বই, জামা, ভাঙা পুতুল।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.