জনসংখ্যার থেকে বেশি রেশন কার্ডের সংখ্যা। কিন্তু এত দিন হাত গুটিয়ে বসেছিল জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। মার্চে জেলা সফরে এসে মন্ত্রীর নির্দেশে আড়মোড়া ভেঙে ভুতুড়ে কার্ড উদ্ধারে সক্রিয় হন দফতরের কর্তারা। সাফল্যও মিলছে বিপুল। মাস খানের মধ্যেই প্রায় ৫০ হাজার ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধার করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এখন বেশ কয়েক হাজার ভুয়ো কার্ড রয়েছে। সেগুলি চিহ্নিত করার কাজও চলছে। জেলাশাসক বি পি সেলিম বলেন, “প্রায় হাজার পঞ্চাশেক রেশন কার্ড বাতিল করা গিয়েছে। এখনও বেশ কিছু ভুয়ো কার্ড রয়েছে। সেগুলিকে চিহ্নিত করার কাজও চলছে।”
জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রে খবর, জেলায় মোট রেশন কার্ড রয়েছে ৪৯ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫১৫টি। ৭টি ব্লক ও ৩টি পুর এলাকায় এনেক দিন ধরেই জনসংখ্যার তুলনায় রেশনকার্ডের সংখ্যা বেশি ছিল। কিন্তু তা উদ্ধারে দফতর আধিকারিকরা তেমন গা করেননি। ১৭ মার্চ কৃষ্ণনগরে একটি গুদামের উদ্বোধন করতে এসে ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধারের ব্যাপারে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এপ্রিলের মাঝামাঝি খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক। কয়েকটি ব্লককে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে লোকসংখ্যার চেয়ে রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি। জেলা শাসক ওই সব এলাকা থেকে দ্রুত ভুয়ো কার্ড উদ্ধারের নির্দেশ দেন। সেই মতো এম আর ডিলারদের মাধ্যমে ভুয়ো কার্ড উদ্ধারে ঝাঁপায় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা। এক মাসের মধ্যেই কৃষ্ণনগর শহর, তেহট্ট-১ ব্লক, চাকদহ পুর এলাকা, রানাঘাট-১ ব্লক, হাঁসখালি এবং শান্তিপুর থেকে বহু ভুয়ো কার্ড উদ্ধার হয়। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকা থেকেও প্রায় হাজার তিনেক রেশন কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রের খবর। হরিণঘাটা ও গয়েশপুর পুরসভা এলাকাতে ভুয়ো রেশনকার্ড চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
এত ভুয়ো রেশন কার্ড এল কোথা থেকে? খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের কর্তারা জানান, মৃত ব্যক্তি ও বিয়ে বা পেশাগত কারণে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন, এমন ব্যক্তিদের কার্ডগুলি বাতিল করা হয়নি। তাই লোক সংখ্যায় থেকে রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি হয়েছিল। ভুয়ো কার্ডগুলির প্রায় ৮৫ শতাংশই বিপিএল তালিকাভুক্ত। জেলার খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী বলেন, “মাঝে মধ্যেই দফতর ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিলের কর্মসূচি নেয়। কিছু জায়গায় সেই কাজে খামতি ছিল। তাই সেখানে ভুয়ো কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে।” ওয়েস্টবেঙ্গল রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের নদিয়া জেলা সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, “অবৈধ কার্ড উদ্ধারে আমরা খুশি। সংশ্লিষ্ট দফতরকে সব রকম সাহায্যও করা হচ্ছে।” |