বৃষ্টি এবং ‘বল ট্যাম্পারিং’ ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বলয়ের মধ্যে পা রাখার পর থেকে দেখছি এই দুটো ব্যাপার সমানে চলছে। থামার নাম নেই।
নিজেদের দেশেই কাঠগড়ায় জেমস অ্যান্ডারসনরা। তুলেছেন তাদেরই স্বদেশীয় প্রাক্তন তারকা পেসার বব উইলিস। তিনি বব উইলিস না হয়ে যদি ব্রুস উইলিস হতেন, তা হলে নাহয় বুঝতাম, ক্রিকেটের আর তেমন কীই বা বোঝেন! কিন্তু তিনি তো বব উইলিস। টেস্ট ক্রিকেটে যে লোকটার সওয়া তিনশো উইকেট রয়েছে.। এক ইনিংসে আট উইকেট নেওয়ার মতো কাণ্ড ঘটিয়েছেন যিনি, তিনি কী করে এমন অভিযোগ তুলে হইচই শুরু করে দিলেন, কে জানে?
ঘটনা হল, ইংরেজ বোলাররা বল ভালই রিভার্স সুইং করাচ্ছে। এবং বাকিদের চেয়ে একটু তাড়াতাড়িই ওদের বোলাররা রিভার্সটা করাচ্ছে। সেমিফাইনালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডে’ভিলিয়ার্স ঠিক এই ব্যাপারটার দিকেই আঙুল তুলেছিল। তার মানে কি ‘বল বিকৃত’ করেই এই কাণ্ডটা ঘটাচ্ছে অ্যান্ডারসনরা? এবং ধোনিদের কাল ইংরেজদের এই বেআইনি ব্যাপারটা নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে? |
ধোনিদের সতর্ক থাকতে হবে ঠিকই, কিন্তু সেটা বাইশ গজের রিভার্স সুইং নিয়ে। বেআইনি ভাবে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা বল বিকৃত করছে, এই ছবি কিন্তু এজবাস্টনে দেখা যাবে না। রিভার্সের জন্য বলকে অ্যান্ডারসনরা তৈরি করে নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ আইনি পথে। নখ দিয়ে খুঁটে বা পকেটে লুকনো বোতলের ছিপির সাহায্য নিয়ে নয়। রিভার্সের জন্য বলটা ওরা তৈরি করে নিচ্ছে সম্পূর্ণ অন্য ভাবে।
এবং সে জন্যই ইংল্যান্ডের বোলাররা অন্য দলের বোলারদের চেয়ে আগেই রিভার্স সুইং করাতে পারছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ইনিংসে পঁচিশ ওভার অন্তর দুটো বল ব্যবহৃত হলেও ওরা তা পারছে। এর জন্য ওদের কৃতিত্ব দিতেই হবে।
শুধু রিভার্স সুইং করানোটা যে একটা শিল্প, তা নয়। রিভার্স সুইংয়ের জন্য বলকে তৈরি করাটাও একটা বড় শিল্প এবং দলের সবাই মিলে তা করতে হয়। নতুন বলে যে রিভার্স সুইং সম্ভব নয়, সে জন্য যে বলটা একটু পুরনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তা তো সবাই জানে। আসলে বলের একটা দিককে দ্রুত এবড়ো খেবড়ো করে তুলতে পারলেই রিভার্স সুইং সম্ভব। ইংরেজ ক্রিকেটাররা নিয়মের গণ্ডির মধ্যে থেকে সেটাই করছে।
এর জন্য ওরা কী কী করছে? প্রথমত, শুরু থেকেই সিম কোনাকুনি অবস্থায় রেখে বল করছে। তাতে প্রথাগত, সুইং মাঝে মাঝে একটু মার খেলেও দ্রুত রিভার্স সুইং পাওয়ার জন্য এই ত্যাগ ওরা করতে রাজি। দ্বিতীয়ত, ফিল্ডাররা থ্রো করছে একটা ড্রপ দিয়ে। এমনকী কখনও দুই ড্রপেও থ্রো করছে। তাতে বল বেশি মাটিতে ঘষা খাচ্ছে। তৃতীয়ত, ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠে অনেকগুলো উইকেটের মধ্যে যেটা সবচেয়ে শক্ত ও রাফ, তাতে বারবার বল ফেলছে। এগুলো তো আর আইনবিরুদ্ধ কাজ নয়? |
‘বল বিকৃতি’-র তিন আইনি রাস্তা |
১) ক্রস সিমে বল করে যাওয়া। বলের একটা দিকই বার বার পিচে ফেলা।
২) এক বা দুই ড্রপে বল থ্রো করে যাওয়া। যাতে বল বেশি ঘষা খায়।
৩) মাঠের অনেকগুলো উইকেটের মধ্যে সবচেয়ে শক্ত উইকেটে ফিল্ডিংয়ের সময় বার বার বল ফেলা। |
|
বলে আঁচড় কাটা বা দাঁত দিয়ে কাটা বরং আইনবিরুদ্ধ, এগুলো এখন মাঠের মধ্যে করা অসম্ভব। সারা মাঠ জুড়ে ২৮টা ক্যামেরা সর্বক্ষণ বলের দিকে তাক করা। প্রতি ওভারের পর বল আম্পায়ারদের হাতে যাচ্ছে। সেখানে এমন ঝুঁকি কে নেবে? তার চেয়ে নিয়মের মধ্যে থেকে এই তিন উপায়ে বলকে রিভার্স সুইংয়ের উপযোগী করে তোলাটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়? এটাকে যদি শিল্প বলি, যদি কৌশলের অঙ্গ বলি, তা হলে নিশ্চয়ই কারও আপত্তি নেই? এই শিল্পটা ইংরেজরা দ্রুত রপ্ত করে ফেলতে পেরেছে বলেই ওরা তার সুবিধা পাচ্ছে। এর পর দেখবেন সবাই এটা করছে।
রবিবার ফাইনালেও ইংল্যান্ড এই সুবিধাটা পাবে। কারণ, এজবাস্টনের উইকেটটা বেশ শক্ত ও রাফ। শুকনোও। এমন উইকেটে বলকে রিভার্স সুইংয়ের জন্য উপযোগী করে তুলতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের একটু সামলে খেলতে হবে। ওরা তা পারবে বলেই মনে হয় আমার। তবে ইংরেজরা যে পথ দেখিয়েছে, সেই পথে যে অন্য দেশের বোলাররাও ভবিষ্যতে হাঁটবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই আমার। |