এক দিকে টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত অপরাজিত ভারত। অন্য দিকে, মাত্র একটা ম্যাচ হারা ইংল্যান্ড জমজমাট লড়াইয়ের পটভূমি তৈরি বার্মিংহ্যামে। যেখানে রক্তচাপ বাড়ানো ক্ল্যাসিক ফাইনালের সব উপকরণই মজুত!
দু’দলের মধ্যে শেষ ওয়ান ডে সিরিজে ইংল্যান্ডকে টেক্কা দিয়ে গিয়েছিল ভারত। তাই রেকর্ড বই হাতে বসলে ধোনিদের এগিয়ে রাখতে হয়। তেমনই এটাও ঠিক যে, ইংল্যান্ড ঘরের মাঠে মারাত্মক প্রতিপক্ষ।
ফাইনালে ওঠার পর কাপ জিততে মরিয়া ইংল্যান্ডের ব্রহ্মাস্ত্র অবশ্যই জেমস অ্যান্ডারসন। যাকে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ সুইং বোলার বললে ভুল হবে না। অ্যান্ডারসন নতুন বল হাতে অসম্ভব বিপজ্জনক। ভারতের দুই ওপেনার ওকে কী ভাবে সামলায়, মূলত তার উপরেই নির্ভর করছে ট্রফিটা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবে কারা। |
ওয়ান ডে-তে র্স্টাট ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিং, বোলিং দু’ক্ষেত্রেই। আর দুই বিভাগেই ভারতের শুরুটা এখন পর্যন্ত মারকাটারি হয়েছে। চারটে ম্যাচেই শিখর-রোহিতের জমাট ওপেনিং পার্টনারশিপ মজবুত ভিত গড়ে দিয়েছে। বোলিংয়েও প্রায় প্রতি ম্যাচে নতুন বল হাতে দ্রুত ব্রেক থ্রু করেছে ভুবনেশ্বর কুমার। শিখর এখন জীবনের সেরা ফর্মে। ব্যাটিংটা যে ভাবে করছে, এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট। ওকে দুর্দান্ত সাপোর্ট দিচ্ছে রোহিত। বিরাট আর দীনেশও রানের মধ্যে আছে বলে রায়না, এমএস আর জাডেজাকে এখনও তেমন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়নি। তবে প্রয়োজনে ওরা ব্যাট হাতে কী করতে পারে সেটা আমরা জানি। তার উপর এ বার দেখছি বৃষ্টি সত্ত্বেও ইংল্যান্ডের পিচগুলো বেশ শুকনো আর স্লো। ভারতীয়রা ঠিক যে ধরনের পিচে খেলতে অভ্যস্ত। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভারতীয় ব্যাটিংকে বহু দিন হল এত মজবুত দেখায়নি। ভুবিকে সামনে রেখে বোলাররাও দারুণ ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ভুবি পরিবেশের একটু সাহায্য পেলে বলটা ভালই সুইং করায়। তবে সুইং না করলেও লাইন আর লেংথ এমন নিখুঁত যে বোলার হিসেবে সব সময় বিপজ্জনক। মাঝের ওভারগুলোয় জাডেজা-অশ্বিন শুধু টাইট বোলিং-ই করছে না, উইকেটও নিচ্ছে। প্রতিপক্ষের উপর বরাবর চাপটা বজায় রাখছে। বিশেষ করে জাডেজার আর্ম বল তো ব্যাটসম্যানরা ধরতেই পারছে না। ভারতের ফিল্ডিংও দুর্দান্ত হচ্ছে। ফাইনালের আগে দলটা কমপ্লিট প্যাকেজ হয়ে উঠেছে।
ইংল্যান্ডও কম যায় না। ওদের পেসাররা ভারতীয় ওপেনারদের নড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। শিখর আর রোহিতের সবথেকে বড় পরীক্ষা আজই। ব্যাটিংয়েও কুক, বেল, ট্রট, রুটরা রানের মধ্যে। ওয়েন মর্গ্যান এখনও তেমন রান পায়নি বলেই ফাইনালে ওর ভাগ্য আর হাত দু’টোই খুলে গেলে আশ্চর্য হব না। এমনিতে দু’টো দলই শক্তির দিক থেকে তুল্যমূল্য। তবে ভারতের সুবিধে দুই স্পেশ্যালিস্ট স্পিনার থাকা। সেখানে ইংল্যান্ডকে গ্রেম সোয়ান বা জেমস ট্রেডওয়েলের মধ্যে বাছতে হবে। তা-ও সোয়ান যদি ফিট থাকে।
ভারতের আর একটা সুবিধে, বহু বড় ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা থাকা। ধোনিরা ওয়ান ডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও। সেখানে ২০১০-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া এই ইংল্যান্ডের বলার মতো সাফল্য নেই। ভারতের উপর অবশ্য ফাইনালের ফেভারিট হওয়ার চাপটা থাকবে। তবে ধোনিরা যে ভাবে খেলে এসেছে, ফাইনালটাও সেই ভাবে খেললে চিন্তার কারণ নেই।
চিন্তার কারণ যদি কিছু থাকে, তবে সেটা আবহাওয়া! আবহাওয়া কেউ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলেও তার ফলে কী কী হতে পারে, সেটা জানা জরুরি। ডাকওয়ার্থ-লুইসের হিসাব-নিকাশ কষা একটা কাগজ পকেটে নিয়ে নিশ্চয়ই নামবে দুই অধিনায়ক। তবে আন্তরিক ভাবে প্রার্থনা করব, এমন দুর্দান্ত একটা ফাইনালে কাগজটা যেন ব্যবহার করতে না হয়! |