|
|
|
|
পরোটা ২৫০, জল ৪০০ কেদারনাথে |
আংটি-সমেত আঙুলটাই কেটে নিল ওরা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পাহাড়ের উপর কাঁটা ঝোপটায় একটা ঝটপটানির শব্দ। কাছে গিয়ে দেখা গেল, মধ্যবয়সী এক মহিলা মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। হাত থেকে অঝোরে ঝরছে রক্ত। বন্যাবিধ্বস্ত কেদারনাথের এ-ও এক ছবি!
১৫ জুন, কেদার তখন খরস্রোতার কবলে। চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে একের পর এক দেহ। একটু আগের জমজমাট মন্দিরের চাতালটাকে চেনা দায়। জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে হলে পাহাড়ই ভরসা। তাই শুধু ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়ে সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে পাহাড়ে চড়তে শুরু করেন ওই মহিলা। গিয়েও ছিলেন অনেকটা পথ। তবে সেখানে কী অপেক্ষা করছে, জানা ছিল না। পথে এক দল দুষ্কৃতীর কবলে পড়েন। সর্বস্ব লুঠ করে তারা। আংটিটাও খুলে দিতে বলেছিল। কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারছিলেন না
তিনি। আঙুলে চেপে বসেছিল সেটা। এ বার আংটি-হরণে হাত লাগায় ডাকাতরাই। ব্যর্থ হয় তারাও শেষে ভোজালির কোপে কেটে নেয় আংটি-সমেত আঙুলটাই।
যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের স্নায়ুর লড়াই চলছে এ ভাবেই। কেউ জিতেছেন, কেউ পারেননি। আর এই যুদ্ধে একটা বড় বাধা হয়ে উঠেছে লুঠতরাজ। বানভাসি উত্তরাখণ্ডে চলছে ব্যাপক লুঠপাট। কেউ বলছেন, এর পিছনে স্থানীয়রাই। অনেকের মতে, অপরাধীরা বহিরাগত।
ছলছলে চোখে তাকালেন এক বৃদ্ধ। ধরা গলায় বললেন, “কতগুলো লোক এসে সব ছিনিয়ে নিল। এমনকী জুতোজোড়াও।” খাবার জোটেনি। জোটেনি পানীয় জল। বললেন, “গায়ে বল নেই। চলতে চলতে পায়ে ফোস্কা। ডাকাতদের ঠেকাতে কী করব?”
নিজের শ্যালককে পাগলের মতো খুঁজছিলেন রাধেশ্যাম পাণ্ড্য। শেষে আর পাঁচ জনের দেখাদেখি আশপাশের লোকজনকে ডেকে শ্যালকের ছবি দেখিয়ে জানতে চান, কেউ দেখেছেন নাকি। এ সময় এগিয়ে আসেন এক আগন্তুক। বলেন, ২০০০ টাকা দিলে খুঁজে এনে দেবেন। রাধেশ্যাম বললেন, “সেই লোকটা আর ফিরে আসেনি।” এর পরেও, শুধুমাত্র শ্যালককে ফিরে পাওয়ার আশায় আরও এক জনকে তিন হাজার টাকা দিয়েছিলেন রাধেশ্যাম। বেপাত্তা তিনিও।
ডাকাতিরও বহু পন্থা। এক ভদ্রলোক বললেন, “ট্যাক্সি চালকরা এখন সুযোগ বুঝে কোপ মারছে। চার গুণ ভাড়া হাঁকছে ওরা। সব কিছু বিক্রি করে দিতে হয়েছে আমাদের। এমনকী পরনের জামাটাও। কী আর করব? বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম যে।” ‘লুঠতরাজের’ এ হল এক পিঠ। অন্য পিঠের ছবিটাও বেশ করুণ। পয়সা নেই, অথচ একটা পরোটা কিনতে চাই ২৫০ টাকা। জলের বোতল ৪০০। দশ টাকার চিপ্সের প্যাকেট মিলছে ১০০-য়। ৫৬ বছরের মনোহরলাল মৌর্য দেরাদুনেরই বাসিন্দা। ট্যাক্সি চালাতেন। দেখেছেন, তাঁর গাড়িখানা তলিয়ে গেল বন্যার জলে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বললেন, “এক বাটি ভাত জুটেছিল ৪০ টাকায়।” সব গিয়েছে বন্যার জলে। পকেটে পয়সার টান। খাবার জুটবে, সাধ্য কোথায়। উত্তরপ্রদেশের অমিত গুপ্ত জানান, দু’বোতল জল আর দু’প্যাকেট চিপ্স কিনতেই মনোহরলালের দশগুণ খরচা হয়েছে তাঁর। ভাত তো বাড়ন্ত! |
|
|
|
|
|